পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে কমিশন চেয়েছেন পার্থ

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরাতে পৃথক কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন যমুনায় সংলাপ শেষে গতকাল শনিবার রাতে সাংবাদিকদের আলোচনার বিষয় জানাচ্ছিলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের
পার্থ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ‘গণহত্যা’ ও ‘গণতন্ত্র হত্যা’র বাইরে আরেকটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতি। সেই অর্থ পুনরুদ্ধারে একটি কমিশন করা হোক। পাচারের মাধ্যমে যে টাকা চলে গেছে, সে টাকাটা যাতে ফেরত আসে’।
এজন্য প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রোফাইল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাহলে ইউকে, দুবাই, সিঙ্গাপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে যে ৩-৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে সেই টাকাটা ফেরত আসবে। এই টাকাটা আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির টাকা। না হলে এই টাকা আমাদের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে। আমি মনে করি এই কমিশন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যার’ বিচার যাতে আন্তর্জাতিক মানে হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন তিনি। নির্বাচনমুখী সংস্কার এবং দ্রব্যমূল্য নিয়েও সংলাপে কথা হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলেছেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস এদিন ১০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথক আলোচনা করেন। দলগুলো হল- গণফোরাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ জাসদ (শরীফ নুরুল আম্বিয়া), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
সংলাপ শেষে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, এর মধ্যে একটা নির্বাচনি রোডম্যাপ দিতে বলেছি সরকারকে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিও বৈঠকে করেছে তাদের জোট।
১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের যেসব প্রেতাত্মা এখনও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে তাদের আমরা অপসারণ করতে বলেছি’।
এ জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে এনে সুশাসন কায়েম করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কারের সঙ্গে একমত পোষণ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ১৪ দফা লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার জন্য জনগণের সরকার এবং সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য এখানে সংবিধান সভার একটা নির্বাচন করতে হবে। কারণ আমরা মনে করি বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান না। এটা একটা অবৈধ সংবিধান’।
লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আমরা বলেছি যত সংস্কার করুক না কেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদের। এ পরিষদের হাতেগোনা কয়েকজনের সফলতা ছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। তাই ব্যর্থদের দ্রæত অপসারণ করতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্ররা ভালো করছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা ভালো করবে না। কিন্তু বড় বড় সাবেক সচিব, উপদেষ্টাদের চেয়ে তারা ভালো করেছে। আমরা আলী ইমাম মজুমদারের ব্যাপারে বলেছি। তাকে অপসারণ করতে হবে। আলী ইমাম মজুমদার প্রশাসনে আওয়ামী লীগদের বেছে বেছে নিয়োগ দিচ্ছেন’।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘সম্প্রতি ওনারা বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে এবং গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা বলেছি শেখ হাসিনার সরকারের পারিবারিক কর্মকাÐের দায় তার। শেখ হাসিনা সরকারের ভুলত্রুটির দায় বঙ্গবন্ধুর উপর চাপানোর যৌক্তিকতা নেই। তাই আমরা মনে করি উপদেষ্টা পরিষদের বক্তব্য সংশোধন করা উচিত’।
সংলাপ শেষে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের জুন বা জুনের পরেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব এবং ওনাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন’।