এম এ হোসাইন
নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রকল্পের আওতায় শুধু পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নই নয়, একইসঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ওয়াসার পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সক্ষমতা টেকসই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অপচয় রোধ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পটি শীঘ্রই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় উঠতে পারে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক, ৫৭৮ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়ন এবং ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় ধরা হয়েছে এপ্রিল ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মার্চ পর্যন্ত।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, মোহরা পানিশোধনাগারের সার্ভিস এরিয়ায় ১৮০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৮টি ডিস্ট্রিক্ট মিটারড এরিয়া (ডিএমএ) নির্মাণ, বিদ্যমান গ্রাহক সংযোগ প্রতিস্থাপন ও একটি নতুন পাম্প হাউজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মদুনাঘাট ও কালুরঘাট আয়রন রিমোভাল প্ল্যান্টের অধীন এলাকাগুলোতে ১৯৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ২৮টি ডিএমএ নির্মাণ, গ্রাহক সংযোগ প্রতিস্থাপন এবং কালুরঘাট প্ল্যান্ট ও বুস্টার স্টেশনের আধুনিকায়নও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
পানি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের অংশ হিসেবে গ্রাহক সংযোগে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। একই সঙ্গে নগরীতে নতুন গভীর নলক‚প খনন এবং পুরনো নলক‚পসমূহ সংস্কার করা হবে। প্রকল্পের অংশ হিসেবে হালিশহর ও নাসিরাবাদে ওয়াসার গুদাম ঘরে আধুনিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, একটি হালনাগাদ পানি সরবরাহ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং জিআইএস বেজড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সময় ধরা হয়েছে মার্চ ২০৩০ পর্যন্ত। একনেক সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি সরবরাহে ভারসাম্য ও নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে অপচয় কমে যাবে এবং রাজস্ব আয়ও বাড়বে। সময়মতো প্রকল্পটি অনুমোদন ও কার্যকর বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী একটি সুস্থ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সুফল পাবে। যা জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ফোকাল পারসন রেজাউল আহসান চৌধুরী বলেন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নেয়নে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের অধীনে ৪৫ হাজার সংযোগ স্থাপন, ৪৫ হাজার স্মাট মিটার স্থাপন করা হবে। ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তিতে পুরো প্রকল্প এলাকা স্মাট মিটারের আওতায় আনা হবে। ৪৬ ডিএমএ স্থাপন করা হবে। এতে পানির অপচয় রোধ হবে। ওয়াসার সেবার আধুনিকায়নও স্বচ্ছতা আসবে।
এদিকে ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট-১ এর হালিশহর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্পের’ ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবও উঠতে পারে একনেক সভায়। ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় প্রায় তিন বছর পর।
ফলে, দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে প্রকল্পের নানা ক্ষেত্রে অনিয়মের গন্ধ পেয়েছে দুদক। এ নিয়ে গত ফেব্রæয়ারি মাসে তদন্তে নামে দুদক।
ওয়াসা বলছে, পানির সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণে নেয়া চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নগরবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং পানি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন নিশ্চিত করার পাশাপাশি, অপচয় রোধ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সেবার মান উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটি শুধু নাগরিক জীবনে সুবিধা এনে দেবে না, বরং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও অবদান রাখবে।
প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম শহরের জন্য একটি স্থায়ী ও টেকসই পানির সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। যা নগরবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। অনদিকে চলমান স্যানিটেশন প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন হলে দ্রæত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।