পটিয়া প্রতিনিধি
দেশের একমাত্র লবণ মিলের পরিত্যক্ত পানি থেকে পুনরায় লবণ উৎপাদনের রের্কড গড়ে নজির স্থাপন করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার ব্যাবসায়ীরা। স্বাভাবিকভাবে লবণ উৎপাদন করা হয় সাগরতীরবর্তী এলাকায় নোনাপানি থেকে। কিন্তু সাগরের পানি সরাসরি শুকিয়ে লবণ উৎপাদন হচ্ছে না পটিয়ায়। এখানে লবণ উৎপাদন হচ্ছে ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার পরিত্যক্ত লবণের পানি আর মিঠা পানির মিশ্রণে। টনে টনে লবণ উৎপাদন হচ্ছে এ প্রক্রিয়ায়। আর এসব লবণ যোগান দিচ্ছে মাছের খামার, কৃষিকাজ, মাছ ও চামড়া সংরক্ষণসহ নানা কাজে ব্যবহারের জন্য। ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ ক্রাশিংয়ের পর কারখানার পরিত্যক্ত পানি জমির এক কোনায় পুকুরের মতো করে জমানো হয়, সেখানে চানখালী খালের মিঠা পানি আর ফিটকিরি দিয়ে সেখানে থেকে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি আনা হয় জমিতে সারি সারি করে রাখা পলিথিন দিয়ে গড়ে তোলা লবণ উৎপাদনের ট্রেতে। এরপর সেই পানি পলিথিনের ওপর রোদে শুকিয়ে ৫-৭ দিনে লবণে পরিণত হচ্ছে। উৎপাদিত এ লবণ প্রতি কেজি ৬-৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত লবণ মাছের খামার, চামড়ার আড়ত, কৃষিকাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর দিন দিন বাড়ছে লবণ মাঠ।
লবণ ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রায় ৭-৮ বছর আগ থেকেই অল্প পরিসরে ইন্দ্রপুলের লবণ কারখানার পরিত্যক্ত পানি পুনরায় রোদে শুকিয়ে লবণ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুধু পটিয়াতেই হচ্ছে। দেশে আর কোথাও এভাবে লবণ উৎপাদন করার নজির নেই। ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার আশেপাশে যে সব কৃষিজমিতে লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ হত না বর্তমানে সেসব পরিত্যক্ত কৃষি জমিগুলো লবণ মাঠ হয়ে গেছে। আগে কারখানার পরিত্যক্ত পানিতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হত, কিন্তু তা এখন আর হচ্ছে না।
জানা যায়, পটিয়া ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকার এক সময়কার চাষাবাদের অনুপযোগি পরিত্যক্ত এসব জমিতে বর্তমানে ব্যবসায়ীরা লবণ চাষ করে মৌসুমে প্রায় ১০০ একর জমিতে ৮-১০ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা আয় করছেন ব্যবসায়ীরা।
১৯৫২ সালের দিকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকাটি লবণ শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী চানখালী খালকে কেন্দ্র করে ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ পরিশোধনাগার কারখানা গড়ে ওঠে। এসব কারখানায় দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে উৎপাদিত কাঁচা লবণ পরিশোধন করে আয়োডিনযুক্ত লবণে পরিণত করা হয়। পরে তা খাবারের উপযোগি করে বাজারজাত করা হয় সারাদেশে। ইন্দ্রপুুল লবণ শিল্প এলাকায় ৪৪ টি লবণ পরিশোধন কারখানা থাকলেও বর্তমানে চালু রয়েছে ৩০ টি কারখানা। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করছেন। পাশাপাশি লবণের কমিশন এজেন্ট রয়েছে ৩০-৩৫ জন।
সুলতানপুরী সল্টের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক বলেন, সাগরের পানি দিয়ে কক্সবাজারে যে লবণ উৎপাদন হয় তার মধ্যে মহেশখালীর লবণের দাম বেশি। টেকনাফ ও মগনামার লবণের দাম কম। এসব এলাকার মাঠে উৎপাদিত লবণ মানভেদে ৪০-৫০ কেজির বস্তা ৬৩০-৭০০ টাকায় কিনছি আমরা। ক্রাশিংয়ের পর আয়োডিনযুক্ত লবণ ২৫ কেজি প্যাকেট করা কার্টন ৩১০-৩৩০ টাকা বিক্রি করছি। তবে ইন্দ্রপুলের জমিতে যে লবণ হচ্ছে তা খাওয়ার উপযোগি নয়। সেগুলো মাছের খামার, চামড়ার আড়ত, কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।