মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই
তরকারি রান্নার কাজে যুগ যুগ ধরে আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল। ফলে এই আদার চাহিদাও থাকে বেশি। সাধারণত পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় স্থানীয় এবং থাই-এই দুই জাতের আদা চাষ করা হয়। থাই জাতের আদা আকারে বড় হয়ে থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে জমিতে আদার চারা লাগানো হয়। পৌষ মাসে পাতা শুকাতে শুরু করলে আদা পরিপক্ক হয় এবং আদা সংগ্রহ শুরু হয়। আদা চাষে ঝুঁকি কম, কিন্তু লাভ বেশি। পতিত জমিতেও চাষ করা যায়। বিশেষ করে যেখানে কোনো ফসল ফলানো যায় না সেখানেও আদার চাষ করা যায় নিশ্চিন্তে। আদার তেমন কোনো রোগবালাই বা পোকা-মাকড়ও দেখা যায় না। ফলে অনেকটা নিশ্চিন্তে চাষীরা আদার চাষ করে থাকে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করা হয়। বর্তমানে চলছে আদা সংগ্রহের মৌসুম। কাপ্তাইয়ের হাট-বাজারে গেলেই দেখা যায়, পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত এসব আদা। এসব আদার মান ভালো ও দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে চাষীরাও বেশ লাভবান হচ্ছে।
কাপ্তাইয়ের ওয়া¹া ইউনিয়নের বাসিন্দা আদা চাষী ধনমনি তঞ্চঙ্গ্যা, উষা তঞ্চঙ্গ্যা সহ কয়েকজন চাষী জানান, প্রতিবছরই তারা আদা চাষ করে থাকেন। পাহাড়ে আদার চাষে ভালো ফলন পাওয়ায় এবং লাভবান হওয়ায় তাদের দেখে অনেক চাষী আদাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আদা চাষে পাহাড়ের মাটি উপযুক্ত হওয়ায় এবং পরিবেশ আবহাওয়া সহনশীল হওয়ায় কমবেশি সকলেই লাভবান হয়ে থাকে। তারা বলেন, আদা চাষ করে তাদের জীবনজীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। এছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
কাপ্তাই উপজেলা সদর বড়ইছড়ি বাজারে আদা বিক্রয় করতে আসা চাষী স্বর্ণা মারমা, চাউচিং মারমা সহ আরও কয়েকজন বলেন, পাহাড়ে উৎপাদিত এসব আদার কদর বেশি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে আদা সংগ্রহ করে থাকে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আদা ২-৩শ’ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রয় করেন তারা। তবে পাইকারি পর্যায়ে আরো কিছুটা কমে আদা বিক্রয় হয়ে থাকে। তবে দাম যেমনই হোক না কেন, পাহাড়ি আদা কিনতে মানুষের মাঝে বেশ আগ্রহ দেখা যায়।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইমরান আহমেদ জানান, আদা একটি উচ্চমূল্যের ফসল। কাপ্তাইয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার মেট্রিক টনের মতো আদা উৎপাদিত হয়। এখানে পাহাড়ের স্থানীয় উন্নত জাতের আদার ফলন অনেকটা বেশি এবং সারাদেশে এই জাতের আদার বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্থানীয় কৃষকদের আদাচাষে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়। তাই আদা চাষ করে পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে।