পটিয়া প্রতিনিধি
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আওয়ামী লীগ পলাতক হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় জামায়াত ইসলামী বেশ উজ্জীবিত। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। আর আওয়ামী লীগের পতন ও হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর অর্ন্তর্বতী সরকার দেশের হাল ধরার পর তাদের নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে।
পটিয়ায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভ‚মিকা রাখা এবং জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও উপস্থিতি দৃশ্যমান ছিল। জামায়াত-শিবির তাদের পুনরুজ্জীবনের সময়টা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে।
তরপর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় পটিয়ায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের দাপুটে উপস্থিতি। পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশের ন্যায় পটিয়ায়ও ঘুরে দলীয় সভা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থিতা ঘোষণা করা সহ জনসংযোগমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা শুরু করছে।
আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গেও এখন যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতি করতে হচ্ছে না তাদের। বরং বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠেছে পটিয়ার রাজনীতির মাঠে ময়দানে।
বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্যে সংস্কার বনাম নির্বাচন, নির্বাচনের সময়সূচি, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, সংবিধান বাতিল বনাম সংশোধন ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে ভিন্নমত ছিল জামায়াতের। নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জামায়াতের অবস্থান চলে এসেছে বিএনপির কাছাকাছিই। মাঠপর্যায়ে কথার যুদ্ধ কিছুটা থামলেও এই দুই দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন বাড়ছে পটিয়ার রাজনীতির মাঠে। এর মধ্যেই জামায়াত পটিয়া আসনে তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে ফেলেছে। তিনি পশ্চিম পটিয়ার ডা. ফরিদুল আলম। ইতোমধ্যে এ জামায়াত নেতা রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়ে সবার নজর কাড়ছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন- নিষিদ্ধের মধ্যেই পুনরুত্থান। অনেকটা যুদ্ধের মাঠে ফিরে পাওয়া প্রাণ। রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মাত্রা। বিগত ১৫ বছরে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন-মামলায় চাপে থাকা দলটি হয়তো ভাবেনি এভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে ফিরতে পারবে। বছরের পর বছর নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা হলেও অভ্যুত্থানের পর বাধাহীন ও রাজনৈতিক প্রাণ ফিরে পেয়েছে জামায়াত।
নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। চলছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। অথচ ৫ মাস আগেও প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ উলটো। অনেকটা আত্মগোপনেই সাংগঠনিক কর্মকাÐ চালাতে হতো দলটির নেতাদের। ছিল নানা ভয় ও আতঙ্ক।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পটিয়া ও পশ্চিম পটিয়ায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা তৃণমূলে ব্যাপকভাবে সভা সমাবেশ করছে। খেলাধুলা, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা আয়োজনে যোগ দিয়েও তারা কুশল বিনিময় করছেন।
উপজেলা জামায়াত সূত্রে জানা যায়, বিগত সতের বছর উপজেলা জামায়াতের কার্যালয় নিয়মিত খোলা যেত না। তখন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এখন কার্যালয় নিয়মিত খোলা হয়। নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
পটিয়া সংসদীয় আসনের জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার লক্ষ্যে জামায়াত ইসলামী পটিয়ার রাজনীতির মাঠে কাজ করছে। টাকা দিয়ে ভোট কেনার রাজনীতি থেকে সরে, বেকারত্ব দূর করে, তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করাই হবে আমার প্রথম কাজ। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন পটিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস তরুণ প্রজন্ম আগামী নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীকে ভোট দিবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ জেলায় জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠ গুছিয়ে এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। সবাই এখন উজ্জীবিত।
জেলা জামায়াত ইসলামীর এ নীতিনির্ধারক আরও বলেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তিত অবস্থায় এখনো তো সেই স্বৈরশাসক নেই। সব দলই অবাধে সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, জনগণের কাছে তার মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার স্বাভাবিক একটা পরিবেশ পেয়েছি। জনগণের কাছে আমরা অবাধে যেতে পারছি, মানুষ আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে। আমাদের এতদিনের তৈরি করা জনশক্তি, কর্মী মাঠে ময়দানে কার্যক্রম করছে। এখন পরিবেশ বাধাহীন হওয়ার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমটা সবার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। উজ্জীবিত হয়েছে আমাদের নেতাকর্মীরা।