পটিয়া প্রতিনিধি
বসতভিটা নিয়ে প্রতিবেশির সঙ্গে বিরোধ আবদুর রহিমের। নিজের পৈত্রিক বসতবাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করতে চান প্রতিবেশী প্রভাবশালী রফিক আহমদ, জমির উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন। এ নিয়ে আশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী আবদুর রহিম। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় সে বিচারকার্য গ্রাম আদালতে না পেয়ে পটিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন রহিম।
এভাবেই আবদুর রহিমের মতো হাজারো ভুক্তভোগী প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শূন্য হয়ে পড়ার কারণে বিচার পাচ্ছে না। তিন মাস হলো একটি তারিখও পড়েনি। এভাবেই গ্রামীণ দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠীর ভোগদখলকৃত জমি, বসতভিটা বেহাত হওয়ার উপক্রম।
স¤প্রতি সময়ে অতিরিক্ত মামলাজট কমাতে গ্রাম আদালত সক্রিয় করার নানা চেষ্টা করা হলেও কাজ হচ্ছে না। গ্রাম আদালত দু’এক জায়গায় সক্রিয় থাকলেও মিলছে না ন্যায়বিচার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেই বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ১১ মাস ধরে চট্টগ্রামের পটিয়ার গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিচারিক আদালতে বাড়ছে মামলায় জট। এতে চরম ক্ষতি ও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে বিচার প্রার্থীরা।
এই দুটি বিষয় একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। গ্রাম আদালতের কার্যকারিতা অনেকাংশে জনপ্রতিনিধিদের উপর নির্ভরশীল।জনপ্রতিনিধিদের সংকট দেখা দিলে গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকা, কাজের অভাব, দুর্নীতি, অদক্ষতা, অনীহা, বা জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। চলমান এ অব্যবস্থাপনায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, যা গ্রাম আদালতের কার্যক্রম প্রভাবিত হচ্ছে। বেড়ে চলছে স্হানীয় পর্যায়ে নানা অপরাধ।
এছাড়া গ্রাম আদালতকে কার্যকর করতে হলে, জনবল সংকট দূর করা, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন বলে এলাকার অভিজ্ঞ মানুষের অভিমত।
জানা যায়, জজ আদালতে মামলার চাপ কমানো ও গ্রামীণ জনপদে ন্যায়বিচারের ভিত শক্তিশালী করতে ২০০৬ সালে আইন করে দেশে গ্রাম আদালত চালু করে সরকার। প্রচলিত বিচারব্যবস্থার ব্যয়বহুল ও দীর্ঘকালীন ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়াই ছিল এ আদালত চালুর উদ্দেশ্য। তবে বাধ্যতামূলক হলেও সময়ের সাথে পটিয়ার বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম নেই। যে কটি ইউনিয়নে ছিল তাও বন্ধ ১১ মাস ধরে সরকার পতনের পর থেকেই। তাছাড়া আরও নানা অভিযোগে আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে লোকজন। গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন স¤প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের এক সভায়।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, পটিয়ার গ্রাম আদালতে কার্যক্রম মুলত দেশের পটপরিবর্তন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর থেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে যেসব ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যানরা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে গ্রাম আদালতের বিষয়ে আরো সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে একজন করে ইউপি সদস্যকে গ্রাম আদালতের মামলা পরিচালনা বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রাম আদালত সক্রিয় করলে গ্রামে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
গ্রাম আদালত সংশ্লিষ্টরা বলেন, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে প্রসার না হওয়া ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকেই তাদের দোসরা তথা জনপ্রতিনিধিরা মামলা হামলা ও জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণ জনগণের মাঝে গ্রাম আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, যেকোন অভিযোগ পেলে বাদিকে আমরা প্রথমে গ্রাম আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিই। কিন্তু অনেকেই সেখানে যেতে চায় না। কারণ বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সস্থানীয় জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে এখন গ্রাম আদালত সক্রিয় না হওয়ায় আদালত ও থানার ওপর মামলার চাপ বাড়ছে।