রূপম চক্রবর্ত্তী
বাংলাদেশের বাঙালি নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ এবং হিন্দু নববর্ষ প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে শকাব্দ, বঙ্গাব্দ এবং বাংলা নববর্ষ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। পন্ডিতগণ দুটো শকাব্দ ব্যবহার করে থাকেন, প্রথমটির নাম পুরনো শকাব্দ যা আদর্শ তারিখটি অস্পষ্ট, সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের দিকে কেননা প্রাচীন বৌদ্ধ ও জৈন শিলালিপিগুলোয় এই সময়টি ব্যবহার করা হয় কিন্তু তা নিয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। আরেকটির নাম ৭৮ খ্রিস্টাব্দের শকাব্দ বা শুধু শকাব্দ যার স্বপক্ষে দক্ষিণ ভারতে প্রমাণাদি পাওয়া যায়। এর সমান্তরাল উত্তর ভারতীয় পঞ্জিকা সালটি হচ্ছে বিক্রম সংবৎ যা বিক্রমী বর্ষপঞ্জিতে ব্যবহৃত হত। সম্রাট শালিবাহন, যিনি সম্রাট বিক্রমাদিত্যের পৌত্র, শকদের ৭৮ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত করেছিলেন এবং শকাব্দের আদর্শ হিসেবে এই বছরটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এই কিংবদন্তিটি ব্রহ্মগুপ্ত (সপ্তম শতাব্দী), আল-বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮) এবং বকিদের লেখাপত্রে পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে শক শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং পঞ্জিকা সাল হিসেবে পরিচিত হতে থাকে যার ফলে এর নাম হয় ‘শালিবাহন শক’। শকাব্দ শুরু হয় ৭৮ খ্রিস্টাব্দের বিষুব দিবস থেকে। আনুষ্ঠানিক শক পঞ্জিকার বছর প্রতি গ্রেগরীয় বছরের ২২ মার্চের সাথে সম্পৃক্ত, তবে গ্রেগরীয় অধিবর্ষে তা ২১ মার্চে হয়ে থাকে। সৌরচান্দ্রিক শালিবাহন শক পঞ্জিকা দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় ও কৃষিজ উদ্দেশ্যে এখনো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাঞ্জাব, দাক্ষিণাত্য, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, দিল্লি ও তামিলনাড়ুতে শকাব্দের প্রচলন খুব বেশি।
সৌর রাজ্যে প্রতি নতুন বছরে একজন অধিপতি হয়ে থাকেন। জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গণনা অনুসারে হিন্দু নববর্ষের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত একজনকে অধিপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। হিন্দু নববর্ষের ১২ মাসের প্রত্যেকটিতে রয়েছে নিজস্ব বিশেষ তাৎপর্য। বঙ্গাব্দের ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলের চন্দ্রে আবর্তনের বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে বৈশাখ। জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামানুসারে জৈষ্ঠ্য। উত্তর ও পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রের নামানুসারে আষাঢ়। শ্রাবণা নক্ষত্রের নামানুসারে শ্রাবণ। উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নামানুসারে ভাদ্র। অশ্বিনী নক্ষত্রের নামানুসারে আশ্বিন। কৃত্তিকা নক্ষত্রের নামানুসারে কার্তিক। মৃগশিরা নক্ষত্রের নামানুসারে অগ্রহায়ণ। পুষ্যা নক্ষত্রের নামানুসারে পৌষ। মঘা নক্ষত্রের নামানুসারে মাঘ। উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নামানুসারে ফাল্গুন। চিত্রা নক্ষত্রের নামানুসারে চৈত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে। হিন্দু পন্ডিতরা সূর্য, চাঁদ ও গ্রহের চক্র পর্যবেক্ষণ এবং গণনা করে সময় রাখার চেষ্টা করতেন। সূর্য সম্পর্কে এই গণনাগুলো সংস্কৃতের বিভিন্ন জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থে দেখা যায়, যেমন: ৫ম শতাব্দীতে রচিত আর্যভট্টের আর্যভট্টীয়, লতাদেবের ৬ষ্ঠ শতাব্দীর রোমাক ও বরাহমিহির দ্বারা পঞ্চ সিদ্ধান্তিক, ব্রহ্মাপ্তর ৭ম শতাব্দীর খন্ডখ্যাদ্যাক এবং অষ্টম শতাব্দীর সিদ্ধাধিশ্যাক।এই গ্রন্থগুলো সূর্য ও বিভিন্ন গ্রহ উপস্থাপন করে এবং সংশ্লিষ্ট গ্রহের গতির বৈশিষ্ট্যগুলো অনুমান করে। সূর্যসিদ্ধান্ত-এর মতো অন্যান্য গ্রন্থগুলো তম শতাব্দী থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলা সনকে বলা হয় বাংলা সংবৎ বা বঙ্গাব্দ,এখানে একটি শূন্য বছর আছে, যা শুরু হয় ৫৯৩/৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে। এটি যদি পহেলা বৈশাখের আগে হয় তবে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির খ্রিস্টাব্দ বা সাধারণ অব্দের বছরের তুলনায় ৫৯৪ বছর কম, অথবা পহেলা বৈশাখের পরে হলে ৫৯৩ বছর কম হবে। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে একজন সামন্ত রাজা। তবে পরে তিনি স্বাধীন ও সার্বভৌম গৌড়ভূমির শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রাজা শশাঙ্ক মারা গিয়েছিলেন ৬৩৭ বা ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ। এর মোটামুটি ৪৫ বছর আগে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন এবং তখন থেকেই (৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ) বঙ্গাব্দ চালু করা হয় – এটা ধরে নিলে ওই তত্ত¡টা অনেকটা মিলে যায়। কারণ বঙ্গাব্দর সঙ্গে খ্রিস্টীয় অব্দের ব্যবধানও ঠিক ৫৯৩ বছরের। এই মুহূর্তে যেমন ১৪৩২ বাংলা সাল শুরু হচ্ছে, আর সেটা ইংরেজি বা খ্রিস্টীয় ২০২৫ সাল- ফলে গণনার ব্যবধানটা ৫৯৩ বছরের। বঙ্গাব্দ শব্দটি আকবরের সময়কালের চেয়ে বহু শতাব্দী পুরনো দুটি শিব মন্দিরেও পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে আকবরের সময়ের অনেক আগে থেকেই একটি বাংলা বর্ষপঞ্জি বিদ্যমান ছিল। উল্লেখিত কারণে বাংলা সনের প্রবর্তক নিয়ে সম্রাট আকবর বেশি আলোচিত হলেও, বাংলা পঞ্জির উদ্ভাবক ধরা হয় আসলে ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্ককে। পরবর্তীতে সম্রাট আকবর সেটিকে পরিবর্তিত করেন খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে।
আমরা যে বর্তমানে পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ পালন করি তার প্রবর্তক হিসেবে সম্রাট আকবরের নাম ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। দীন-ই -ইলাহী ধর্মের প্রবর্তক সম্রাট আকবরের ধর্মীয় চেতনা ও রাজনৈতিক অভিলাষ পূর্ণ করা এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে তারিখ-ই-ইলাহী বিন্যাস করেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, ফতেহউল্লাহ শিরাজি কিন্তু নতুন পঞ্জিকাটি চালু করার সময় চান্দ্রমাসের আরবীয় মডেল ব্যবহার করেননি, করেছিলেন পারস্য মডেল, যা শকাব্দের মতোই সৌরমাসভিত্তিক ছিল। ১৫৮৫ সাল থেকে ফতেহউল্লাহ শিরাজি উদ্ভাবিত এ নতুন সাল ‘ফসলি সন’ নামে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরবর্তী সময়ে এ ফসলি সনই বাংলা সাল নাম ধারণ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাংলা মাসের নামগুলো নেয়া হয়েছে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাকা জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শকাব্দ থেকে: ১. বিশাখা থেকে বৈশাখ। ২. জাইষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ। ৩. আষাঢ়া থেকে আষাঢ়। ৪. শ্রাবণা থেকে শ্রাবণ। ৫. ভাদ্রপাদা থেকে ভাদ্র। ৬. আশ্বিনী থেকে আশ্বিন। ৭. কৃতিকা থেকে কার্তিক। ৮. পূস্যা থেকে পৌষ। ৯. আগ্রৈহনী থেকে অগ্রহায়ণ। ১০. মাঘা থেকে মাঘ। ১১. ফাল্গুণী থেকে ফালগুণ। ১২. চিত্রা থেকে চৈত্র। ‘তারিখ-এ-ইলাহি’র আগে বাঙালিরা প্রচলিত শকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করতেন। ৯৬৩ হিজরিতে হিজরি পঞ্জিকার প্রথম মাস ‘মহররম’ বৈশাখ মাসে শুরু হয়, তার সঙ্গে মিল রেখে চৈত্রের বদলে বৈশাখকেই ধরা হয় ‘তারিখ-এ-ইলাহির’ প্রথম মাস।
বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ মোটামুটি একমত যে, ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন মোহাম্মদ আকবরের শাসনামল থেকে বাংলা নববর্ষ উদযাপন শুরু হয়েছিল।
বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটির অন্যতম সদস্য অপরেশ কুমার ব্যানার্জি বলেন আগে বাংলায় বছরের শুরু হতো অগ্রহায়ণ দিয়ে, কারণ তখন কৃষকের ঘরে ফসল আসতো। কিন্তু খাজনা আদায়সহ নানা কিছু চিন্তা করেই বাংলা সন পহেলা বৈশাখ থেকে নির্ধারণ করা হয়। বাংলা সন নিয়ে গবেষণা করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্তে¡র শিক্ষক শারমিন রেজওয়ানা গণমাধ্যমে জানান, ‘তখন কর দেয়ার সময়ে ফসল উঠতো না। ফলে কৃষকদের কর দিতে সমস্যা হতো। সে কারণেই সম্রাট আকবর পহেলা বৈশাখের প্রথা প্রচলন করেন। আর শশাঙ্কের শতাব্দের সাথে বাংলা সনের সাথে মিলও খুব কম,’ ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ও ড. মুহাম্মুদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে প্রচলিত বাংলা পঞ্জিকার সংস্কার করা হয়। ড. শহীদুল্লাহ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিনে গণনার সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তিনি কেবল লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের অতিরিক্ত দিনটি ফাল্পুন মাসে জুড়ে দেয়ার কথা বলেন এবং লিপ ইয়ার গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী বিবেচনা করতে বলেন। সরকার শহীদুল্লাহর প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে ১৯৮৭ থকে তা সরকারিভাবে চালু করে। তারপর থেকেই বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল নববর্ষ পালন করা হয়।
এই ধারাবাহিকতায় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করতো। এর পরের দিন অর্থাৎ বৈশাখ মাসের প্রথম দিন ভূ-স্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষ্যে তখন মেলা বসতো। আয়োজন করা হতো আরো নানা অনুষ্ঠানের। কালের বিবর্তনে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মপরিধির পরিবর্তন এসেছে। নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোটাই অর্থনৈতিক এবং গ্রামে-গঞ্জে ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের শুরুর দিনে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষ্যে তারা তাদের নতুন-পুরনো খদ্দেরদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি মুখ করাতেন। এই আমন্ত্রণ গ্রহন করতে এসে অনেক খদ্দের তাদের পুরনো দেনার পুরোটা বা কিছু অংশ শোধ করে নতুন খাতায় হিসাব হালনাগাদ করতেন।
অতীতের তুলনায় এই আনুষ্ঠানিকতা বেশ কমে গেছে। তবে এনববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোটাই অর্থনৈতিক এবং গ্রামে-গঞ্জে ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের শুরুর দিনে তাদের পুরনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষ্যে তারা তাদের নতুন-পুরনো খদ্দেরদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি মুখ করাতেন। এই আমন্ত্রণ গ্রহন করতে এসে অনেক খদ্দের তাদের পুরনো দেনার পুরোটা বা কিছু অংশ শোধ করে নতুন খাতায় হিসাব হালনাগাদ করতেন। অতীতের তুলনায় এই আনুষ্ঠানিকতা বেশ কমে গেছে। তবে এখনো কোথাও কোথাও পহেলা বৈশাখে হালখাতার চল চোখে পড়ে। এখনো কোথাও কোথাও পহেলা বৈশাখে হালখাতার চল চোখে পড়ে। এই চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে যে মেলা হতো, এবং তাতে জনগণের যে অংশগ্রহণ হতো তা চৈত্র মাসের শেষ দিন ছাপিয়ে পরের বৈশাখ মাস বা পরের বছরের প্রথম দিনগুলোতেও থাকতো। চৈত্র সংক্রান্তির এই মেলাকে মূলত সর্বজনীন লোকজ মেলা বলা হতো। স্থানীয় কৃষিজাত পণ্য, কারুপণ্য, হস্ত ও মৃত শিল্প, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, লোকজ খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন রকমের মিষ্টি ছিল এসব মেলার মূল আকর্ষণ। এছাড়া বিনোদনের অংশ হিসেবে থাকতো যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান ইত্যাদি। পহেলা বৈশাখে খাবার হিসেবে পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছই মূল পদ হিসেবে উঠে এসেছে। ইতিহাসবিদরা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতিতে পান্তা দারিদ্র্যের প্রতীক। তাই পান্তাকে পহেলা বৈশাখের খাবার হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারটি আগে ছিল না। পান্তা ভাতের সাথে গরম কিছু হলে খেতে ভাল লাগে, এ চিন্তা থেকে ইলিশ পহেলা বৈশাখে যুক্ত হয়। এটি আসলে একটি সংযোজন। কিন্তু মূল বিষয়টি হলো পান্তা ভাত। বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা নয়, এখনো গ্রামে পহেলা বৈশাখে যদি আমরা খোঁজ করি, গ্রামের মানুষ ওই দিন পান্তা খায় না, ওই দিন তারা ভাল খাওয়ার চিন্তা করেন।
নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত হারানো ঐতিহ্যে ফিরে পাবার প্রচেষ্টায় আমরা নতুন উদ্যেমে কাজ করে যাব। সময়ের বিবর্তনে অনেক পুরানো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলুপ্তি হয়েছে। পুণ্যাহ উৎসবের বিলুপ্তি হয়েছে। তখন পহেলা বৈশাখ ছিল জমিদারদের পুণ্যাহের দিন। ঘোড় দৌড়, ষাড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, পায়রা ওড়ানো, নৌকা বাইচ, বহুরূপীর সাজ ইত্যাদি গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলা বর্তমানে আর তেমন প্রচলিত নেই। কিছু কিছু অনুষ্ঠান হারিয়ে গেলেও নিত্য নতুন কিছু অনুষ্ঠান সংযোজিত হয়েছে। নগরজীবনে নগর-সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উৎযাপিত হয়। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব। নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে উদ্যানের কোনো বৃহৎ বৃক্ষমূলে বা লেকের ধারে অতি প্রত্যূষে নগরবাসীরা সমবেত হয়। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এদিন সাধারণত সব শ্রেণীর এবং সব বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পোশাক পরিধান করে। তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ পরে; আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। আবার কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে। বিভিন্ন মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বড় আয়োজন ছিল এই নববর্ষ উদযাপন। নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব শুভ ও সুন্দরের পথে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট