নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের সাত দফা দাবিতে রেললাইন অবরোধের প্রভাব পড়েছে রেলে। যে কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে চলাচলকারী তিনটি ট্রেন পথেই আটকা ছিল। এই তিন ট্রেনের কোনটিই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি তিন ঘন্টা বিলম্বে কক্সবাজার পৌঁছেছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি। পর্যটক এক্সপ্রেস প্রায় তিন ঘন্টা ২২ মিনিটি ষোলশহর স্টেশনে আটকা ছিল। ছাত্রদের বিক্ষোভের কারনে তিনটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকার প্রভাব পড়েছে এই রুটে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনে।
গতকাল দুপুরে রেলওয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ষোলশহর দুই নম্বর গেট স্টেশনে আটকে থাকায় আমি সেখানে এসেছি। ছাত্রদের বুঝিয়ে ট্রেন চালানোর চেষ্টা করছি। তবে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার কারণে এর প্রভাব প্রতিটি ট্রেনেই পড়বে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসে পর্যটক এক্সপ্রেস। ২টা ৪০ মিনিটে ট্রেন কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিল। পর্যটক এক্সপ্রেস ১১টা ৪৬ মিনিটে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে ষোলশহর রেল স্টেশনে আটকে যায়। ১১টা ৫৮ মিনিট সেটি ষোলশহরে আসে। ৩টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ষোলশহর রেল স্টেশন ছেড়ে যায়। প্রায় তিন ঘন্টা ২২ মিনিট ট্রেনটি ষোলশহরে আটকে থাকে। সন্ধ্যা ৫টা ৩৯ মিনিটে ট্রেনটি কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে পৌঁছে।প্রায় দুই ঘণ্টা ৫৯ মিনিট বিলম্বে ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছে।
কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ১২টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে আসা কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছার কথা ছিল রাত ৯টায়। কিন্তু ট্রেনটি ২টা ৪০ মিনিট থেকে ট্রেনটি দোহাজারি স্টেশনে বসে ছিল। পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশন ক্রস করার পর ৪টা ১০ মিনিটে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি দোহাজারি রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ৫টার পর ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে আসে।
কক্সবাজার থেকে ১০টা ২০ মিনিটে ছেড়ে আসা প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনটিও ষোলশহর রেল স্টেশনে এসে ২টা ৫৭ মিনিটে আটকে থাকে। অথচ এ ট্রেনটি ২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছার কথা ছিল। এই ট্রেনটি দেড় ঘন্টা দেরিতে চট্টগ্রামে পৌঁছে। পরে ট্রেনটি ৩টা ১০ মিনিটে পুনরায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রায় দেড় ঘন্টা বিলম্বে প্রবাল এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কারণে পুনরায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়ে সন্ধ্যা ৬টার পর। এই ট্রেনটিও বিলম্বে রাতে কক্সবাজার পৌঁছে।
গতকাল দুপুরে কক্সবাজার রেল স্টেশনের ম্যানেজার গোলাম রব্বানী পূর্বদেশকে বলেন, ‘কক্সবাজার রেল স্টেশন থেকে যথা সময়ে সকল ট্রেন ছেড়ে গেছে। পর্যটক এক্সপ্রেস বিলম্বে আসলে বিলম্বেই ছেড়ে যাবে।’
এদিকে দীর্ঘক্ষণ ষোলশহর রেল স্টেশনে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে থাকার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যাত্রীরা নির্ধারিত ভ্রমন পরিকল্পনা করেই ট্রেনটিতে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও যথাসময়ে পৌঁছতে পারেনি। অনেকেই বিকাল নাগাদ ঘুরে পরদিন কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে করে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার কথা ছিল। আবার এমন অনেক যাত্রী আছে যারা শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনকে টার্গেট করেই কক্সবাজার ভ্রমনে যায়। ছাত্রদের আন্দোলনে ট্রেন শিডিউল বিপর্যস্ত হওয়ায় তাদের ভ্রমনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা যাত্রী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার ঘুরে পরদিন শুক্রবার সকালে সাগরে গোসল করে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে দুই বন্ধু কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। কিন্তু পথে এমন বিপত্তিতে পুরো ভ্রমন প্ল্যানেই পরিবর্তন আনতে হয়েছে। বিকালের সময়টা পথেই নষ্ট হয়ে গেল।’
এর আগে গতকাল সকাল ৮টা থেকেই সাত দফা দাবিতে রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে রেল লাইন অবরোধ করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা। এসময় তাঁরা ট্রেনের ইঞ্জিনের উপর উঠে নানা স্লোগান দিতে থাকে। যে সাত দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্ররা সেগুলো হলো- অবিলম্বে অযৌক্তিক রায় বাতিল করতে হবে এবং পূর্বের নিয়োগ পদ্ধতি বহাল রাখতে হবে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদ নাম পরিবর্তন করে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট/কারখানা সহকারি/ওয়ার্কশপ খালাসী/অথবা অন্য কোন নামে নামকরণ করতে হবে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ বিধি সংশোধন করে শিক্ষাগত যোগ্যতা পূর্বে ন্যায় এইচএসসি (ভোকেশনাল) করতে হবে। ২০২১ সালের নিয়োগ প্রাপ্ত সকল নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরগণদের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ বিধি সংশোধন করতে হবে, টেকনিক্যাল পদে নন- টেকনিক্যাল লোক নিয়োগ দিতে পারবে না। প্রতিটি পলিটেকনিক এবং টিএসসির অধ্যক্ষ স্যারেরা প্রশাসনিক কাউন্সিলের মাধ্যমে এই রায়ের বিপক্ষে রেজুলেশন দিতে হবে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরগণদের নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না এবং সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন থাকবে।