নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মহানগরে বঙ্গোপসাগর, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে ৫৭টি খাল রয়েছে।। খালের মুখে প্রায় ৬২টি রেগুলেটর (স্লুইচগেট) বসানো হয়েছে। রেগুলেটরগুলোর মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা ও পানি নিয়ন্ত্রণ হওয়ার কথা। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এসব রেগুলেটর ছিল অকার্যকর। নগরীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য এসব অকার্যকর রেগুলেটরগুলোকেই দায়ী করা হয়। চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান এই সমস্যা নিরসনে সরকারের তিনটি দপ্তরের অধীনে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার পাঁচটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে তিনটির অধীনে নতুন নির্মিত হচ্ছে ৩৯টি রেগুলেটর। যেসব রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে পানি ব্যবস্থাপনা। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে থাকা বাকি ২৩টি রেগুলেটর নতুন করে নির্মাণ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে উদ্যোগ তা আরও গতিশীল হতো বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন,সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ এবং ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাইখাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ’ শীর্ষক প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই তিন প্রকল্পের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২১টি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দু’টি প্রকল্পে ১৮টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড (পতেঙ্গা হতে সাগরিকা) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের এসব প্রকল্পের বড় কাজই বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সূত্র জানায়, নগরীতে অবস্থিত ৫৭টি খালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ১৪টি, কর্ণফুলী নদীতে ৩৩টি ও হালদা নদীতে ১০টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে বঙ্গোসাগরের সাতটি খালের উপর সিডিএ কর্তৃক আউটার রিং রোড প্রকল্প এলাকায় ১২টি রেগুলেটর আছে। এরমধ্যে ছয়টি রেগুলেটর কার্যকর আছে; বাকিগুলো অকার্যকর। একই খালগুলোর মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে আছে সাতটি রেগুলেটর। এগুলো কার্যকর আছে বলে জানিয়েছেন পাউবো। কর্ণফুলী নদীতে পতিত ৩৩টি খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৬টি, সিডিএ’র অধীনে আছে ১৭টি রেগুলেটর। হালদা নদীর সাথে যুক্ত থাকা ১০টি খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০টি রেগুলেটর আছে।
বিভিন্ন খালের মুখে নির্মাণ কাজ চলা ৩৯টি রেগুলেটরের মধ্যে ২১টিই নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রায় ১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে শুরুর দিকে ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণ ধরা হয়। পরে প্রকল্প কাঁটছাড় করে দু’টি রেগুলেটর বাদ দিয়ে ২১টি রেগুলেটর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এই ২১টি রেগুলেটরের মধ্যে কর্ণফুলী নদীতে ১১টি ও হালদা নদীর মুখে ১০টি রেগুলেটর নির্মিত হচ্ছে। কর্ণফুলীতে নির্মিত রেগুলেটরের মধ্যে চারটির কাজ শেষ হয়েছে। তিনটির কাজ চলমান আছে। হালদা নদীর মুখে ১০টি রেগুলেটরের মধ্যে সাতটির কাজ চলমান আছে। বাকিগুলোর কাজ শুরু হয়নি।
পাউবো সূত্র জানায়, মহানগরীর জলাবদ্ধতার কিছু কারণ চিহ্নিত করা আছে। মূল যে কারণগুলো আছে তার একটি হলো শহরের খালগুলোর মুখে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো না থাকার ফলে বর্ষাকালে জোয়ারের পানি খাল দিয়ে শহরে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। যে কারণে রেগুলেটর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি ছিল। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এরমধ্যে যেসব প্রকল্পে রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে এসব প্রকল্পের সুফল দ্রæত মিলবে বলেই মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে সেখানে শুরুর দিকে ২৩টি রেগুলেটর ধরা হয়। পরে ইস্টার্ণ রিফাইনারী/বিমান বাহিনী ঘাঁটি খাল ও স্ট্যান্ড রোড খালের মুখে দু’টি রেগুলেটর সংশোধিত প্রকল্পে বাদ দেয়া হয়েছে। বাকি ২১টি রেগুলেটর নির্মিত হবে। এই রেগুলেটরগুলো নির্মিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও খালের মুখে নির্মিত প্রত্যেকটি রেগুলেটরে প্রয়োজনীয় পাম্প স্থাপন করা গেলে সুফল বাড়বে। প্রকল্পটি আমাদের অধীনে হলেও এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী।’