পাক-ভারত যুদ্ধবিরতি, শান্তি ফিরে আসুক দক্ষিণ এশিয়ায়

1

রতন কুমার তুরী

অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ৩৬ টি দেশের নিরলস প্রচেষ্টায় পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হলো। এই মুহুর্তে দুটি দেশের আকাশপথ নিরাপদ ধরে নেয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে বেশ কদিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর এবং জম্বু কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে থেমে থেমে মোটর, ড্রোন, মিশাইলের আওয়াজ আসছিল। দুদেশের জনগণও বেশ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছিল। বর্তমানে যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে আপাতত তা বন্ধ হলো। মুলতঃ ভারতের কাশ্মীরে অবস্থিত পহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাক-ভারত যুদ্ধংদেহী মনোভাব তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভারত-পাকিস্তান তাদের সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জায়গায় মিশাইল,ড্রোনসহ আরো বেশকিছু মারণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রাণহানি ঘটিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন দুটি দেশের মধ্যে যদি পরিপূর্ণরূপে যুদ্ধে বেঁধে যায় তাহলে পুরো এশিয়া ভয়াবহ রূপ থারন করবে এবং এটি পৃথিবীজুড়ে প্রভাব বিস্তার করবে। যুদ্ধ উত্তেজনায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বিবাদমান দেশ দুটির। কারণে এ যুদ্ধে কেউ জিততে পারবেনা সীমান্ত যুদ্ধগুলো দেখলে তা বোঝাই যায়। তবে এভাবে চলতে থাকলে দুটি দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব পরার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দুদেশে যেসব মারাণা ব্যবহার করছে এ অস্ত্রগুলো তারা বাইরের দেশ থেকে এনে ব্যবহার করছে ফলে স্বাভাবিকভাবে এদুদেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে থাকলে তাদের অস্ত্রের প্রয়োজন হবে আর এসব অস্ত্র রপ্তানী করে বাইরের কিছু দেশ মোটা অংকের ডলার হাতিয়ে নেবে। বিশেষ করে অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলো সহজে চাইবেনা এ দুদেশের মধ্যে দ্রæত যুদ্ধ বন্ধ হোক। তাছাড়া দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা লেগে থাকার কারণে অনেক দেশই এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেশগুলোকে যুদ্ধের দিকে উসকে দিচ্ছে।
আমরা জানি ১৯৪৭ সালে দেশ দুটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা লেগেই আছে। বিশেষ করে কাশ্মীরের দুটি অংশ দুদেশের সীমানা বরাবর অবস্থিত হওয়ায় এই সীমানায় সবসময় গোলাগুলি চলতেই থাকে। প্রকৃতপক্ষে ভারত পাকিস্তান এ দুটি দেশের সীমান্ত সম্পর্কিত বিষয়গুলো একটি সম্মানজনক নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। কারণ পাশাপাশি দুটি দেশ এভাবে যুগের পর যুগ ধরে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে পরেনা বিশেষ করে দুটি দেশের মধ্যে আজাদ কাশ্মীর আর জম্বু কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা লেগেই থাকে। অনেক সময় এ উত্তেজনা দুদেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষে দীর্ঘ রূপ নেয় আর এতে দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে ঘটতে সীমান্ত যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। বিষয়টি দুদেশের জনগণের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়ায়।
প্রকৃতপক্ষে আমরা জানি যে ভারত- পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর কখনই একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে নাই। মাঝেমাঝে সম্পর্কের বরফ গলতে দেখা গেলেও তা ছিল খুবই সাময়িক। দেশ দুটির জিওগ্রাফিক্যাল অবস্থান এমন যে এশিয়ার সবচেয়ে দুর্গম এবং কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ কিংবা গোলাগুলি শুরু হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে।
বর্তমান পৃথিবীতে যুদ্ধ এবং সংঘাত শুরু হলে একএকটি দেশের পক্ষে একএকটি শক্তিধর দেশ পক্ষ অবলম্বন করে ফলে যুদ্ধ কিংবা সংঘাতগুলো দীর্ঘায়িত হয়। মুলতঃ শক্তিধর দেশ সমূহ তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এমনটি করে। অনেক সময় বিবাদমান দেশ সমূহের দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে তারা অস্ত্র বিক্রি করে সংঘাতকে প্রলম্বিত করার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে বড় এবং শক্তিধর দেশ সমূহের সাথে সংঘাত, সংঘর্ষ, যুদ্ধ নিয়ে তাদের সাহায্য চাইবার আগে অবশ্য বিবাদমান রাষ্ট্রগুলোর ভাবা উচিত। কারণ যুদ্ধে জড়িয়ে তাদের যে কোনো লাভ হবেনা এটা অনেক আগে থেকেই প্রমাণিত সত্য। যুদ্ধ কিংবা সংঘাত করে একটি দেশ আরেকটি দেশের শত্রæ হওয়া আর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া আর কিছুই অর্জন করা যায়না। এর বাইরে রয়েছে দুটি দেশের জনগণের মধ্যে তিত্ততা বৃদ্ধি। ভারত- পাকিস্তানের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত সব দেশের ক্ষতি হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের গতি কমবে। বিভিন্ন জিনিষপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পরবে। এমনকী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কিংবা সংঘাত বেশিদিন স্থায়ী হলে এর ধাক্কা সরাসরি বাংলাদেশেও এসে পড়বে। যেহেতু পার্শ্ববর্তী ভারতের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কসহ সীমান্ত সম্পর্কও রয়েছে, পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হলে এর ধাক্কা আমাদের দেশেও এসে পড়বে। সানকিছু মিলিয়ে ভারত-,পাকিস্তান যুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেনা। মাঝখান থেকে উমোড়ল দেশগুলোর অনেকেই তাদের বিভিন্ন স্বার্থ হাসিল করে নেবে। তাই ভারত-পাকিস্তান দুদেশেরি উচিত খুব দ্রæত তাদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে সীমান্তে গোলাবর্ষন বন্ধ করা এবং দুটি দেশই বন্ধু প্রতিম আচরণ করা।
আমরা ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের প্রতি অনুরোধ করবো আপনাদের সীমান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে আপনারা সর্বোচ্চ পর্যয়ে ক‚টনীতিক তৎপরতা চালিয়ে এর একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসেন। নিজেরা না পারলে প্রয়োজনে তৃতীয় কোনো একটি কিংবা দুটি দেশের মধ্যস্থতা চান। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ যাতে নিরপেক্ষ এবং বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকা পালন করে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। আপনারা দুদেশ যদি এমন সমস্যা জিইয়ে রাখেন তাহলে এমন যুদ্ধ পরিস্থিতি বারবার আসা অসম্ভব কিছু নয়,তাই চেষ্টা করুন আপনাদের মধ্যে অন্তত কিছু বিষয়ের স্থায়ি সমাধান করার জন্য।
আমরা প্রত্যাশা করবো ভারত-পাকিস্তান গোলাবর্ষণ বন্ধ করে অচিরেই সীমান্ত থেকে তাদের সৈন্য সরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা কোনো অবস্থাতেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চাইনা। আমরা চাই দেশ দুটি তাদের স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাক। আশা করছি ভারত-পাকিস্তান দেশ দুটি এ যুদ্ধ বিরতি মেনে সীমান্ত যুদ্ধ থেকে সরে আসবে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক