জনজীবনে অস্বস্তি
সকল ভোগ্যপণ্যের মূল্য আকাশচুম্বি। চাল থেকে শুরু করে মৌসুমি সবজির দামেও আগুন ঝরছে। মহামারি করোনার সময়কাল থেকে শুরু করে বাজার দামে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে দিনের পর দিন তা বেড়েই চলছে। এর মধ্যে বাজারে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সোয়াবিন তেলের। অভিযোগ রয়েছে ডিলারদের কারসাজির কারণে বাজারে সোয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সরকার কয়েকদিন আগে প্রতি লিটারে ৮ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। সরকার আশা করেছিল এবার বাজারে আর সয়াবিন তেলের সংকট থাকবেনা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বাজার মূল্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়ানোর পরও বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। সূত্র জানায়, নগরীর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজার ও কর্ণফুলি মার্কেটের পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সোয়াবিন তেল প্রায় নেই-ই। দু-একটি দোকানে তেলের বোতল পাওয়া গেলেও নতুন নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন, দাম বাড়ানোর পরও ডিলাররা তেল সরবরাহ করছেন না। অপরদিকে ডিলারদের অভিযোগ তেলের মিল মালিকরা সরবরাহ না করায় তারা বাজারে বাজারে তেল দিতে পারছেন না। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যাই হোক, সাধারণ ভোক্তা শ্রেণির নাভিশ্বাস উঠেছে। সকল প্রকার পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে অস্বস্তি বেড়ে চলছে। এ অবস্থায় সরকারের বাজার মনিটরিং জোরদার করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তবে ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে এবং দাম কমে আসতে পারে। চট্টগ্রামের মত রাজধানী ঢাকার কাউরান বাজার থেকে শুরু করে সবকটি বাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজারে একই অবস্থা।
আরবি মাস হিসেবে এখন জমাদিউস সানি। সেই হিসেবে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র আড়াই মাসের মতো বাকি রয়েছে। নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, রোজা শুরুর দু-তিন মাস আগে থেকেই বাজারে নানা রকম মেরুকরণ শুরু হয়। তখন থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। পরিবর্তন যাই হোক, এখনও পর্যন্ত সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য যেহেতু কেউ ঠেকাতে পারে নি, তাই ধারণা করা যায়, এ বছরও আগের ধারাবাহিকতা ব্যত্যয় ঘটবে না। বাজারের বর্তমান অবস্থা তারই ইঙ্গীত বহন করে। কারণ এরই মধ্যে রমজানে অতি ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। পবিত্র রমজান মাসের আগে থেকে সোয়াবিন তেল, ছোলা, ডাল, পিঁয়াজ ও খেজুর ইত্যাদির চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। দেখা যাচ্ছে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রির সংকট এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সরকার সংকট দূর করতে সোয়াবিন তেলের দাম সমন্বয় করতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তার পরও সংকট না কাটায় ভোক্তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এমনিতে কয়েক মাস ধরেই আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দামই বাড়তি। তার ওপর সয়াবিন তেলের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা অনেক বেশি চাপে পড়ে যাচ্ছে।বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারকে এখন থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। বাজারে যেসব পণ্যের দাম বেশি এবং আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলোর সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মকান্ড অনেক বেশি বৃদ্ধি করতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল বৃদ্ধির পাশাপাশি নির্ধারিত দোকান থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে তাদের উদ্যোগগুলো যেন সাধারণের উপকারে আসে সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। টিসিবি আর ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি সারা দেশেই ছড়িয়ে দিতে হবে।
শুরুতেই বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষের পক্ষে জীবনধারণই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা মেটানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল নিত্যপণ্যেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই ঘটছে। আমরা মনে করি সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি কথিত সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ও বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।