নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে অসাধু সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন সদস্যরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে রাখায় সাধারণ মানুষ খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে নিত্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এই তাগিদ দেয় হয়।
সভার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা মতো নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলো পাইকারী ও খুচরা বাজারে একযোগে কার্যক্রম শুরু করেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদল যাতে আপনাদের বাঁধা দিতে না পারে সেজন্য সরকার ও প্রশাসন সর্বোত্তম সহযোগিতা করবে।সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না কি অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে তা দেখতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে সেখানে সহযোগিতা করার জন্য থানা পুলিশের টিম থাকবে। এ বিষয়ে থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে মার্কেটে তদারকির জন্য একজন অ্যাডিশনাল এসপি’র নেতৃত্বে জেলা পুলিশের বিশেষ টিম দেয়া হবে। গত ১৭ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক শ্রেণির কর্মচারীদের কারণে দুই ঘন্টার অধিক শাটডাউন ছিল (বিদ্যুৎবিহীন)। এ সময়ে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছিল। এ ধরণের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না হয় সে বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখতে হবে।
সভায় জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদের কার্যক্রমসহ জেলা পরিষদের সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলছে। কোনো প্রকল্পে যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারাদেশের মতো আগামি ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন। চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত মোট ১৮ দিনের প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছাত্রী/কিশোরী (১০-১৪ বছর) ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহিভর্‚ত কমিউনিটির ১০-১৪ বছর বয়সী মোট ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৮ জন কিশোরীকে এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কিশোরীকে এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ব্যয়বহুল এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে। ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও জন্মনিবন্ধনবিহীন কিশোরীদেরকে হোয়াইট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০ দিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসমূহে এবং পরবর্তী ৮ দিন স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রসমূহে কিশোরীদেরকে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে।
সমন্বয় সভায় জেলা পরিষদ, গণপূর্ত বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা মৎস্য বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন (মিরসরাই), মিলটন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), মোজাম্মেল হক (ফটিকছড়ি), ইনামুল হাছান (লোহাগাড়া), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলি), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), অংগ্যজাই মারমা (রাউজান), কেএম রফিকুল ইসলাম (সীতাকুন্ড), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), মাহমুদুল হাসান (রাঙ্গুনিয়া), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী), ইশতিয়াক ইমন (আনোয়ারা), নাজিরহাট পৌর প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী, চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. সরওয়ার জাহান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র ছন্দ, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. কামরুর ইসলাম খান, নির্বাহী প্রকৌশলী-২ জহির রায়হান, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রামেশ্বর দাশ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান, জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আবদুর রহমান, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোছলেহ উদ্দিন প্রমুখ। জেলার বিভিন্ন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।