পল্লী বিদ্যুতের ভ‚তুড়ে বিলে অতিষ্ঠ লোহাগাড়ার সাধারণ গ্রাহক

1

এম সাইফুল্লাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের বিদ্যুতের বিল এসেছে দ্বিগুন থেকে পাঁচ-ছয় গুনেরও বেশি। এসব বিলের কাগজ হাতে পেয়ে লোহাগাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাহকেরা অনেকটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাড়তি ভ‚তুড়ে বিলের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন উপজেলার সাধারণ গ্রাহক। গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ বিল সাথে নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসেও যোগাযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার অনেক সাধারণ গ্রাহক।
জানা যায়, বিদ্যুৎ বিলে ডিজিটাল কারচুপির কারণে লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন। কোনো কারণ ছাড়াই ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ না থাকলেও ডিজিটাল কারচুপিতে ঠিকই বাড়ছে বিদ্যুৎ বিল। কোনো মাসে ২০০ টাকা, পরের মাসে ৩০০ টাকা এবং এরপরের মাসে হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১ থেকে ২ হাজার টাকায়। এভাবে বাড়তি ভ‚তুড়ে বিলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাহকের বিদ্যুতের এমন ভ‚তুরে বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকেরা। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত গরমের কারনে এ মাসে বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে। আমিরাবাদের বাসিন্দা মো. হেলাল বলেন, আমার বাড়িতে মিটার আছে একটা, বিল আসত ৬০০ টাকা করে। সেই বিল ২ মাসে বেড়ে এখন হয়েছে ১৬০০ টাকা। এর আগের মাসে ১১০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছিল। এটা ভুতুড়ে বিল ছাড়া কিছুই না। সুখছড়ি শাইর পাড়ার বাসিন্দা আবদুল হাই চুট্টু বলেন, এরা ইচ্ছাকৃতভাবে মিটার রিডিং না দেখে বিল করে। মরিয়ম ভবনের ভাড়াটিয়া মাওলানা সেলিম উদ্দিন ক্ষোভ নিয়ে বলেন, প্রতি মাসে আমার বাসায় ২ হাজার টাকা করে বিদ্যুৎ বিল আসত। এ মাসে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৯৮৬ টাকা এসেছে। এটা আমাদেরকে হয়রানির অংশ।
স্থানীয় সগির টাওয়ারের বাসিন্দা সুমাইয়া ফেরদৌসি বকুল বলেন, আমাদের বাসায় ৭০০ টাকার উপরে বিদ্যুৎ বিল আসে না। এবার ১৪২৭ টাকা বিল এসেছে।
উত্তর আমিরাবাদ ঘোনা পাড়ার বাসিন্দা মো. ইসমাঈল বলেন, আমার বাড়িতে ৬০০ বা ৭০০ টাকা বিল আসতো। এবার ১১৭৮ টাকা বিল এসেছে। এটা ভ‚তুড়ে বিল।
বড়হাতিয়ার বাসিন্দা শিক্ষক জহুরুল হক বলেন, রিডিং চেক না করে মনগড়া বিদ্যুৎ বিল করে তারা। এলাকার অনেকেই রিডিং করতে আসে তাদেরকে রিডিং চেক করতে দেখে না কেউ। আন্দাজে বিদ্যুৎ বিল করে।
বড়হাতিয়া বায়তুশ শরফ পাড়ার বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, আমার বাড়িতে গত মাসে ২৬ ইউনিট বেশি লিখা হয়েছিল। আমি লোহাগাড়া জোনাল অফিসে কর্তৃপক্ষের কাছে মিটারের রিডিং ভিডিও করে নিয়ে গেছি। পরের মাসে ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও করে দেয়নি। এটি হয়রানি ও চুরি ছাড়া কিছুই হতে পারেনা। লোহাগাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মিনহাজ বলেন, লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষের বাড়িতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসছে, যা খুবই দুঃখজনক। আমার বাসায় গতবারের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ বিল এসেছে। মিটার রিডিং যারা করে তাদের অবহেলা ও ফাঁকিবাজির অংশ বলে মনে করি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোহাগাড়া জোনাল অফিসের কয়েকজন মিটার রিডারের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রচন্ড গরমে বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করেছে গ্রাহকরা। যার কারনে এ মাসে সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং না করার অভিযোগ অস্বীকার করে তারা বলেন, আমরা প্রতি মাসেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করে থাকি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এধরনের বেশ কিছু অভিযোগ আমার কাছে আসে। বিদ্যুৎ এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরম পড়লে বিদ্যুৎ বিল একটু বেশি আসে। যারা মিটার রিডিং করতে গ্রামে গ্রামে বাড়িতে, বাসায় যায় তাদের অবহেলা দেখলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরও বলেন, মিটারে বিদ্যুৎ বিলে রিডিং এর সাথে মিল না থাকলে সেটি অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।