গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ‘পানি জাহাঙ্গীরের’ বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। শুক্রবার নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করার কথা সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি’ পাওয়ায় মামলাটি করা হয় বলে সিআইডির ভাষ্য। খবর বিডিনিউজের
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে সরকার গঠনের পর তিনি ‘অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ’ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে এমন তথ্য প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়ার কথা বলছে সিআইডি।
পুলিশের এ ইউনিট বলছে, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য ‘সন্দেহজনক ব্যাংকিং’ কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাথমিক অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি বলছে, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫৬৫ কোটির বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস ‘অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং’ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে ‘প্রাথমিক প্রমাণ’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে ‘অবৈধ অর্থ লেনদেন’ করতেন বলেও দাবি করেছে সিআইডি। ২০২৪ সালের জুন মাসে জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। কিন্তু বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ কেনার কোনো সরকারি অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবশেষ সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালের গত ১৪ জুলাই এই জাহাঙ্গীরকে নিজের পিয়ন ইঙ্গিত করে ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য জানার পর তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার কথাও সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হলে পরদিনই জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্টাফ পরিচয় দেওয়া জাহাঙ্গীর গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। সরকার পতনের পর এবার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অনুসন্ধানে নামার সিদ্ধান্ত জানায় সিআইডি।











