পরিবেশ রক্ষায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরো কঠোর হতে হবে

0

অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা ইতোমধ্যেই জনগণের দৃষ্টি অকর্ষণ করেছেন । তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে যারা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেন তাদের কারণে দীর্ঘ ৫৪বছর ধরে দেশের পরিবেশ বিনষ্ট হয়েগেছে। পরিবেশ বিপরর্যায় ঠেকানোর জন্য যারা অতীতে কাজ করেছে তারা সততা নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে পারেনি। নিষিদ্ধ পলিথিন বাজারে এখনো আছে। বন কাটা, পাহাড় কাটা থামছে না। একটা অসাধুচক্র এর সাথে জড়িত। প্রকৃত পক্ষে এদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। বন কাটা আর পাহাড় কাটার অসাধুচক্রটি রাজনৈতিক অসাধুপনাকে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। যেহেতু বর্তমান বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা রাজনৈতিক পরিচয়ে আসেননি, সেহেতু তিনি কঠোর হলে অবশ্যই বন ও পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ,শব্দদূষণ বন্ধ করতে পারবেন।
চট্টগ্রামে র্নিবিচারে পাহাড় কাটা, পলিথিন বন্ধ ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের সরকারের কঠোরতার কথা জানালেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গতকাল নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় সভার এ কথা বলেন।
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা আর চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমি আসব-যাব, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। চলে গেলে আবারও পাহাড় কাটা হবে এই ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা আর চলবে না। এবার মালিককে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাহলে পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে মালিকের নাম নেই। মালিকের নামসহ আবার তালিকা দিতে বলেছি।
উপদেষ্টা বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। তাকে সবসময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে। ওরা রাতেও পাহাড় কাটে। রাতের বেলা পাহাড় পাহারা দিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, অনেকে বিকল্পের কথা বলেন। পলিথিন ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হয়েছে। ২০২৫ সালে এসে বাস্তবায়নের কথা আমরা বলছি। জনগণের স্বার্থেই পলিথিন বন্ধ করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, ২০০৪ থেক ২০০৬ সালে লাগাতার অভিযান করে পলিথিনের ব্যবহার প্রায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ বিকল্পের কথা তোলেনি।
পলিথিনের বিকল্পের ধোঁয়াটা পলিথিন ব্যবসায়ীদের থেকে উঠে। যখন পলিথিন বন্ধের কাজ শুরু করলাম তখন শ্রমিক পুর্নবাসনের ধোঁয়া তুলল। অথচ, যতটুকু তাপমাত্রায় পুড়ানো কথা তার চেয়ে কম তাপমাত্রায় পলিথিন তৈরির কারণে কারখানার শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদেরকে ডায়ক্সিনের মুখোমুখি করেছে। এর কারণে তারা ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যখন কারখানা বন্ধের কথা বলা হয় তখন শ্রমিকের কথা সামনে আনা হয়। নিষিদ্ধ পণ্যের উৎপাদন বন্ধে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে কেন।
পলিথিন বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, আমি সকল বাহিনীর সাথে মিটিং করেছি। আমরা যখন পলিথিন কারখানা বন্ধ করতে যাব বাধা আসবে। সেই বাধা মোকাবেলা করে আমরা বন্ধ করবো। গত সপ্তাহে আমরা কামরাঙ্গিরচরে বন্ধ করেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা সব জায়গায় বন্ধ করবো। আপনারা কেউ পলিথিনের শপিং ব্যাগ নেবেন না।
তিনি বলেন, বিকল্প আপনার-আমার সবারই আছে। আমরা এর বিপরীতে পাটের ব্যাগ, চটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। পলিথিন আমাদের স্বা¯ে’্যর জন্য ক্ষতিকর মনস্তত্ব নিতে হবে। আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। পলিথিনের জন্য আলাদা করে টাকা দিচ্ছেন না, আদতে পুরা জীবনটাই দিয়ে দিচ্ছে।
পলিথিনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন বাজারে গেলে গাজরের জন্য, শসার জন্য, ফুলকপির জন্য, কাঁচা মরিচের জন্য একটা করে পলিথিন। আর মাছ-মাংসের জন্য পলিথিন তো আছেই। এটা আসলে সরকার আইন করেছে বলে আপনাকে মানতে হবে না। এটি আপনার জন্য খারাপ। আমাদের দূষিত বাতাস গ্রহণ করেও শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগে খাবার রেখে খাওয়া চরম অনিরাপদ। প্লাস্টিকের গ্লাসে গরম চা-কফি দেওয়া হলে মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। এটা কেন আপনার সন্তানকে খাওয়াবেন? এটা আপনার মনে রাখতে হবে, এটা খারাপ জিনিস এবং এটির বিকল্প আছে।

গাড়িতে উঠলে হর্ণ বাজাতে নিষেধ করব : শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ গাড়ি অথবা উবার আছে। যার গাড়িতে উঠবেন ড্রাইভারকে বলবেন হর্ন বাজাবেন না। গতিটা একটু কম রাখলে হর্নও বাজাতে হবে না, দুর্ঘটনাও কমবে। অনেক রাস্তা আছে যেখানে রিকশা চলে না, সেখানে হর্ন কেন বাজাতে হবে? আপনি হর্ন বাজানো বন্ধ করলে শব্দদ‚ষণ বন্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্ণের বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই চট্টগ্রামে একটা ক্যাম্পেইন শুরু হবে।
এ বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটাকে আইন করে বন্ধ করতে হবে। যেভাবে ২০০৫ সালে করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে প্রতিটি কারখানা এবং বিপণন স্থানগুলোতে আইন প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে একটা সুফল পাওয়া যাবে। শুধু কথায় নয়, মাননীয় বন,পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা আন্তরিকভাবে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসলে দেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর উন্নতি হবে এমন ধারণা দেশবাসীর।