পটিয়া প্রতিনিধি
পটিয়ায় প্রকাশ্যে এক যুবককে তুলে নিয়ে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত গাজী আজগর আলী (৪০) বুধপুরা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবুল কাশেমের ছেলে।
জানা যায়, স্থানীয় যুবক গাজী আজগর আলীকে বুধপুরা বাজার থেকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র ১০-১৫ জনের দল। পরে সাইঁদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে কিচির, রাম দা নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সে চমেক হাসপাতালের ২৬নং অর্থোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি সিএনজি উদ্ধার করেছে।
চমেক হাসপাতাল অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরা জানান, আজগরের দুই হাতে অপারেশন লাগবে। আমরা প্রথমে তার রক্তক্ষরণের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আহত গাজী আজগর আলীর বড়ভাই কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারের বক্করের দোকান হতে আমার ছোট ভাই গাজী মো. আজগর আলীকে তুলে নিয়ে যায় কাসেম চেয়ারম্যানের লোক হামিদ, সোহেল, খোকন, ট্যাটু সোহেল, মিজান, ফাহিম, অভিসহ ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। এসময় তাকে সিএনজি যোগে সাইদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ইলেকট্রনিক সট দেয়, কিরিচ, রাম দা দিয়ে হাতে পায়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী আহমদ বাদি হয়ে গত ২০ আগস্ট ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৯ আগস্ট রাতে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. নুরুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি, ৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে হয় মামলা করেন। এসব মামলায় কাশিয়াইশ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে আটক দেখিয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ২০ আগস্ট আদালতে পাঠানো হলে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ঐ দিন রাতে কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা এলাকার নুর আয়শা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন কাশেম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মামলায় কাশেম চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় প্রায় তিনমাস কারাগারে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসে কাসেম চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। এলাকায় জবর দখল, চাঁদাবাজি, গ্রামের মানুষজনকে তার লোকজন দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে নানা ভাবে হয়রানি করছেন।
স্থানীয় সাদ্দাম হোসেন নামের এক যুবক কাসেম চেয়ারম্যানের চাঁদাবাজি মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হয়ে বলেন, আমি বাদী হয়ে কাসেম চেয়ারম্যানকে আসামি করে পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। তার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করান। এরপর আমি জেলে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন কাসেম চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী, তার ভাই হাসেম মেম্বারসহ বিভিন্ন জন আমার সাথে দেখা করে আমাকে চাপ প্রয়োগ করতেন যেন আমি তার বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিই। আমি কোনভাবেই তার ক‚টকৌশলের কাছে হার মানিনি। আমি যখন জামিনে বের হয়ে আসি তখন আমাকে কাসেম চেয়ারম্যান বলতে তাকে যতদিন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তুলে না নিই ততদিন পর্যন্ত এলাকার কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। সেই জের ধরে আজগর আলীর উপর পরিকল্পিতভাবে তার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, বুধপুরা এলাকার ঘটনায় আহত যুবকের পক্ষ হতে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় নি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।