এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
রাঙামাটি শহরের আসাম বস্তির বাসিন্দা সুবিমল, রিটম, প্রমোদ চাকমা শিক্ষা জীবন শেষ করে আর দশজনের মত চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁশের বেড়ার ছোট্ট একটি ঘরে কাঁঠাল ও কলার চিপস তৈরি করছেন এ তিন তরুণ উদ্যোক্তা।
তারা বলেন, মৌসুমী ফল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। বিশেষত পাহাড়ের গ্রীষ্মকালীন ফল আম, কাঁঠাল, আনারস ও বারো মাসই কদর বেশি। দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় প্রতি বছর বাগানে ও পথেই নষ্ট হয় এসব মৌসুমি ফল। এতে কৃষক বঞ্চিত হয় সঠিক দাম থেকে। আমরা বিষয়টি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। তাই দুর্গম এলাকা থেকে আপাতত কাঁঠাল ও কলা দিয়ে চিপস তৈরি শুরু করি। আমাদের তৈরি পাহাড়ি কাঁঠাল ও কলার চিপস ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে বাজারে।
উদ্যোক্তা রিটম চাকমা জানান, প্রথমে কাঁচামাল বাজার থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো চিপস তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রতিবার ২ কেজি ফ্রাই করে পরে সেগুলো মেশিনে ডিউলিং শেষে মসলা মেশালেই প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে সু-সাদু কাঁঠালের চিপস্। একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে কলার চিপস্ও।
আরেক উদ্যোক্তা প্রমোদ চাকমা জানান, আমাদের আম, কাঁঠাল, কলা ও আলুর চিপস তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে। ভিন্নতার মধ্যে কাঁঠাল ও কলা রয়েছে সেগুলো আগে শুরু করেছি। পরে ধাপে ধাপে বাকিগুলো তৈরি শুরু হবে। প্রতি কেজি কাঁঠাল থেকে তিনশো গ্রাম চিপস উৎপাদন করা যায়। ডিউলিং করে ডাইং শেষে কোনো প্রকার ক্যামিকেল ব্যবহার না করেই অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। তারপর প্যাকেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিপস্ দিয়ে সেঁটে দেয়া হচ্ছে মুখ।
মূল উদ্যোক্তা সুবিমল চাকমা জানান, আলু বা ভুট্টার চিপস্ সবাই খায়। কাঁঠালের চিপ্স কি খেয়েছেন কেউ? সেই চিন্তা থেকেই আমাদের এই কাজ শুরু করা। প্রথমে ২০২২ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) পোস্ট পারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তিনি আরও জানান, পাহাড়ে উৎপাদিত কলা ও কাঁঠালের দাম পাওয়া যায় না বললেই চলে। আবার সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই। কৃষক যেন উৎপাদিত ফলের সঠিক দাম পান সে জন্যই এই উদ্যোগ। আপতত দুইটি অনলাইন প্লাটফর্মে এই চিপ্স বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রতি প্যাকেট ৩০ টাকা করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই চিপ্স বিদেশে রপ্তানিরও স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যোক্তা। এই কারখানায় ছোট্ট মেশিনে প্রতিদিন ৩০০ প্যাকেট চিপ্স উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিম হায়দার জানান, উৎপাদন মৌসুমে আম, কাঁঠাল, আনারস ও কলা প্রচুর উৎপাদন হয় এবং বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ফল বাগানেই নষ্ট হয়। সেই ফলের এমন বিকল্প ব্যবহার করা গেলে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ে। আর যারা কাজ শুরু করেছেন তাদের স্বাগত জানাই ও সাফল্য কামনা করি।