পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস মাহে রমজান

2

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। কালের পরিক্রমায় মুসলিম উম্মাহ্’র কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই শুভাগমন করে পবিত্র মাহে রমজান। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর ২০২৫ সালেও মাহে রমজান এলো আমাদের দুয়ারে। পবিত্র ও মহান এই মাস পাওয়া প্রত্যক মুসলমান নরনারীর জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এই রমজান মাসকে মুসলিমদের নিজেদের পরিশুদ্ধ করার এক মহাসুযোগ হিসেবে দেখা হয়। সব খারাপ এবং অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত রেখে নিজেকে একজন খাঁটি ও পরিপূর্ণ মুমিন হিসেবে গড়ে তোলার এর চেয়ে আর কোন বড় উপলক্ষ নেই। এই মাসেই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। কুরআন নাযিলের মাস মাহে রমজান। পবিত্র কুরআন নাযিলের কারণে এই মাসের এত গুরুত্ব, মাহাত্ম্য।
রমজানের আগমনের কারণে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট সাফল্যের সৃষ্টি হয়। ইবাদাত-বন্দেগীর এক মোক্ষম সময় মাহে রমজান। এ মাসে একজন মুসলমান তার পরবর্তী জিন্দেগী কীভাবে সৎ ও সুন্দরভাবে কাটাতে পারে তার প্রশিক্ষণ নেন। এ মাসেই নাজিল করা হয় মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ -সূরা বাকারাহ্
আমাদের দেশে প্রতি বছরে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়ায়! এবার তা আরো ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কষ্টে পড়েছে মুমিন মুসলমান। আরব রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেয় কিংবা সহনীয় পর্যায়ে রাখে। সেখানে আমরাই ব্যতিক্রম! রমজান আসার আগেই বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম। কেন এমন হয় তার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। সরকার চাইলে রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে উদ্যোগ নিতে পারেন। পারেন কালোবাজারি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে।
প্রতিবছর রমজান মাস আমাদের মাঝে আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু আমরা নিজেদের কতটুকু সংশোধন এবং নিজেদের ঈমান, আখলাক তরতাজা করতে সমর্থ হই তা বলা কঠিন। অন্যমাসে আমরা অনেকেই যেভাবে বেপরোয়া ও নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে চলি সে সব আচরণ কি এই পবিত্র মাসে বর্জন করতে সক্ষম হই? আবার অনেকের ধারণা, রমজান মাসেই ভাল হয়ে চলার চেষ্টা করলে হবে। বাকি দিনগুলোতে না চললেও কোন অসুবিধা নেই। এ ধরনের মনমানসিকতা মারাত্মক ভুল। আমরা যদি ইসলামের সঠিক নির্দেশনা অনুসরণ করে চলতে চাই তাহলে রমজানে যে ভাল কাজ ও ইবাদত-বন্দেগীর অভ্যাসগুলো গড়ে উঠবে তা পরবর্তী মাস এবং দিনগুলোতেও অনুসরণ করতে সমস্যা থাকার কথা নয়। আর এটাই আসল বিষয়। আসলে প্রয়োজন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন। রমজান মাস এমনই গুরুত্বপূর্ণ মাস যার পুরস্কার মহান আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দেবেন। হাদীসে এসেছে ‘কেবল সাওম ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার জন্য, সাওম আমার জন্য আমি নিজে এর প্রতিদান দিব’- সহিহ বুখারী।
এ মাসের একটি ফরজ ইবাদাত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের চেয়েও বেশি সওয়াবের সমতুল্য। আর রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশি ঘ্রাণযুক্ত। মাহে রমজানে রয়েছে মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা’আলার অফুরন্ত দয়া, ক্ষমা এবং জাহান্নাম থেকে নাজাতের প্রতিশ্রæতি। এ মাসেই রয়েছে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বাদর যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
তাক্বওয়া অর্জনের মাস মাহে রমজান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদেও পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’।-সুরা বাকারাহ। এ কারণেই এই পুণ্যের মাসে আমরা নিজেদেরকে একজন মুত্তাকী ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এ রমজান মাস আমাদের জন্য কিয়ামতে সুপারিশ করবে। হাদীসে বর্ণিত, ‘কিয়ামতের দিনে সাওম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে’- মুসনাদে আহমদ। অনেকে আছেন যারা পবিত্র এ মাসটিতেও অন্য মাসের খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে পারেন না।
এমনকি রোযা পালনের ক্ষেত্রেও গাফেলতি করে। অনেকে আছেন কোন ধরনের অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও রমজানের সিয়াম পালনে উদাসীন থাকেন। অথচ ইচ্ছা করে একটি ফরজ রোজা না রাখলে একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং, আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। মহান আল্লাহর ভয় মনের মধ্যে রাখতে হবে এবং সহিহভাবে সিয়াম পালন করতে হবে।
এ মাস আমাদের কাছে মেহমান হিসেবে তাশরীফ আনে। মেহমানের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া উচিত। বছর পরিক্রমায় যে পবিত্র মাসটি আমাদের কাছে আসে তাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাপমোচন আর সৎকাজ করার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে পবিত্র রমজান। এক অনাবিল শান্তি ও চিরস্থায়ী মুক্তির পয়গাম নিয়ে  এলো মাহে রমজান। আর রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। যা আমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ তুমি এ মাসকে আঁকড়ে ধরে পূর্ণ মুমিন হিসেবে নিজেকে তৈরির তাওফিক দিও। স্বাগতম হে মাহে রমজান। সকল রোজাদার মুসলিম নরনারীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট