ফারুক আবদুল্লাহ
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, চাকরি নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টির কারণে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামে বন্দরে বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এসব বিষয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা কর্মসূচি পালন করেছে বন্দরে কর্মরত বিভিন্নস্তরের কর্মচারীরা। তাদের দাবি, শীর্ষ এক কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বন্দর থেকে তাকে প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) পদে নিয়োজিত মো. হাবিবুর রহমান। তিনি প্রচলিত নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, চাকরি নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও সংশ্লিষ্ট কাজে দীর্ঘসূত্রিতা ও নানা জটিলতা সৃষ্টি করে রাখছেন। এছাড়া তাদের বেতন নির্ধারণ সংক্রান্ত ৪০-৪৫টি নথি কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বছর খানেকের বেশি সময় ধরে অনুমোদন না করে ফেলে রেখেছেন। শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীদের বেলায় অবসর পরবর্তী ১৫ বছর পর পেনশন পুনরায় চালুর ব্যাপারে সরকারি আদেশ অনুসরণ না করে নিজ অনুমোদনে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবসমূহ নিষ্পন্নে অনীহা প্রকাশ করছেন।
এছাড়া বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন মাদ্রাসার একজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা ও প্রচলিত নিয়ম পাশ কাটিয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসার একটি কক্ষকে ওই শিক্ষকের আবাসস্থলে রূপান্তর করেছেন।
বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি কর্মরত প্রতিষ্ঠানের কোন যানবাহন ব্যবহার করবেন না, এ শর্তে সরকার থেকে বিনা সুদে ঋণ নিয়ে একটি গাড়ি ক্রয় করেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি সরকারি কর্তৃপক্ষের কোন যানবাহন ব্যবহার করার পরিবর্তে নিয়মানুযায়ী সরকারি টাকায় ক্রয়কৃত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে প্রাপ্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি সরকারি টাকায় গাড়ি ক্রয় ও এর বিপরীতে প্রচলিত সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি বন্দরের একটি যানবাহন (গাড়ী নম্বর ঈগ-এঅ-১১-২৫৮৫) নিয়মিত ব্যবহার করছেন।
এ কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে নথি নম্বর ১৮.১৩.০০০০.২৫০.৩৯.০১.২২ (লুস-) এর মাধ্যমে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা বিল বাবদ বন্দর তহবিল থেকে ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
এদিকে শীর্ষ এক কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্নস্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এজন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামে বন্দরে। এ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে বেশ কয়েকদফা কর্মসূচি পালন করেছে বন্দরে কর্মরত বিভিন্নস্তরের কর্মচারীরা। তাকে প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলছেন তারা।
এসব কারণে বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমানকে অপসারণের দাবি জানিয়ে গত ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল (সাবেক সিবিএ) এর সহ- সাধারণ সম্পাদক, মোজাহের হোসেন শওকত ও সহ-প্রচার সম্পাদক, মো. হুমায়ুুন কবীর এবং চট্টগ্রাম বন্দর ইসলামী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক, মো. ইয়াছিন।
এতে উল্লেখ করা হয়, পদোন্নতি, প্রবিধানমালা সংশোধন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টিসহ প্রশাসনিক সকল কাজে বাধাদানকারী সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) পদে নিয়োজিত মো. হাবিবুর রহমানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল (সাবেক সিবিএ) সহ-প্রচার সম্পাদক মো. হুমায়ুুন কবীর বলেন, আমাদের হাজার হাজার দাবি আছে। কিন্তু এখন আমাদের দাবি একটাই, অতিদ্রæত চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য মো. হাবিবুর রহমানকে অপসারণ করতে হবে। তিনি বন্দর থেকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অকার্যকর করে রাখার অনুরোধ করছি। আর যতক্ষণ না তাকে অপসারণ করা হবে, আমাদেরকে প্রতিদিন বন্দর ভবনে আসতে হবে। আমি মনে করবো কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে আসতে বাধ্য করছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা বিল বাবদ বন্দর তহবিল থেকে ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এটা চিটাগাং পোর্টের ইতিহাসে নেই। তিনি অনিয়মকে নিয়ম করবেন আর আমাদের কর্মচারীদের বেলায় নিয়মকে অনিয়ম করবেন, এটা আমরা মানতে রাজি না।
এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে বন্দরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা না প্রকাশ না করে বলেন, কারো বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ করলে তো হবে না। তা তদন্তের একটি বিষয় আছে। তিনি সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। বেশকিছু বিষয়ে কর্মচারীরা তার অপসারণ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তা নিয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।