জসিম উদ্দিন মনছুরি
হিলট্র্যাক্ট বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশ। প্রকৃতির লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই হিলট্র্যাক্ট। পার্বত্য তিন জেলা মিলে হিলট্র্যাক্ট গঠিত। এখনে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিংডং। বাস করে কয়েক প্রকার উপজাতি। উপজাতিদের মধ্যে রয়েছে, চাকমা, মারমা, মুরং, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপজাতিদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতা। কঠোর পরিশ্রমী উপজাতিরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। তাদেরকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে বহুদিন ধরে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতা বিধান করতে চাকরিতে কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোটা ব্যবস্থা রহিত করা হলেও উপজাতি কোটা ঠিকই বহাল রাখা হয়েছে। অনগ্রসর এই উপজাতিরা যাতে দেশের অপামর জনসাধারণের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এরই প্রেক্ষিতে এই কোটা ব্যবস্থা। তাদেরকে যতই সহজ সরল ও ন¤্র- ভদ্র মনে করা হোক না কেনো, তাদের মধ্যে রয়েছে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা দুর্র্ধষ ভয়ংকর সন্ত্রাসী। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হওয়ার পর তাদের প্রতি সরকার যে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছেন তা ইতিহাসে বিরল। বিনামূল্য শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা ও ভাতা প্রদান অন্যতম। দুর্গম গিরি পথ হওয়ায় চলাচল ব্যবস্থা সেখানে খুবই দুরহ। স্থাপন করা হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে সেনা চৌকি। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সেনা চৌকি প্রত্যাহার করার। বিগত সরকার তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হিলট্র্যাক্ট থেকে সেনা চৌকি প্রত্যাহার করলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি অপতৎপরতা শুরু করে। এমনকি তাদের হাতে দেখা যায় ভয়ংকর মারণাস্ত্র একে ৪৭ রাইফেল। তাদেরকে এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও অদৃশ্য ইঙ্গিতে তারা নাকি স্বাধীনতা চায়। যা অকল্পনীয় ও অলীক চিন্তা মাত্র। হিলট্র্যাক্ট বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেখানে উপজাতির চেয়ে বাঙালিরা বেশি বসবাস করে। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন মতের লোকের বসবাস। সবাই মিলে মিশে বসবাস করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এখানে নাই ধর্মের বিভাজন, জাতির বিভাজন। বলতে গেলে সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ। এখানে সংখ্যালঘুরা যেভাবে নিরাপদে বসবাস করছে তা তাদের জন্য অতি সম্মানের একটি বিষয়। পার্শ্ববর্তী দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে সংখ্যালঘুদের কি অমানবিক নির্যাতন করা হয়। সে তুলনায় এখানে সংখ্যালঘুরা স্বর্গে বসবাস করছে। এতদসত্তে¡ও কোন অদৃশ্য ইশারায় উপজাতিরা স্বাধীনতার ডাক দিচ্ছে তা ভাবাটা প্রয়োজন। এটা ¯্রফে ভিন্ন ঘটনা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। সেনা চৌকি তুলে নেওয়ার ফলে এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। যা আদৌ কাম্য নয়। যা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে বড়ই হুমকিস্বরূপ। দেশের জনসাধারণের দাবি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে সত্বর উপড়ে ফেলা হোক। তা না হলে তাদের যোগসাজসে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে প্রয়োজন সেনা চৌকিগুলো আগের মত পুনর্বহাল করা। তাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখা, যাতে করে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী হয়ে উঠতে না পারে। এখনো সময় রয়েছে তাদেরকে দমন করার জন্য। তাদেরকে দমন করতে দ্রæত সেনা চৌকি স্থাপন করা সময়ের প্রত্যাশিত দাবি। তা না হলে বাংলাদেশের এই বৃহৎ অংশ হিলট্র্যাক্ট বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ১৮ কোটি জনগণের প্রত্যাশা ও দাবি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে অতিসত্বর সেনা চৌকি স্থাপন করা হোক।
লেখক : প্রাবন্ধিক