পরিযায়ী পাখিতে মুখর আনোয়ারা

1

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা

শীতের শুরুতে সুদুর সাইবেরীয় অঞ্চল থেকে আনোয়ারায় এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই আকর্ষণীয় তাদের উড়াউড়ি আর ডানা ঝাপটানোর মন জুড়ানো দৃশ্য। এসব অতিথি পাখির কলকাকলীতে অপূর্ব এক ভাললাগা কাজ করছে পাখি প্রেমিদের মাঝে।
আনোয়ারা উপজেলার সাগর উপক‚ল, কোরিয়ান ইপিজেডের বিভিন্ন লেক, উপজেলা পরিষদের পুকুর, ছুরুত বিবির দিঘি, মনু মিয়ার দিঘি, কালা বিবির দিঘি, খাসখামা দিঘি, গুজরা দিঘি, পদ্ম পুকুরসহ উপজেলার প্রাচীনতম ও বৃহত্তম দিঘি-জলাশয়গুলোয় এবং দেয়াঙ পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে যেন পাখির মেলা বসেছে। প্রতিবছর শীত এলেই বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আসে এসব স্থানে। সেসব স্থানে এসে প্রকৃতিকে সাজায় নতুন সাজে। পরিযায়ী পাখির আগমন ঘিরে উপজেলার নান্দনিক সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে।
প্রতিবছর শীত মৌসুমে সাগর উপকূল, পারকি সৈকত, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন দিঘি-জলাশয়ে সাদা বক, কবুতর, পানকৌড়ি, সাগর কৈতর, পাতিহাঁস, বালিয়া, গাংচিল, ঘুঘু, সারস, রাতচোরা, হরিয়ালসহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আগমনে পাখি প্রেমিক ও পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে পরিযায়ী পাখির দল। সন্ধ্যা নামলেই দেয়াঙ পাহাড় ও দিঘি-জলাশয়ের পাড়ে গাছ-গাছালিতে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এসব স্থানে জায়গা করে নিয়ে থাকে প্রতিবছর শীতের সময়।
প্রাণীবিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাংলাদেশে ৭৪৪ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে এদের আবাসিক পাখি বলা হয়। খন্ডখালীন সময়ে নিয়মিতভাবে আসে ১৭৬ প্রজাতির পাখি, যা বাংলাদেশের পরিযায়ী বা অতিথি পাখি হিসেবে গণ্য। এ দেশে পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-এই দুই মাসে বেশি পাখি আসে এ দেশে। এসব পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচিরে মুখর থাকে পুরো প্রকৃতি। মার্চ ও এপ্রিলে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়।
খাসখামা গ্রামের আলী আজম জানান, প্রতিবছর শীত এলেই খাসখামা দিঘিতে নানা রকম অতিথি পাখির ঢল নামে। ছোটকাল থেকেই এ দৃশ্য দেখে আসছি। সকাল-সন্ধ্যা অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে এই এলাকা। শীতের শুরুতে পাখিগুলো আসে আবার গরম পড়তেই পাখিগুলো চলে যায়।
পাখি প্রেমিক নাছির উদ্দিন বলেন, এভাবে প্রতিবছর পরিযায়ী পাখি নিধন হতে থাকলে প্রকৃতি হারাবে তার নিজস্ব রূপ, বিলুপ্তি ঘটবে বহু পাখি প্রজাতির। তাই সবার উচিত অতিথি পাখিদের নিরাপত্তাদানে মানবিক হওয়া। সর্বোপরি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
কোরিয়ান ইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, অতিথি পাখিদের আবাসস্থলের পরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয় হবে। এসব পাখি নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে এখানে আর আসবে না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সঠিক রাখতে এসব পাখির ভূমিকা ব্যাপক। তাই এসব অতিথি পাখির বিচরণ নির্বিঘœ করতে স্থানীয়দেরও সহযোগিতা জরুরি।