বিবিসি বাংলা
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পরে প্রথমে ভারত, আর তারপরে পাকিস্তান, একে অপরের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ কড়া ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে। এ সব পদক্ষেপগুলোর মধ্যে দুই দেশেরই ওয়াঘা-আটারি সমন্বিত সীমান্ত চৌকি বন্ধের ঘোষণা যেমন আছে, তেমনই আছে দু’টি দেশই অপর দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে দেওয়া।
ভারত বুধবার ঘোষণা করেছিল- ‘সার্ক দেশগুলোর জন্য ভিসা ছাড়’ প্রকল্পের আওতায় যে পাকিস্তানীরা বিশেষ ভিসা পেয়েছেন, তা বাতিল করা হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও ঠিক ওই একই ঘোষণা করেছে ভারতীয়দের জন্য। বৃহস্পতিবার আবার ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তানের নাগরিকদের ইতোমধ্যেই দেওয়া সব ভিসা ২৭ এপ্রিলের পর বাতিল বলে গণ্য হবে।
একদিকে ভারত যেমন সিন্ধু নদের জল চুক্তি স্থগিত করেছে, তেমনই পাকিস্তান আবার সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের আকাশ সীমাও ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
ভারত-পাকিস্তান একে-অপরের বিরুদ্ধে যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে-
চুক্তি স্থগিত :
ভারতের ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিওরিটি গত বুধবার রাতে সিদ্ধান্ত নেয়- ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে সাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তি তারা স্থগিত করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে- ‘এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের অংশ থেকে জল প্রবাহ বন্ধ এবং অন্য দিকে প্রবাহিত করে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়া হবে’।
ইসলামাবাদ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে ভারত বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সিমলা চুক্তিসহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার অধিকার প্রয়োগ করবে, যতক্ষণ না ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা অব্যাহত রাখা, বিদেশে হত্যাকান্ড চালানো এবং কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব না মানার অবস্থান থেকে সরে না আসবে’।
গত বুধবার রাতে ভারত বলেছিল, ‘১৯৬০ সালের সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং পাকাপাকিভাবে সীমান্তপাড়ের সন্ত্রাসের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে’।
এছাড়াও, ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, ভারতের সাথে সব ধরনের বাণিজ্যও স্থগিত করা হচ্ছে এবং এটি তৃতীয় যে কোনো দেশের মাধ্যমে বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
কূটনীতিকদের অপসারণ :
বুধবার ভারত দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কিছু সামরিক কর্মকর্তাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সরিয়ে দিয়েছিল। আর ইসলামাবাদ থেকে নিজেদের একই পদমর্যাদার ক‚টনীতিকদের সরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত সামরিক ও প্রতিরক্ষা পরামর্শদাতাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে অবিলম্বে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এই পরামর্শদাতাদের সহায়কদেরও পাকিস্তান ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান বলছে, তাদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও তাদের সহযোগীদের দেশ ছাড়তে বলেছে। একই সঙ্গে ক‚টনৈতিক কর্মীদেরও সীমিত করে দিয়েছে দেশটি, ঠিক যেমনটা বৃহস্পতিবার করেছিল ভারত।
ভারত অবশ্য নিজে থেকেই বলেছিল যে, তারা ইসলামাবাদে অবস্থানরত নিজেদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা পরামর্শদাতা এবং তাদের সহায়কদের ফিরিয়ে আনবে।
দিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল ভারত, বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাস নিয়ে ঠিক একই নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। কর্মী সংখ্যা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কমিয়ে আনতে হবে দুই দেশকেই।
আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ :
ভারতের বুধবার রাতের ঘোষণা অনুযায়ী পাঞ্জাবে অবস্থিত আটারি সীমান্ত চৌকি অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আটারির উল্টোদিকে পাকিস্তানের সীমান্ত চৌকির নাম ওয়াঘা। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান তাদের ওয়াঘা সীমান্ত চৌকি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তবে যারা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ভারতে গিয়েছেন, তাঁরা আগামি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই রুট দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। ভারতও একই দিন পর্যন্ত ছাড় দিয়েছিল ওই পথ দিয়ে ভিসা নিয়ে ভারতে আসা পাকিস্তানীদের জন্য।
ভিসা বাতিল :
পাকিস্তান শিখ তীর্থযাত্রী ব্যতীত সার্ক ‘ভিসা ছাড়’ কর্মসূচির অধীনে সমস্ত ভারতীয় নাগরিককে দেওয়া ভিসা স্থগিত করেছে। এ ধরনের ভিসায় পাকিস্তানে অবস্থানকারী ভারতীয় নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতও বুধবার ঠিক একই ঘোষণা দিয়েছিল পাকিস্তানী নাগরিকদের ব্যাপারে।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত শুধুমাত্র ওই কর্মসূচির অধীনে নয়, পাকিস্তানীদের জন্য সব ভিসাই বাতিল করে দিয়েছে। এদিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘পাকিস্তানের নাগরিকদের ইতোমধ্যেই যেসব ভিসা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৈধ থাকবে। আর যেসব পাকিস্তানীকে চিকিৎসা ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বৈধ থাকবে’।
ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তান ভ্রমণ না করার পরামর্শও দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যারা এখনও সেদেশে আছেন, তাদের দ্রæত ভারতে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।