এম এ হোসাইন
কর্ণফুলী নদীর পাড়ঘেষা নবাব খান কলোনীতে দশ বছর ধরে বসবাস করছেন সোমা দাশ (৩১)। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের এই কলোনীটি একেবারেই নদীর পাড়ের উপর। জোয়ারের সময় যেমন নদীর পানি চলে আসে সোমা দাশের উঠানে। তেমনি জলাবদ্ধতায় পানি উঠে ঘরে। পানি নিয়ে এমন সমস্যায় থাকলেও সুপেয় পানির অভাবে ভোগেন তিনি। বাইরের পানি কিনে এনে পান করেন এই গৃহিনী। শুধু সোমা দাশ নয়, নগরের পিছিয়ে থাকা কয়েকটি ওয়ার্ডের বিপুল মানুষের সুপেয় পানির অভাব রয়েছে।
সোমা দাশ বলেন, আমার পরিবারে দুই মেয়ে আছে। দশ বছর ধরে আমি এখানে বসবাস করছি। পানির কাছেই আছি, কিন্তু সেই পানি খেতে (পান করতে) পারছি না। সাগরের লবণাক্ত পানি। আবার টিউবওয়েলের পানিতে আয়রণ। খাবার পানি, গোসলের পানি নিয়ে আমাদের কষ্টকর জীবন। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে অনেক সমস্যা হয়।
একই কলোনীর বাসিন্দা নাসিমা বেগম (৩৫) বলেন, আমি এখানে ২৫ বছর ধরে আছি। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫জন। পানির কাছে বসবাস করি, তারপরও এই পানি দিয়ে হাত দোয়া যায় না। রান্না করা যায় না। নালার মধ্যে পানি জমে থাকে। সেই পানিতে ডায়রিয়া হয়, ডেঙ্গু জ্বর হয়। এই পানিতে আমাদের অনেক সমস্যা। বাইরের থেকে খাবার পানি কিনে খেতে হয়।
এক কিলোমিটার দূরে রাজাখালী বেড়িবাঁধ কলোনীর সাবরিনা সোলতানা বলেন, আমাদের এলাকায় লবণাক্ততা প্রধান সমস্যা। আমরা খাবার পানি পাচ্ছি না। আগে এক-দুইশ ফুট গভীরতায় টিউবওয়েলের পানি পাওয়া যেত। এখন টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেশারের রোগী আছে, শিশু ও গর্ভবতীদের লবণাক্ত পানি বেশি সমস্যা করে।আমাদের এলাকায় যেন সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়।
চট্টগ্রামবাসীর পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত আছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এখনো সংস্থাটি পুরো নগরে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি। এরই মধ্যে চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট (সিডবিøউএসআইএসপি) প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টিকে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন এনজিও বস্তিবাসীর জন্য নিরাপদ খাবার পানি, আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার উপর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারপরও নগরের অনেক এলাকায় এখনো সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, সিডব্লিউএসআইএসপি প্রকল্পের অধীনে বস্তি এলাকায় আমরা অনেক কাজ করছি। বিভিন্ন এলাকায় আমরা টিউবওয়েল করে দিয়েছি, নেটওয়ার্ক করে দিয়েছি। কমিউনিটি বেইজ সিস্টেম করে দিয়েছি। এখন সবাই পানি পাচ্ছে। আগে অনেক দূরে গিয়ে তাদের পানি সংগ্রহ করতে হতো, খরচও বেশি হতো। এখন সহজে পানি পাচ্ছে। তাদের লাইফ স্ট্যাইল পরিবর্তন হয়ে গেছে।
সিডব্লিওএসআইএসপি-২ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহরের ৪৩.৮ শতাংশ পরিবারের নিজস্ব পানির ব্যবস্থা রয়েছে। ১১.৭ শতাংশ পরিবার অন্যের ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকে। দূরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করে ১৯.৫ শতাংশ পরিবার। ৩.৯ শতাংশ পরিবার ভ্যান থেকে পানি সংগ্রহ করে। ১৯.১ শতাংশ পরিবার বিক্রেতার কাছ থেকে পানি সংগ্রহ করে। তাছাড়া বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার। প্রায় ৫৬.২ শতাংশ পরিবার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতার মধ্যে নেই।
নগরের বাস্তি এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থায় কাজ করে যাচ্ছে এনজিও সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র-ডিএসকে। শহরের ১৭টি ওয়ার্ডের বস্তিবাসীদের পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি।
ডিএসকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ডের বস্তিবাসীদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছি। আমরা সমস্যাগুলো তুলে আনার চেষ্ঠা করছি। একই সাথে বস্তিবাসীরা নিজেরাই এটার সমাধান কিভাবে করবেন সেটা জানার চেষ্ঠা করছি। এজন্য একটা বাজেটের প্রয়োজন হবে। এলাকাভিত্তিক সমস্যাগুলো সমাধানে স্থানীয়দের নিয়ে গবেষণার কাজ করবো।