মিতা পোদ্দার
পুরোনো জরা ও গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়। বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব হল পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণের দিন, শুভ নববর্ষ। এদিনটি প্রতিটি বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে উৎসব আমেজ আর ফুরফুরে বাতাসের দিন বসন্ত। আলপনা আঁকা শাড়ি আর পাঞ্জাবি ছাড়া যেন এদিনটিকে আর পালন করাই যায় না।- বর্ণ নির্বিশেষে দেশ জুড়িয়া জাগিয়াছে বিপুল প্রাণের স্পন্দন। দুঃখ-গ্লানি, বেদনা-ব্যর্থতা, হতাশা-হাহাকার, দুর্যোগ-দূর্বিপাক, সহিংসতা-অস্থিরতা সব পশ্চাতে ফেলিয়া নূতন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের আশায় প্রাণের গভীর আবেগে উদ্বেল আজ সারা জাতি।
বাঙালি মননের গভীরে ময়ূরাসন পাতিয়া অবস্থান করে বাংলা নববর্ষ। বাংলা মাসের হিসাবেই এখানে আবর্তিত হয় ষড়ঋতু। যুগ যুগ ধরিয়া এই দেশের চাষি, মজদুর, কামার-কুমার, তাঁতি-জেলে নানা পেশার মানুষ বাংলা নববর্ষকে বরণ করিয়া আসিতেছে নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়া। বাংলা নববর্ষে এখনও বিশেষত গ্রাম বাংলার ব্যবসায়ীরা হিসাবের নূতন খাতা খুলিয়া থাকেন, হালখাতা করেন। পৃথিবীর অনেক জাতির নিজস্ব কোন নববর্ষ নাই। এই দিক দিয়া আমরা সৌভাগ্যবান। আসলে বাংলা সনের উৎপত্তি হইয়াছে এই দেশের মানুষের জীবনধারা এবং প্রকৃতির বিচিত্রতার নিরিখে। বৈশাখের প্রথম দিবসে হাজার বত্সর ধরিয়া গ্রাম-গ্রামান্তরে, নদী পাড়ে, বটের তলায় বসিয়া আসিতেছে মেলা। এই বৈশাখী মেলা বাঙালির প্রাণের মেলা, ইহা তাহার শিকড় ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল উদ্ভাস। বাঙালি জীবনে বৈশাখ আসে জীবন সংগ্রামের অফূরান প্রেরণা সঞ্চারিত করিয়া।
ভাল-মন্দ মিলিয়াই কাটিয়াছে বিগত বছরটি। এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকাÐের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল ‘শুভ নববর্ষ’। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পান্তা- ইলিশ, বাঁশি, ঢাক-ঢোলের বাজনায় আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় পূর্নতা পাচ্ছে বাঙালির এ উৎসব মুখরতা। নতুন বছর বরণে বাঙালি আয়োজন। বদলে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম। এ বছর থেকে বাংলা নববর্ষ বরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি আর থাকবে না। প্রতি বছরের মতো এ বছরও চারুকলা অনুষদ পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগান হবে- ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। পরিশেষে বলতে চাই, আসুন আমরা ১৪৩১ কে বিদায় জানিয়ে আবাহন করে নেই ১৪৩২ কে। দেশবাসী ও বিশ্ববাসী সকলকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি সকলের। কামনা করি ক্ষুধা মুক্ত, বঞ্চনা মুক্ত, প্রতারণা মুক্ত, ব্যথা মুক্ত ও যুদ্ধ মুক্ত পৃথিবী। কল্যাণ হোক সকলের। সুখী ও সমৃদ্ধ হোন সবাই।
লেখক : প্রাবন্ধিক