আজ ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ। বছর শুরুর দেড় মাস অতিবাহিত হচ্ছে, কিন্তু এখনও প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব বিষয়ের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। জানুয়ারি মাস ভর্তি, বার্ষিক ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, সরকার ঘোষিত তারুণ্য উৎসবসহ নানা আয়োজনে পার করলেও ফেব্রুয়ারি মাস অর্ধেক অতিক্রম হওয়ার পরও পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছায় পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে। এদিকে ২৮ দিনের এমাসে কর্ম দিবস আছে মাত্র ৯ দিন। ১ মার্চ থেকে পবিত্র রমজান মাসের শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রমজান, শবে ক্বদর, ঈদ ও স্বাধীনতা দিবসের বন্ধ শেষে যখনই শ্রেণি কার্যক্রম খুলবে তখন শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রায় অর্ধেক জুড়ে চলবে পরীক্ষা। এরপর জুন মাসে ষান্মাসিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। আমরা জানি, দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র না থাকলেও শিক্ষকরা অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ফলে বলা যায়, পাঠ্যবইয়ের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের এর খেসারত দিতে হবে বছরের ৬ মাসজুড়ে। এতে সর্বশেষ পাঠদান বা পাঠগ্রহণের ঘটতির মুখে পড়বে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। সরকার হয়ত বাকি পাঠ্যবই দ্রæত পৌঁছানোর উদ্যোগ নিবেন। কিন্তু ততক্ষণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাবে। এর দায় নেবে কে? আমরা লক্ষ করে আসছি,সরকারের বারবার কারিকুলাম পরিবর্তনের ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে বছরের শুরুতে সবকয়টি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ বছরও কারিকুলামে বেশকিছু রদবদল করা হয়েছে, ফলে আগের ধারাবাহিকতায় এবারও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের বেশকিছু শ্রেণির উল্লেখযোগ্য বই বিতরণ করা হলেও গ্রামেগঞ্জের বিদ্যালয়গুলোতে এখনও বই পৌঁছেনি। নতুন শিক্ষাবর্ষের দেড় মাসের বেশি সময় পার হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখনো অর্ধেকের মতো বই ছাপানো বাকি রয়েছে। সূত্র জানায়, এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ কোটির বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। ১৭ কোটির বেশি বই ছাপানো ও বাঁধাই করার কাজ বাকি রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যে চাহিদার ৫৫ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে; যার বেশির ভাগ পেয়েছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তবে ৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনও কোন বই পায় নি । এদিকে বই না পাওয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজ ও বাঁধাই শ্রমিক সংকটের কারণে সব বইয়ের কাজ শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জানা যায়, বই ছাপানোর কাগজের সংকট দূর করতে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ কাগজ প্রেসে পৌঁছার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর প্রেক্ষাপট এবার একটু ভিন্ন। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে তিন মাস দেরিতে বই ছাপানোর কাজ শুরু হয়েছে। ছাপানোর কাজ বিলম্বের অন্যান্য কারণ কারিকুলাম পরিবর্তন, বইয়ের সংশোধন ও পরিমার্জন। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা যে এ সুবিধা নিতে পারছে না, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই যত দ্রæত সম্ভব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা। নতুন শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার পাঠ্যবইয়েও অনেক প্রত্যাশিত পরিবর্তন এসেছে; অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে মানসম্মত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী হয়, সে বিষয়েও তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এসব বিষয়ে সমাজ পিছিয়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা কতটা এগিয়ে যেতে পারবে, এটাও এক প্রশ্ন। অতীতে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কাজেই মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশে কর্তৃপক্ষকে মনোযোগী হতে হবে। আমরা জেনেছি এবারও পঞ্চম শ্রেণি ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা হবে। কিন্তু বছরের দেড়মাস পার হলেও বই হাতে না পাওয়ায় বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা হতাশ হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত পাঠ্যই পৌঁছানোর উদ্যোগ নেবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।