নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
শামসুদ্দিন আহমদ ষাটের দশকের বিশিষ্ট ছাত্রনেতা। তিনি পটিয়ায় রাজনীতি করলেও চট্টগ্রামের সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। পটিয়া ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার পটিয়া, অগ্নিযুগের বিপ্লবতীর্থ পটিয়া। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকান্ডের স্মৃতি বিজড়িত স্থান পটিয়া; পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেত্রী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্মধন্য পটিয়া। শামসুদ্দিন আহমদ অবিভক্ত পটিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতির অন্যতম পুরোধা, ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষনেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের বিশিষ্ট সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা। তিনি পটিয়ায় স্বাধীনতার পর প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম দিকপাল। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে পটিয়া অঞ্চলে পাকিস্তান সরকারবিরোধী সকল আন্দোলনে ছাত্রসমাজের কান্ডারী ছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর পটিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহব্বায়ক শামশুদ্দিন আহমদ। পটিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। সামশুদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধে প্রথম পটিয়া থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ভারতে ট্রেনিং নিতে যান এবং ট্রেনিং শেষে প্রথম গ্রুপ নিয়ে দেশে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল লড়াই চালিয়ে যান।
শামশুদ্দিন আহমদ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ পটিয়া থানার গোবিন্দরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল মন্নান। তিনি পটিয়া রাহাত আলী হাইস্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষালাভ করেন। এই স্কুলে অধ্যয়নকালে ৬২ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা আন্দোলন আরম্ভ হয়: ১৭ সেপ্টম্বর রাহাত আলী হাইস্কুলে ধর্মঘট ও পটিয়ায় হরতাল পালিত হয়। এই ধর্মঘটের অন্যতম নেতা ছিলেন সামশুদ্দিন; সেদিনই চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদের নেতৃত্বে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। হরতালের কিছুদিন পর চট্টগ্রাম শহর থেকে ছাত্রলীগ নেতা এম এ মান্নান ও আবু ছালেহ পটিয়া যান এবং পটিয়া ডাক বাংলো মাঠে কলেজের ছাত্রদের নিয়ে সভা করেন। এম এ মান্নান পটিয়া কলেজ ও ছাত্রলীগের কমিটি করে দেন। ৬৩ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিনের এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে সে বছর তাঁর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে। সামশুদ্দিন ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এইচএসসি পাস করেন; ডিগ্রিতে ভর্তি হন পটিয়া কলেজেই। চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদকে কলেজ শাখার সভাপতি ও সামশুদ্দিনকে স্কুল শাখার সভাপতি করা হয়েছিলো। কিন্তু পরীক্ষার পূর্বেই আবার কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করার দায়ে বহি®কৃত হন। একই সঙ্গে চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ, শোভনদন্ডির এম এ জাফর ও খরনার এ কে এম মতিন চৌধুরীকেও বহিস্কার করা হয়। তখন ১৯৬৯, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কক্সবাজারে প্রথম সফরে যান। ফেরার পথে পটিয়া কলেজ মাঠে এক বিরাট জনসভায় তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। জনসভায় ভাষণে তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে চার ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে বলেন। সে অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছিলো; কিন্তু সামশুদ্দিন এর পর আবার জড়িয়ে পড়েন নির্বাচনে এবং নির্বাচন শেষ হতে না হতেই একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য স্বাধীনতার পূর্বে পরীক্ষা দিতে পারেননি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস কনে।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিন আহমদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদের নেতৃত্বে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের পক্ষে আহূত হরতালের সমর্থনে মিছিলে যোগদানের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তখন থেকে ৬২’র হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্কুলে গিলে স্কুল ছাত্রদের সংগঠিত করে ক্লাস বর্জনে উদ্বুদ্ধ করে এভাবে প্রায় ১৫/২০ দিনের চলমান আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হয়ে যান এবং চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদের নেতৃত্বে কাজ করতে থাকেন।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম পটিয়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ সভাপতি, কবির আহমদ সাধারণ সম্পাদক এবং এবং সামশুদ্দীন আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে পটিয়া থানা ছাত্রলীগের ২য় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় পটিয়া ক্লাবে। এ সম্মেলনে চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ দ্বিতীয় বারে মত সভাপতি এবং সামশুদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের সমর্থনে প্রথম হরতাল পালিত হয় ৭ জুন। এ আন্দোলনে পটিয়ায় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সামশুদ্দীন আহমদ ও তাঁর সহযোগিরা ঐ আন্দোলনের সর্বপ্রতম ট্রেন সহ সবধরণের যানবাহান বন্ধ এবং স্কুল-কলেজে ক্লাস বন্ধ করাতে সক্ষম হয়। ৬৯’র গণ আন্দোলনে কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক পটিয়ায় প্রত্যেকটা কর্মসূচি যথাযথ ভাবে পালিত হয়। পটিয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গাড়ি-ঘোড়া, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সভাবেশের মাধ্যমে পটিয়াকে তাঁরা উত্তাল করে তোলেন। ৬৯’র হরতালে পুলিশ তৎকালিন সি.ও. অফিসের সম্মুখ থেকে সামশুদ্দীন আহমদে গ্রেফতার করে, এ নিয়ে বিক্ষুদ্ধ জনতা এবং পুলিশের মধ্যে চরম বাক্বিতন্ডা হয়। পরক্ষণেই তৎকালীন ভাসানী ন্যাপ নেতা আবুল মাসুদ চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হলে মারমুখী জনতা তাঁকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। ’৭০-এর এপ্রিলে গোস্তগোলায় শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকে (অন্য দল সহ) হরতাল পালন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম দোহাজারী লাইনে ট্রেন বন্ধ করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তৎকালীন সরকার তাঁকে আইন অমান্যকারী ও নির্বানী বিরোধী, একদফার সমর্থনকারী হিসেবে ইয়াহিয়ার সামরিক আইনে মামলা দেয়। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল ভোটে জয়লাভের পর একই সালের ১৭ ডিসেম্বর তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পটিয়ার সংগ্রামী জনতা এমএনএ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও এমপিএ সুলতান আহমদ কুসুমপুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৭১’র ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ কালো রাত পর্যন্ত সারাদেশের ন্যায় পটিয়ায়ও সারা দেশের ন্যায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত ছিল। এ সময়ে কেন্দ্রেয় নির্দেশ মোতাবেক পটিয়ার সর্বদলীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ চট্টগ্রামে থাকতেন বিধায় শাসমুদ্দীন আহমদকেই সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক করা হয়। ২৩ মার্চ লাহোর প্রস্তাব দিবসে তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরা প্রায় ৪/৫ শ’র মতো বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা তৈরি করে কলেজ গেইট থেকে ইন্দ্রপোল পর্যন্ত সমস্ত দোকান পাটে এমনকি সমগ্র পটিয়ার স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতে উত্তোলনের ব্যবস্থা করেন।
সেদিন পটিয়া কলেজ থেকে মিছিল সহকারে গিয়ে তাঁরা থানা কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়েন। তখন থানা প্রাঙ্গণে যে আম গাছটি ছিল, সেটিতে বাঁশ দিয়ে লাগনো পাকিস্তানী পতাকা তাঁরা নামিয়ে নিতে চাইলে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে, কিন্তু ওসি বেরিয়ে এসে তাদের ঝুঝাবার চেষ্টা করেন এবং পুলিশকে বারণ করেন। ওসির এরূপ নমনীয় মনোভাব দেখে সামশুদ্দীন আহমদ কালবিলম্ব না করে গাছে উঠে পড়েন এবং পাকিস্তানি পতাকাটি নামিয়ে নিজেদের তৈরি পতাকা উঠিয়ে দেন। ওইদিন ইন্দ্রপোল থেকে শুরু করে পুরো পটিয়া ষাটের দশকের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার প্রতি যাদের বিশ্বাস ছিল এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ এই অসযোগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শহরে দোকানপাট-বাড়িঘরে এক টাকার বিনিময়ে পতাকা বিক্রি করা হয়। জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের কাছ থেকে পতাকা সংগ্রহ করে।
এ সময় তাঁর সাথে আন্দোলনের অগ্রভাগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের চৌধুরী সিরাজুল ইসলাম খালেদ, আহমদ নূর, আবু জাফর চৌধুরী, বদিউর রহমান, জহিরুল ইসলাম, শাহজাহান, কবির আহমদ, আবদুল গফুর এম.এ জাফর, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আফজল আহমদ নুরুল আলম (ব্যাংকার), সৈয়দ আহমদ, মেহাামম্দ আলী, জালাল উদ্দিন আহমদ, আবদুল আলীম, মাহাবুবুল আলম তসলিম, এ.কে. এম সামশুল আলম, আবু তাহের, আমির আলী, নুরুল আবছার চৌধুরী, আবদুল মতিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, আবদুল হক, আবু তাহের খান খসরু, মো. ইদ্রিস, নুর মোহাম্মদ, মৃণাল কান্তি বড়–য়া, আবুল বশর, আবদুল জালিল ও আবু ছিদ্দিক চৌধুরী প্রমুখ এবং ছাত্র ইউনিয়নের আবদুল হামিদ, মনোজ সিং হাজারী ও আবছার উদ্দিন সহ আরো অনেকেই।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস : ২৬ মার্চ মধ্য রাত থেকে পাঞ্জানীরা গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ সকালে বেশ কিছু বাঙালি সেনা ও ইপিআর পটিয়া এসে পৌঁছে। মুহূর্তেই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে সারা পটিয়ায়। তাদের একনজর দেখার জন্য হাজার হাজার জনতা ক্যাম্পে চলে আসে। সাথে নিয়ে আসে চাল-ডাল-তেল জীবন্ত মুরগীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জনগণের এ ভালোবাসা অভূতপূর্ব। তখন সামশুদ্দীন আহমদ সহ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের পটিয়া কলেজে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং তাদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে তা রান্নার ব্যবস্থা করে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন স্পটে সরবরাহ করতে থাকেন। এদিকে মেজর জিয়া থানায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, আপনারা বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা মোতাবেক তৈরি থাকেন।” এই বলে তাঁর নিজস্ব জীপ গতিতে করে দক্ষিণ দিকে চলে যান। ২৭ মার্চ সকাল ৮ টার দিকে পুনরায় ফিরে এসে পটিয়া কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। পরে খাওয়া-দাওয়া সেরে একটা দেড়টার দিকে চলে যান করলডেঙ্গা পাহাড়ের দিকে।
এ সময় ওইদিন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ হান্নান, শহর আওয়ামী লীগ সম্পাদক এম এ মান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সার এমএনএ, ডা. মান্নান এমপি, রাউজানের ডা. জাফর, দক্ষিণ মহকুমা সাধারণ সম্পাদক একেএম আবদুল মন্নানসহ আরো কয়েকজন দুইটি গাড়ি করে পটিয়া ক্যাম্পে আসেন। ক্যাম্প পরিদর্শন করে এম এ হান্নান ও এম এ মান্নান শামসুদ্দিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, জিয়া নামে কোনো আর্মি অফিসার এসেছিলেন কিনা। শামসুদ্দিন বলেন তিনি ক্যাম্প থেকে দুপুরে চট্টগ্রামের দিকে চলে গেছেন। যাবার আগে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্বলিত কয়েক হাজার প্রচারপত্র দিয়ে যান। শামসুদ্দিন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে পটিয়া সদরে মাইকিং করে সেগুলো বিলি করেন। এম এ মান্নান তাঁকে যুদ্ধে যেতে আগ্রহীদের তালিকা দিতে বলেন।
(বাকী অংশ আগামী সংখ্যা)
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক
তনি আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ফটিকছড়ির নাজিরহাট হয়ে ভারতে চলে যেতে নির্দেশ দেন। পরে নেতারা খোঁজ নিয়ে বোয়ালখালী করলডেঙ্গা পাহাড়ে পাদদেশে মেজর জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইতোমধ্যে নিরাপদ না হওয়ায় কলেজ থেকে ক্যাম্প আবদুর রহমান গার্লস হাই স্কুলে সরিয়ে নেয়া হয়।
মার্চের ২৯ তারিখ ভারতে ট্রেনিং-এ যাওয়ার জন্য শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে ৭০ জনের একটি দল ট্রাকে করে নাজিরহাটে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
এরপর পরপরই ট্রেনিং এর জন্য ফাইনাল মেসেজ আসলে সামশুদ্দীন আহমদ সহ ৭০ জনের একটি ব্যাচ সর্ব প্রথম ৩১ মার্চ বিকেলে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
তাদের টাকা পয়সার ব্যবস্থা করে দেন তৎকালীন এম এন এ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী। এ ব্যাচটি বোয়ালখালী হয়ে কর্ণফুলী পার হয়ে রাউজানের উপর দিয়ে ফটিকছড়ির নাজিরহাট ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছে এবং রিপোর্ট করে। সেখান থেকে তাঁরা সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোখতার আহমদের সাথে রামপড় ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করেন।
রাঙামাটির তৎকালীন ডিসি ছিলেন এ ক্যাম্পের ইন্চার্জ। তিনি ওখান থেকে প্রথমবারের মতো ১০২ জনকে ভারতের বগাফা বি.এস. এফ ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ের জন্য পাটিয়ে দেন। এতে পটিয়ার ৭০ জন থেকে সামশুদ্দীন সহ ৩৪ জন অংশ গ্রহণের সুযোগ পান। তারা সেখানেই ১৫ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। ২৫ এপ্রিল তাদের ট্রেনিং শেষ হয়। প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তারা আকাশবাণীর খবরে মুজিব নগর সরকার গঠনের খবর শুনতে পান বলে জানান অনেকেই। ট্রেনিং শেষে তারা আবার রামগড় ফিরে আসেন এ সময় তাঁদের সাথে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইউসুফ ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বান, রাউজানের আবদুল্লাহ আল হান্নান ও মির্জা বাবর সহ বিভিন্ন থানার ছাত্র নেতারাও ছিলেন। মুলতঃ এটিই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের চট্টগ্রাম ফেরত ১নং সেক্টরের প্রথম ব্যাচ। ইতিমধ্যে সিলেট থেকে নির্বাচিত এম,এন,এ কর্ণেল আবদুর রব উক্ত ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে তাদের দেখতে পেলে তিনি মেজর জিয়া এবং রাঙামাটির ডি.সিকে বলে যান, ট্রেনিং প্রাপ্ত এসব মুক্তিযোদ্ধাদের স্ব স্ব এলাকায় পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা অতুলনীয় সাহস ও শৌর্য বীর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। পটিয়ার ছাত্র যুবকরা দলে দলে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পটিয়ায় ফিরে এসে গেরিলা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। পটিয়ায় অবস্থান করেও স্থানীয়ভাবে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক গ্রæপ সংগঠিত হয়ে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও পটিয়ার এম.এন.এ. অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী এই দলকে পটিয়া খাদ্য অফিস থেকে চাল ও নগদ টাকা সংগ্রহ করে দেন। ৩০ মার্চ তারা নাজিরহাট থেকে রামগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে গিয়ে দেখেন ডিসি রাঙামাটির তৎকালীন ডিসি এইচ টি ইমাম ক্যাম্পের কাজ পরিচালনা করছেন আর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। রামগড় সীমান্তে খালের ওই পাড়ে ভারতের সাবরুম মহকুমা। এপ্রিলের সম্ভবত ১/২ তারিখ রাতের খাবার শেষে বিএসএফের ৩/৪টি ট্রাক আগরতলা রাজ্যের বগাফা বিএসএফ-এর একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে তাদেরকে নিয়ে যায়। ওই দলে তারা সম্ভবত ১০২ জন ছিলেন। এতে পটিয়ার ৭০জন থেকে শামসুদ্দিনসহ ৩৫জন বগাফা ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।
১৭ এপ্রিল এক ভারতীয় সৈনিক সবাইকে ডেকে নিয়ে তার রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবরে মুজিবনগর সরকার গঠনের খবর শোনান। তারা ১৫ দিন ট্রেনিং নেন। ২৫ এপ্রিল তাদের ট্রেনিং শেষ হয়। ট্রেনিং শেষে ট্রাকে করে তারা পুনরায় সাবরুম এসে পৌঁছেন। সেখান থেকে ফেনী নদী পার হয়ে রামগড় ফিরে আসেন। তারা যখন ফেনী নদী পার হচ্ছিলেন, তখন আরেকটি ব্যাচ ট্রেনিংয়ের জন্য বগাফা যাচ্ছিলো। সে ব্যাচে পটিয়ার হুলাইন ছালেহ-নূর কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরুদ্দিন চৌধুরীও (সাংবাদিক এবং এই নিবন্ধের লেখক) ট্রেনিং নিতে যাচ্ছিলেন বগাফায়। শামসুদ্দিনের সঙ্গে প্রথম ব্যাচেও ট্রেনিং নিয়েছিলেন হুলাইন ছালেহ-নূর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা আসলাম ও রফিক, হুলাইনের ইউসুফ খান এবং মনসার আবদুস সালাম ও ইউসুফ চৌধুরী (আমেরিকায় বসবাসরত)। রামগড়ে মেজর জিয়ার সাথে দেখা হয় শামসুদ্দিনের। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ইউসুফ ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রব্বান, রাউজানের আবদুল্লাহ আল হান্নান ও মির্জা বাবরসহ বিভিন্ন থানার ছাত্র নেতারাও তখন রামগড়ে অবস্থান করছিলেন। শামসুদ্দিনরাই সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দল, যাঁরা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়েছিলেন।
রামগড় ক্যাম্পে ২/৩ দিন বিশ্রাম নিয়ে শামসুদ্দিনের গ্রæপের ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা দু’টি টিমে বিভক্ত হয়ে খাগড়াছড়ি হয়ে পটিয়া চলে আসেন। ১ম টিমের নেতৃত্বে ছিলেন নাজিরহাট কলেজের অধ্যাপক শামসুল ইসলাম (তাঁর বাড়ি পটিয়া থানার করণখাইন) ও ২য় টিমের নেতৃত্বে ছিলাম শামসুদ্দিন আহমদ। তাদের ৩৪ জনকে ৩৪টি বিভিন্ন মডেলের রাইফেল, গুলি, ৩৪টি কাফনের কাপড় ও পথ খরচের জন্য কিছু টাকা দেয়া হয়। তারা বোয়ালখালী এসে জানতে পারেন পটিয়া থানার মোড় ও বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। ওই সময় প্রায় ২০ জনের অধিক নিহত হন। তারা এলাকায় এসে দেখেন পাকিস্তানী পতাকা উড়ছে। ডেঙ্গাপাড়ায় শামসুদ্দিনের এক আত্মীয়ের বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন। পটিয়া এসে দেখেন লোকজন যেন হাওয়া হয়ে গেছে। প্রায় সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। পাক বাহিনী পিটিআই ও শান্তি কমিটির সদস্যরা রাহাত আলী হাই স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। রাজাকার বাহিনী তৈরি হলেও পটিয়া ও সুচক্রদÐী ইউনিয়নে কোন ইউনিফর্মধারী রাজাকার ছিল না। আনসাররা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।
পটিয়ায় গ্রেনেড ফাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অপারেশন শুরু করেন শামশুদ্দিন আহমদের গ্রæপ। এপ্রিলের শেষ দিকে মেট্রিক পরীক্ষা শুরু হয়। শামসুদ্দিনের গ্রæপ মুন্সেফ বাজারে একটি বৈঠকে বসে পরীক্ষা পÐ করার মাধ্যমে প্রথম অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। অপারেশনের জন্য চার জনের একটি গ্রæপ গঠন করা হয়। এই গ্রæপে শামসুদ্দিন ছাড়াও ছিলেন এয়ার ফোর্সের কর্মকর্তা শামসুল আলম (বাহুলী), চৌধুরী মাহবুবুর রহমান ও ডিবির ছেলে জাহাঙ্গীর। শামসুল আলমকে ২/৩টি গ্রেনেড দেওয়া হয়। তারা রাহাত আলী হাইস্কুল গেইটের বিপরীতে রাস্তার ওপাড় থেকে গেটের দিকে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন। তীব্র আওয়াজে উপস্থিত সবাই পালিয়ে যায়। এর পরেও উপস্থিত ছাত্রদের নিয়ে কর্তব্যরত পাকিস্তানি কর্মকর্তারা পরীক্ষা গ্রহণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ডিবির ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। শামসুল আলমকে বাড়িতে না পেয়ে তার বড়ভাই মাহবুবুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে স্বাধীন বাংলা বেতারে দেশবাসীর প্রতি ঘোষণা আসে পাকিস্তান সরকারকে ট্যাক্স বয়কট করার। তা সফল করতে শামসুদ্দিনের গ্রæপ গৈড়লার কমিউনিস্ট নেতা পোস্ট মাস্টার আহমদ হোসেনের বাড়িতে বৈঠক করে পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী তহসিল অফিস জ্বালিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইদ্রিস (মাহাতা), প্রফেসর শামসুল ইসলাম, একেএম আবদুল মতিন চৌধুরী (খরনা), আনোয়ার উদ্দিন (পটিয়া), অনিল লালা (গৈড়লা), আবছার উদ্দিন, মাহফুজুর রহমান খান (হুলাইন) প্রমুখ। উপস্থিতি কম থাকায় পরের বৈঠকে কেলিশহর ভট্টাচার্য হাট তহসিল অফিসে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামসুদ্দিন, আনোয়ার, আবছার, অনিল লালা দ্বিতীয় অপারেশন সফল করেন। এর ৩/৪ দিন পর তাদের ৭/৮ জনের একটি দল পটিয়া তহসিল অফিস জ্বালিয়ে দেয়। পাঞ্জাবিরা অপারেশন করতো দিনে, আর গেরিলারা করত রাতে। পরবর্তীকালে এয়ার ফোর্সের সার্জেন্ট মহি আলম, ক্যাপ্টেন করিম, মহসিন খানসহ অনেকে এসে যুদ্ধে যোগ দিলে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রæপ অনেক বড় হয়ে যায়। বরমার শাহজাহান ইসলামাবাদীর (মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর পুত্র) বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধের ঘাঁটি হলে তারা সেখানে চলে যায়। পাক বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে শামসুদ্দিনরা বুধপুরা চলে যান। খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন করিমের টিমও তাদের সাথে যোগ দেয়। ২০/২৫ জনের মিলিত বাহিনী নিয়ে তারা জিরি মাদ্রাসা অপারেশন করেন। সেখানে নেজামে ইসলাম পার্টির নেতৃত্বে মুজাহিদ বাহিনী সংগঠিত হয়েছিল। তাদের পরাস্ত করে ১৬টি রাইফেল ছিনিয়ে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। আগস্টের দিকে শামসুদ্দিনরা হাইদগাঁও চলে আসেন। সাতগাছিয়া মাদ্রাসায় মুক্তিযোদ্ধদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। পাহাড়ে বুদবুদি ছড়ায় ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে বোয়ালখালী বেঙ্গুরা দেলা মিয়ার বাড়িতে ক্যাপ্টেন করিম গ্রæপের সাথে যৌথভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয়। ২২ সেপ্টেম্বর সুবেদার মেজর টি.এম. আলী গ্রæপের সাথে যৌথভাবে খরণা স্টেশন রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন করা হয়। ওই অপারেশনে ১০/১২ রাজাকার নিহত, ১০/১২টি রাইফেল উদ্ধার ও মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম শহীদ হন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর বাহিনী পটিয়া সদরের বিওসি রোডে রাজাকার অপারেশনে ৩ রাজাকার খতম ও তিনটি রাইফেল উদ্ধার করে। টি.এম আলী গ্রæপের সাথে যৌথভাবে খানমোহনা রাজাকার ক্যাম্প অপারেশনে ৩ রাজাকার নিহত ও ৪টি রাইফেল উদ্ধার হয়। কেলিশহর ভট্টাচার্য হাটে রাজাকার অপারেশনে গাজী আবদুস ছবুর শহীদ হন। এ সময় জেলা বিএলএফ কমান্ডার এসএম ইউসুফের চিঠি পেয়ে অক্টোবরের ২৫/২৬ তারিখ শামসুদ্দিন আসামের ডিমাগিরি যান। ৫ নভেন্বর পার্বত্য রাঙামাটি সীতান্তের জারইলপাড়া বর্ডার ক্যাম্পে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সাথে যৌথ অপারেশনে কয়েকজন পাঞ্জাবি সৈনিক নিহত, বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার ও মুক্তিবাহিনীর একজন শহীদ হন। পার্বত্য চট্টগ্রামের যক্ষা বাজার এলাকায় মিত্রবাহিনীর সাথে যৌথ অপারেশনে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অনেক যোদ্ধা শহীদ হন। রাঙামাটির বরকল থানা ও শুভলং বাজারে তাঁর বাহিনী সাফল্যের সাথে অপারেশন সম্পন্ন করে।
কমান্ডার সামশুদ্দিন আহমদ গ্রæপের উল্লেখযোগ্য মুক্তিযোদ্ধারা হলেন : আনোয়ার উদ্দিন আহমদ, আফসার উদ্দিন আহমদ, আবুল বশর, আবুল কালাম, শহীদ গাজী আবদুস ছবুর, মো. ইসহাক (১), মো. ইসহাক (২), আবদুল মান্নান, শহীদ শাহ আলম, চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, আহমদ ছফা চৌধুরী, আবু তাহের, আমির আলী, আবদুস সোবহান চৌধুরী, আহমদ নূর, এসএম নুর-উল-আলম, আমির হোসেন, একেএম আবদুল মতিন চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া, আবদুল লতিফ, নুরুল আবসার চৌধুরী, আবু জাফর চৌধুরী, আবুল কাসেম, জাহিদুল হকসহ অনেকে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ গঠিত হলে সামশুদ্দিন প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের পর সামশুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়; তিনি ৩ বছর কারাভোগ করেন, জেল থেকে মুক্তি পাবার পর ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৮০ খ্রিস্টাব্দে সম্মেলনে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাকশাল চট্টগ্রাম দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ৮৮ খ্রিস্টাব্দে সভাপতি হন। সামশুদ্দিন ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন; ৯৭ খ্রিস্টাব্দে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলে তিনি আহবায়ক নিযুক্ত হয়ে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত উক্ত দায়িত্ব পালন করেন।