এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
পাহাড়ে চলছে পাহাড়িদের বৃহত্তম সামাজিক উৎসব বৈসাবির দ্বিতীয় দিন। গতকাল রবিবার ছিল মূল বিজু উৎসব। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে রাঙামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় চলছে আনন্দ-উৎসব। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ- সবাই দল বেঁধে পাড়া-মহল্লার প্রতিটি ঘরে গিয়ে অতিথি হয়ে অংশ নিচ্ছেন পাঁচন ভোজনের উৎসবে। আর এই উৎসবের মূল আকর্ষণ পাঁচন। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাইন-নাম ভিন্ন হলেও মনের ভাষা তাদের এক। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মিলিত সামাজিক উৎসব বৈসাবির অন্যতম দিন ছিল গতকাল রবিবার, যাকে ‘মূল বিজু’ বলা হয়। বিজুর মূল দিনে পাঁচন খাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে পাহাড়ি জনপদ।
এ দিনটিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে উদ্যাপন করে ঐতিহ্যপূর্ণ পাঁচন রান্না ও ভোজনের মাধ্যমে। সকাল থেকে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। প্রতিটি ঘরে ঘরে পরিবেশিত হয় ৩২ থেকে ৪০ প্রকারের বনজ ও পাহাড়ি মৌসুমি সবজি দিয়ে রান্না করা ঐতিহ্যবাহী পাঁচন তরকারি।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস- অন্তত সাতটি বাড়িতে পাঁচন খেলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি মেলে। আর তাই পাঁচন খাওয়ার মধ্য দিয়েই বিদায় জানানো হয় পুরনো বছরের কষ্ট ও গ্লানিকে। পাঁচন শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি পাহাড়িদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সুভ্রাতৃত্বের প্রতীকও।
ঘগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, এই দিনে আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘর উৎসব আনন্দে মেতে উঠা সামাজিক রীতিনীতি। বিজু বা বৈসাবি উৎসব পাহাড়ে এক আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে। বিজু ও বৈসাবি উৎসবে উপজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন ও থামি। আর ঐতিহ্যবাহী খাবার পাঁচন। এই দিনে আমরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সকলে মিলে আনন্দ করি।
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মনোঘর এলাকার বাসিন্দা শেমাপতি বলেন, এই বিজু উৎসবে পাঁচন আমাদের জনপ্রিয় খাবার। পাঁচন তৈরি করতে প্রায় ৩০-৪০ ধরনের সবজির প্রয়োজন হয়। পাঁচন দিয়ে আমরা অতিথি আপ্যায়ন করি।
রঙিন পোশাকে, নেচে গেয়ে, হাসি-আনন্দে দল বেঁধে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা পাড়া-মহল্লার ঘরে ঘরে গিয়ে খায় এই পাঁচন। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে গান, তালে তালে চলে নাচ, আর উৎসব মুখর পরিবেশে কেটে যায় পুরো দিন। এভাবেই রঙিন উৎসবে, ঐতিহ্য আর আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছে রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদ। আগামি ১৬ এপ্রিল রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়াতে মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ জলকেলির মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের এই বৈসাবি উৎসব।