পরীক্ষা পেছানোর দাবি গ্রহণযোগ্য নয়

4

দেশে হঠাৎ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে গতকাল রবিবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল পরীক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা বোর্ডের প্রধান ফটকে অবস্থান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এসময় তারা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে তিনটি দাবি উপস্থাপন করেন। এ দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলো হলো- এইচএসসি-২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের পরীক্ষা পেছাতে হবে। জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা, নিরাপত্তা, লোডশেডিং ও বন্যার কারণে দুই-তিন মাসের পড়াশোনার ক্ষতি পূরণে সময় দেওয়া। এমসিকিউ (বহুনির্বাচনি) ও সিকিউ (লিখিত) মিলিয়ে পরীক্ষায় পাসের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের ঘোষিত ৩৩ দফা নির্দেশনা বাতিল করা। আন্দোলনকারীরা শিক্ষআ বোর্ডেও সামনে বিক্ষোভকালে বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্য এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। এখন পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। করোনার পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রেখে একটি যৌক্তিক সময়সূচি চূড়ান্ত করার আহবান জানান শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বেশি না হলেও তারা যে দাবি নিয়ে বোর্ডের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছে, তাতে বোর্ডের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে। দুই দিন পরেই পরীক্ষা, এসময় গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি ও কাজ থাকে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এসব প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও বিঘ্ন ঘটে। আমরা বেশকিছু অনলাইন মিডিয়াতে দেখেছি, বোর্ডের পরীক্ষা শাখার একজন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন, তাদের দাবিগুলো তিনি মনোযোগ সহকারে শুনেছেন, তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ’তোমাদের দাবিগুলো আমরা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেব, যেহেতু পরীক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেখানে দেশের সাড়ে বারো লাখের উপর পরীক্ষার্থী, তাদের পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা একক কোন বোর্ডের নেই।’
এছাড়া পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলনকারীদের সংখ্যা একেবারে নগন্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষা নিয়েও কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দালন করেছিল, সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা পেছানোর জন্য শিক্ষার্থীরা যেসব যৌক্তিকতা দেখাচ্ছে, আমরা তাকে অস্বীকার করতে পারি না, তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার যে ভেরিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে, তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বেশকিছু সতর্কতার কথা বলেছেন। ২০২০-২১ সালের করোনার সাথে এ করোনার কোন মিল নেই। বর্তমান ভেরিয়েন্টে দূরত্ব বজায় রাখা ও পথেঘাটে চলাচল, স্কুল কলেজ ও অফিস আদালতে যাতায়াতে কোন বিশেষ নির্দেশনা ঘোষণা করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া করোনা ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে বটে, কিন্তু এটি এখনও ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। মহামারির মত অবস্থাও হয়নি। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তা অনুসরণ করলে মোটামুটি করোনা কিংবা ডেঙ্গু ঝুঁকি এড়ানো যাবে, এতে পরীক্ষা পিছানোর কোন কারণ আছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমাদেও মনে রাখা প্রয়োজন, শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি টার্নিংপয়েন্ট। এ পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের জীবনের মোড় ঘুরে যায়, উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ম অনুযায়ী মার্চ-এপ্রিলেই হওয়ার কথা। করোনার আগে এপ্রিলেই এ পরীক্ষা হতো। করোনার যে অভিঘাত তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে সময়ের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম শুরু হয়েছে, তার রেশ এখনও টানতে হচ্ছে। সুতরাং সামান্য ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবরে পরীক্ষা পেছানোর যে আন্দোলন তা শিক্ষার্থীরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। এতে সর্বশেষ শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানোর দাবি থেকে সরে আসা দরকার। তাদের দাবি অন্তত তাদের স্বার্থে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ফরম পূরণ করেছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ও ছাত্রী ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন।