নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলার উপর দিয়ে ৩২টি নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি নদী এক জেলা, ১৫টি নদী দুই জেলা ও একটি নদী তিনটি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহিত নদীর মোট দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪২৪ কিলোমিটার। নদীগুলোর বেশিরভাগই পাহাড় থেকে নেমে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। কিছু নদী এক নদী থেকে আরেক নদীতে মিলিত হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় উপজেলায় নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নদ-নদীর তালিকায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পরপরই নদ-নদীর তালিকার করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সে হিসেবে বিভিন্ন জেলা থেকে নদ-নদীর তালিকা করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। যার প্রাথমিক তালিকা গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ৬মার্চ নদ-নদীর তালিকা যাচাই বাছাই করে নদীসমূহের তালিকা পুনঃযাচাই ও হালনাগাদ করার লক্ষ্যে জনসাধারণের মতামত ও আপত্তি থাকলে তা যাচাই বাচাইয়ের জন্য কোন নদী অনাকাঙ্খিতভাবে বাদ পড়ে থাকলে কিংবা নতুন কোন তথ্য সংশোধন কিংবা সংযোজনের প্রয়োজন হলে তা শেষ করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দেয় বিভাগীয় কমিশনার। এ চিঠিতে গত ১২ মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার। সে মোতাবেক তালিকা যাচাই করে পাঁচ জেলার নদ-নদীর তালিকা প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় যেসব নদ-নদী আছে তার তালিকা পেয়েছি। সর্বশেষ যে তালিকা পেয়েছি তা যাচাই বাছাই করে জেলা প্রশাসকরা পাঠিয়েছে। এরপরেও তালিকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দেশের নদী রক্ষায় সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে নদ-নদীর এ তালিকা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সকল নদী দখল ও দূষণ রোধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্য দেখা যায়, চট্টগ্রামে ১৫টি, খাগড়াছড়িতে আটটি, রাঙামাটিতে ১০টি, বান্দরবানে ৯টি ও কক্সবাজারে সাতটি নদী আছে। তবে এসব নদীর মধ্যে ১৬টি নদী এক জেলা, ১৫টি নদী দুই জেলা ও একটি নদী তিনটি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মোট নদীর সংখ্যা ৩২টি। নদীগুলো হলো- ইছামতি, কর্ণফুলী, চান্দখালী,ডলু, টংকাবতী, ফেনী, সাঙ্গু, হালদা, শ্রীমাই, শিকলবাহা (মুরালী), শিকলবাহা (চন্দ্রখালী), শিলক, ধুরং, সরতা, জলকদর, খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী, মাইনী, বড় পিলাক (বড় বিলাই), ছোট পিলাক (ছোট বিলাই), রাঙামাটিতে শলক, ঠেগা, তুইলিয়ান পুই, কাচালং, রাইক্ষ্যং, বান্দরবানে মাতামুহুরী, বাঁকখালী, ঈদগাঁও, ডলু, রেজু, নাফ, কক্সবাজারে ডারুয়াখালী, বুড়া মাতামুহুরী, কুহেলিয়া নদী প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহিত ৩২ নদীর মোট দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪২৪ কিলোমিটার।
এ ৩২ নদীর মধ্যে ইছামতি নদী চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি, কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি, ডলু নদী চট্টগ্রাম ও বান্দরবান, টংকাবতী নদী চট্টগ্রাম ও বান্দরবান, সাঙ্গু নদী বান্দরবান ও চট্টগ্রাম, হালদা নদী চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি, ফেনী নদী খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম, শিলক নদী বান্দরবান ও চট্টগ্রাম, ধুরং নদী চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি, সরতা নদী খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম, চেঙ্গী রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, মাইনী নদী রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, মাতামুহুরী নদী বান্দরবান ও কক্সবাজার, বাঁকখালী বান্দরবান ও কক্সবাজার, ঈদগাঁও বান্দরবান ও কক্সবাজার, নাফ বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রবাহিত নদীগুলোর বেশিরভাগের উৎসমুখ পাহাড়ি এলাকা। পার্বত্য অঞ্চল থেকে নেমে আসা এসব নদী বিভিন্ন নদ-নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
২০২৩ সালের দিকে নদী রক্ষা কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর একটি তালিকা করলে সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নতুন করে নদীর খসড়া তালিকা প্রস্ততের উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে খসড়া তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ থেকে এ তালিকা যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের তালিকা তৈরি হয়েছে। আগামী পহেলা বৈশাখ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে।