পটিয়ায় মহাসড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড়

2

পটিয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পটিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। আবার সেই ময়লা আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। এতে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকা। দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এছাড়া মহাসড়কের পথচারী, যানবাহনের যাত্রী, ট্রেনের যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পৌর কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পৌরবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন যুগ ধরে এ অবস্থা চলে আসছে। বর্জ্য বা ময়লার ভাগাড়ে দেওয়া আগুনের ধোঁয়ায় আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আশপাশের অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও হাজারো যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রথম শ্রেণির পটিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন শত শত টন ময়লা আহরণ করে ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের বাহুলী এলাকায়। মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধনও করেছেন। এরপরও পৌরসভা উদাসীন। কর্তৃপক্ষ জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে ময়লার ভাগাড় তৈরি করতে পারেনি।
এদিকে আবর্জনার কারণে শ্রীমাই খালের পানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানি আটকে গিয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় আর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে উঠে।
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের পাশে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকেলে পৌরসভার অর্ধলক্ষ বাসিন্দার ব্যবহৃত ময়লা-আর্বজনা পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা ময়লার গাড়ি নিয়ে এনে ফেলছেন মহাসড়কের পাশে।
পরিচ্ছন্নকর্মীরা বলেন, প্রতিদিন ৯টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির ময়লা এখানে ফেলা হয়। স্থানীয় দোকানপাট ও কারখানার ময়লাগুলোও এখানে ফেলা হয়। আমাদেরকে অফিস থেকে বলা হয়েছে, তাই এখানে ফেলছি।
বাহুলী এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন মেম্বার বলেন, আবর্জনার দুর্গন্ধে চলাফেরা করা যায় না। দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে এই ভাগাড়।
স্থানীয় নুরুল আলম বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এবং মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করার বিষয়ে পৌরবাসী অনেকদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন। এরপরও এ নিয়ে পৌরসভার কোন উদ্যোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক ব্যবসায়ী বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই সব ময়লা বাহুলী এলাকার মহাসড়কের দুইপাশে ফেলছে। এর আশপাশে একাধিক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালেও কোন সুফল মিলছে না।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহণের চালক আবদুর রশিদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আসা-যাওয়ার পথে দেখা যায় সড়কের পাশেই ময়লা-আর্বজনা পড়ে থাকে। দুর্গন্ধে বাসযাত্রীদের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
কাজী সৌরভ নামে পৌরসভার এক বাসিন্দা বলেন, আগুন দিয়ে ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো হচ্ছে। আমরা বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছি না। ধোঁয়া-দুর্গন্ধে বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যাংকার নাজমুল হোসেন রানা নামে পৌরসভার আরেক বাসিন্দা বলেন, মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলবে কেন? তাদের উচিত নিরাপদ স্থানে ময়লা ফেলে পোড়ানো। অথচ তারা যে কাজ করছে, তাতে আমরা রোগাক্রান্ত হচ্ছি।
ভ্যানচালক রতন গাজী বলেন, শুধু ময়লা নয়, বিড়াল মরা, কুকুর মরা এনেও এখানে ফেলা হচ্ছে।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তৈয়ব বলেন, ময়লা-আবর্জনার কারণে মশা-মাছির এত বেশি বেড়েছে যে টিকে থাকা কষ্টকর। ময়লা ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, পটিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিনা অনুমতিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। সড়কের একটা অংশে ময়লা ফেলায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এই বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলা ও উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিলেও সুফল মিলেনি।
পটিয়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এই সমস্যা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। খোঁজ করে জায়গা পেলেও যখন পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের জন্য বলা হয়, তখন কেউ দিতে রাজি হয় না। এ সমস্যা সমাধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে আসছি। নানা জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আশা করছি, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।