আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ শাবান। আর মাত্র ৫দিন পর সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজানের শুভাগমন হবে। জানা যায়, আরব বিশ্বে ১ রমজান শুরু হওয়ার কথা পহেলা মার্চ এ। অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি সাহেরি গ্রহণ করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে মার্চের ২ তারিখ প্রথম রমজানের শুরু হওয়ার কথা। রমজানের শুভাগমনকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে যে আবেগ, অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে, তা অক্ষুন্ন রাখতে হলে পবিত্র রমজানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সংকট দেখা দিয়েছে, তা দেখে সাধারণ মুসলমান উদ্বিগ্ন যে, আদৌ রমজানে এ ধরনের সংকটে পড়তে হবে কিনা ? এ অবস্থায় সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা আশ্বাস্থ করেছেন, আসন্ন রমজান মাসে দেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা হবে, কোন সংকট থাকবেনা। অপরদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির অপচয় রোধ করার কথা বলেছেন। তবে সাধারণ মানুষ পানির অপচয় কতটুকু কওে এর হিসাব হয়ত আমাদেও কাছে নেই, কিন্তু চট্টগ্রামে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে কত পরিমান পানির অপচয় হয়, তা সম্প্রতি অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে ওয়াসার পাইপলাইন কেটে ফেলার পর বুঝা গেছে। নগরীর এমন কোন সড়ক ও অলিগলি নেই, প্রতিদিন কোথাও না, কোথাও ওয়াসার পাইপ লাইন ফুটো হয়ে পানি অপচয় হচ্ছে না। কিন্তু দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে থাকলেও দেখার যেন কেউ থাকে না। পানি অপচয় হয় না শুধু এলাকাটিও কাদাযুক্ত হয়ে মানুষের চলাচলে বিঘœ ঘটায়। চট্টগ্রামে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নগরীর মাত্র ৬৬ ভাগ মানুষের পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা পানির সিস্টেম লস ও অপচয় রোধ করা গেলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। একই অবস্থা বিদ্যুতেরও। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আমছে, প্রতি বছর রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর প্রতি দাবি বা অনুরোধ জানিয়ে থাকেন সিটি মেয়রসহ রাজনৈতিক ও বিভন্ন ধর্মীয়, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । বিশেষ করে রমজানের সারা দিন পানি সরবরাহ, সাহেরি ও তারাবি নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি ওঠে। এবারও নগরবাসী রমজানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি পাওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। তবে সরকারের সেবা সংস্থাগুলোর কর্তারা রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের প্রস্তুতির কথা জানান। অন্যান্যবারের মতো এবারও রমজান মাসে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পিডিবি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনের মেরামত চলছে, তাই সমস্যা হচ্ছে, তবে কোন লোডসেডিং নেই। অপরদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ রমজান মাসজুড়ে নগরীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, চট্টগ্রামে এখন পানির সংকট নেই। নগরবাসীর চাহিদার সমপরিমাণ পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। রমজানে গ্রাহকরা যাতে পানি নিয়ে কোনো কষ্টে না পড়েন এজন্য ওয়াসা প্রতি বছর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে গেট বাল্ব পুনর্বিন্যাস করা, কন্ট্রোল রুম খোলা, ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ তদারকি করা, পানি সরবরাহ তদারকির জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন, পানিভর্তি ভাউজার সার্বক্ষণিক তৈরি রাখা হয়। যেখানে সংকট দেখা দেয় সেখানে ভাউজারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ দেওয়া হয়। এবারও কোথাও কোনো ক্রটির কারণে পানি সরবরাহ বিঘœ হলে সাথে সাথে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট এলাকার মডের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে অথবা সরাসরি ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। এদিকে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ প্রতি বছর রমজানে নগরীতে যানজট সহনীয় রাখতে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের কয়েক শিফটে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়। রমজানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মাঠে পুলিশের বাড়তি ফোর্স দায়িত্ব পালন করে। রমজানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও পয়েন্টে নজরদারিতে থাকে।
আমরা আশা করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের আমলে এটিই প্রথম রমজান মাস, যে মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত আবেগ ও অনুভূতির। সিয়াম সাধনা করতে গিয়ে মুসলমানরা যাতে সংকটে না পরেন সেই দিকে সরকার গভীর নজর দিবেন।