কাউছার আলম, পটিয়া
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য দক্ষিণ পটিয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৯১টি পশু। তবে উপজেলার চাহিদা রয়েছে ৭২ হাজার ৭৩৩ টি। সেই হিসাবে দাপ্তরিকভাবে পশু উদ্বৃত্ত থাকবে আরও ৬ হাজার ৫৮টি। মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির পশুর হিসাব-নিকাশ। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় এ উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন পটিয়া উপজেলার খামারিরা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ব্যস্ততা।
ইতোমধ্যে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য পটিয়ায় এবার ৮টি অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সফর আলী মুন্সির হাট, পুরাতন থানার হাট, অলির হাট, মনসার টেক, শরৎ মহাজন হাট, আমজুর হাট, শান্তির হাট ও কমলমুন্সির হাট।
পটিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত গবাদিপশুর খামারের সংখ্যা ৩০১টি। তাদের মধ্যে গরুর খামার ২৫৮টি, মহিষের খামার ১৭টি, ছাগলের খামার ২১টি, ভেড়ার খামার ৫টি। এসব খামারে উৎপাদিত পশুর মধ্যে গরু হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ১৮৮ টি, মহিষ ৭ হাজার ৩৫০টি, ছাগল ২৩ হাজার ৫৫৩টি, ভেড়া ১০ হাজার ৪১২টি।
তবে খামারিরা বলছেন, পশুর খাদ্য ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। তাই এবার ভালো দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
খামারি ইসমাইল হোসেন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করে থাকি। এবার শতাধিক পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুতি আছে। পশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। তবে দাম ভালো পেলে লোকসান সামাল দেওয়া যাবে। আরেক খামারি ইস্কান্দার বলেন, আমরা নিজেরা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে পশু প্রস্তত করেছি। তবে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ও খাদ্য কিনতে খরচ বেড়ে গেছে। বিক্রির ওপরই নির্ভর করছে লাভ-লোকসান। যদি ভালো দাম পাই, তাহলে টিকে থাকতে পারব।
এদিকে খাদ্যের দাম বেশি, খড়ের সংকট এবং শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পটিয়ার খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। খামার সম্প্রসারণে সরকারি প্রণোদনা এখন সময়ের দাবি।
তবে এবারও খামারিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সীমান্তবর্তী জেলা দিয়ে চোরাপথে ভারতীয় ও মিয়ানমারের গরুর আমদানি ঠেকানো না গেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, কোরবানির পশু প্রস্তুতের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবাবধান করেছি। খামারিদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। পশুগুলো প্রাকৃতিক খাদ্যে বড় হয়েছে। চাহিদার তুলনায় এবারও উদ্বৃত্ত আছে কোরবানির পশু। খামারি ও আমাদের কর্মকর্তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। যদি বিশেষ পরিচর্যার মাধ্যমে পটিয়ায় গরু মোটা-তাজাকরণের খামার তৈরি করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন মাংসের ঘাটতি পূরণ হবে, তেমনি বেকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশুকে স্টেরয়েড হরমোন ও কেমিক্যাল না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছি আমরা। গবাদিপশুকে পোলট্রি ফিড বা বয়লার ফিড খাওয়ানো যাবে না। গরুর পরিচর্যায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট হাটের বাইরে এবার কোরবানির ঈদে রাস্তা বন্ধ করে পশুর হাট স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এবার পটিয়ায় ৬ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃত্ত পশু রয়েছে। উদ্বৃত্ত পশু আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। উদ্বৃত্ত পশু সড়কপথে জেলা কিংবা নিকটস্থ অন্যান্য উপজেলা শহরে নিয়ে বিক্রয় করারও সুযোগ রয়েছে খামারিদের।
উপজেলাজুড়ে কোরবানির হাট ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন। পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, পশুর হাটগুলোতে আর্থিক লেনদেন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি টহল টিমও কাজ করবে।