পথে-প্রান্তরে ক্ষতের চিহ্ন

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের ১১ উপজেলার ১০১টি ইউনিয়ন প্লাবিত হলেও এখন পানি আছে তিন উপজেলায়। বাকিসব উপজেলার পানি নেমে গেছে। এখনো ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুন্ডের ৩৩টি ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত। যেখানে গতকাল পর্যন্ত পানিবন্দী অবস্থায় ৫৮ হাজার ৪৩৮ পরিবারের দুই লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৮০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ফটিকছড়িতেই ৩৯ হাজার ৫৭৮ পানিবন্দী পরিবারের ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ ছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন, শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন প্লাবিত এলাকার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। পথে-প্রান্তরে ক্ষতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সংগ্রহ করেছে প্রাথমিক তথ্য। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, বন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৬০ কিলোমিটার এইচবিবি সড়ক, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৬০৫ কিলোমিটার সড়ক ও ১২৫টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের ৫ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা, মৎস্য সম্পদ বিভাগের ২৯০ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা, কৃষি বিভাগের ৩৯৪ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি দিনদিন উন্নতি হচ্ছে। যেখানেই প্লাবিত হয়েছে পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। এখনো ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে পানি আছে। এতে প্রায় ২ লক্ষ ৬৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ৫৯৫ মেট্টিক টন চাল, ২১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নগদ বরাদ্দ দিয়েছি। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে। প্রতিদিনের মতো বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ও স্থানীয় এনজিও এবং ছাত্রদের সম্পৃক্ত করে বন্যা প্লাবিত এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে হালদা নদী ও ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর-নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে’।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও সীতাকুন্ডের ৩৩ ইউনিয়নে পানি জমে আছে। পানির স্তর কিছুটা কমলেও সেখানে অনেকেই পানিবন্দী অবস্থায় আছে। এখনো ফটিকছড়ির ২০টি ইউনিয়নের ৩৯ হাজার ৫৭৮ পানিবন্দী পরিবারের ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫০ মানুষ, মিরসরাইয়ের ৮ ইউনিয়নের ১৪ হাজার ৮০০ পরিবারের ৭৯ হাজার ৫০০ মানুষ, সীতাকুন্ডের ৫ ইউনিয়নের ৪ হাজার ৬০ পরিবারের ২২ হাজার ৩০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। প্লাবিত এলাকায় তীব্র সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ওরস্যালাইন, ৬ হাজার ৬৪০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত ফটিকছড়িতে ৬৫টি ও মিরসরাইয়ে ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে। সেখানে ৫ হাজার ১১১ পুরুষ, ৬ হাজার ৪৮৭ নারী ও ৪ হাজার ৬ শিশু মিলিয়ে ১৫ হাজার ৬৬১ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশু আছে ৪৬৬টি। চালু রয়েছে ২৮ মেডিকেল টিম।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে ফটিকছড়ি। ২০ ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিতদের উদ্ধার, নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলেই ক্ষয়ক্ষতি আরোও বেশি দৃশ্যমান হবে।