নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
ছিলেন দুই নেত্রী- শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা ছাত্র বিদ্রোহে দেশছাড়া, খালেদা জিয়াও বিদেশে যাওয়ার কথা চিকিৎিসার জন্য, সম্ভবত সব মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিদেশে যাবেন না বলে ঠিক করেছেন। ফলে আলোচনা চলছে এখন তারেক রহমানকে নিয়ে। শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকলেও ভার্চুয়ালি তিনি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, টেলিভিশনের পর্দায় যখন তখন তাঁরই ছবি ভেসে উঠছে। একটি বছরের অন্তিম সময়ে তারেক রহমানই সর্বাধিক আলোচিত চরিত্র হয়ে উঠেছেন। টাইম ম্যাগাজিনের মতো বাংলাদেশে বিদায়ী বছরের শ্রেষ্ঠ আলোচিত চরিত্র ‘ম্যান অব দ্যা ইয়ার’-এর খেতাব নির্ঘাৎ তারেক রহমানের শিরেই শোভা পাবে।
সব হলো, শেখ হাসিনা পদচ্যুত এবং দেশছাড়া, খালেদা জিয়া চাইলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন কিন্তু তিনি যাননি। তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়ার প্রায় সব মামলা যেটা কোর্টে উঠছে, সেটাই খালাস হয়ে যাচ্ছে। এমনি করে প্রায় সব মামলার ঝামেলা থেকে তারা নিষ্কৃতি পেয়ে যাচ্ছেন। সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন খালেদা জিয়া এবং তাঁর সন্তান তারেক রহমান বিশাল জলসমুদ্রের সম্মুখে মঞ্চোপরি আরোহন করে মুক্ত ঢাকার বাতাসে মুক্তির দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলবেন-প্রিয় দেশবাসী বা ভাইয়েরা আমার বোনেরা আমার।
ছাত্র বিদ্রোহের নানা উদ্দেশ্যের কথা বলা হলেও বিএনপিই প্রধান ইস্যু। বিএনপি অনেকদিন যুৎ করে রাজনীতি করতে পারেনিবা করতে দেয়া হয়নি তাদের। এখন যে অবস্থা, তাতে এক পা এগোলেই তো গণভবন। হায় হায় ! গণভবন তো এখন জুলাই শহীদ জাদুঘর। শেখ হাসিনা ছিলেন, শুধু সে কারণে তাকে ভেঙেচুরে ঢুকে সব লুট করে নিয়ে গেল কারা? কিন্তু গণবভন তো শেখ হাসিনার পৈত্রিক বাসভবন নয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন। এই কথাটা দেশে এত বুদ্ধিজীবী, এত অর্থনীতিবিদ, এত গবেষক, এত শিক্ষাবিদ এবং এত মিডিয়া-কেউ কখনো এ কথাটা বললেন না যে, গণভবন সরকারি সম্পত্তি, প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল রেসিডেন্স। বেগম জিয়াও যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, গণভবনেই ছিলেন, তাহলে গণভবন ধ্বংস করে শেখ হাসিনার কোন ক্ষতি তো করা গেল না, উল্টো রাষ্ট্রেরই ক্ষতি হয়ে গেল। এখন আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তাদের জন্য আবার বাসভবন খুঁজতে হবে।
বিএনপি গত চারটি নির্বাচনে কোনোটিই ভালো করে করতে পারেনি। কোন নির্বাচন (২০১৪-২০২৩) বিএনপি বর্জন করেছে। লেভেল প্লেয়িং ফিন্ডের অভাব তারা প্রত্যেকটিতেই অনুভব করেছে। ধারণা করা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য অবাধ নির্বাচন হতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ একাক্রমে চার টার্ম ক্ষমতা ধরে রেখেছিলো। এটা রাজনৈতিক ধারা বা নির্বাচন ঐতিহ্যের বিপরীত। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছর, জিয়া পাঁচ বছর, এরশাদ প্রায় দশ বছর, ২০০৮-এর পূর্বে হাসিনা ও খালেদা দুই টার্ম করে প্রত্যেকে দশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। বিদেশেও বোধ হয় একনায়ক ছাড়া কোন দেশের কোন শাসকই একনাগাড়ে চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। ভারতে ইন্দিরা গান্ধী সর্বোচ্চ তিন টার্ম বা পনের বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা চার টার্ম না থাকলেও পারতেন। চার টার্ম থাকাটা তাঁর ভুল হয়েছে। এই ভুলের মাশুল তাঁর বিয়োগান্তক পরিণতি। তাঁর ভুলের জন্যই হলো জুলাই অভ্যুত্থান। তিনি তিন টার্মের পর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে চলে আসলে হয়তো জুলাই অভ্যুত্থান হতো না।
জুলাই অভ্যুত্থানের পেছনে সুপ্ত বা প্রকাশ্য যত কারণই সক্রিয় থাকুক না কেন, নির্বাচনই হচ্ছে প্রধান কারণ। সেজন্য ইসিও গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে সংস্কার। রোগ হচ্ছে নির্বাচন, সংস্কার উপসর্গ; নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য যদি সংস্কারের মুলা ঝুলানো হয়ে থাকে, সেটা দিয়ে বেশিক্ষণ নির্বাচনকে আটকে রাখা যাবে না। কোন লুকোচাপা না করে বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, তাঁরা চান ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন হোক। সুতরাং নির্বাচন না হয়ে যায় না। নির্বাচনের পূর্বে সংস্কার বা এ জাতীয় উটকো ঝামেলা যতগুলি দেখা যাচ্ছে, সেগুলি এনজিও এবং সুশীল সমাজের প্রেসক্রিপশন। এক এগারো থেকে সুশীল সমাজের বাড়বাড়ন্ত। নির্বাচনী রাজনীতি যতক্ষণ আরম্ভ না হবে, ততক্ষণ উটকো ঝামেলা বাড়তেই থাকবে। কারণ অন্য সময়ে সিভিল সমাজের তো কোন পাত্তা থাকে না। অর্থাৎ মাঠে যতক্ষণ ব্যাট বলের খেলা না হবে, ততক্ষণ সাইড লাইনে সখের প্লেয়ারদের নেট প্র্যাকটিস চলতেই থাকবে। এখন বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে মূল প্লেয়ারদের আগমনের সময় হয়েছে। সুশীলদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন বা প্রস্থানের সময়। শীতের আগমনে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিরা যেমন ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশের হাওর-বাওর ও বিলে এসে বসে, তেমনি আমাদের চট্টগ্রামে রাজনীতির মুক্ত বাতাসে নির্বাচনের মৌসুমী পাখিরা মাঠে-ময়দানে দেখা দিতে শুরু করেছে। নোমান ভাইও দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে সেদিন ঘুরে গেলেন তাঁর জন্মধন্য চট্টগ্রাম থেকে। বহু বছর পর সদা হাসিমুখ নোমান ভাইয়ের সুন্দর কণ্ঠ নিঃসৃত চমৎকার বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে চট্টগ্রামবাসীর। খসরু ভাই তাঁর আগেই এসেছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই আসেন। গত কুড়ি বছরে বিএনপি’র আবিষ্কার আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম ভিত্তিক রাজনীতিবিদ, এখন জাতীয় নেতা। আগে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক বা সভাপতি, এখন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য।
আবদুল্লাহ আল নোমান দীর্ঘদিনের অসুস্থ অবস্থা কাটিয়ে উঠে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন। যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনী মাঠে না থাকে (না থাকার সম্ভবনাই অত্যধিক) তাহলে জামায়াত বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে আবিভর্‚ত হবে। চট্টগ্রামে আগের নেটওয়ার্কি নেই। দলের সিনিয়র নেতা বদিউল আলম, মওলানা শামসুদ্দীন, মওলানা মোমিনুল হক চৌধুরী পরলোক; অধ্যক্ষ মওলানা আবু তাহের বেঁচে হয়তো বেঁচে আছেন, কিন্তু তিনি কোথায় আছেন তা আমার জানা নেই। এ অবস্থায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী যুদ্ধে জামায়াতের সেনাপতি তিনজনÑশাহজাহান চৌধুরী, মওলানা শামসুল ইসলাম এবং প্রবীণ সাংবাদিক ও কর্ণফুলী সম্পাদক আলহাজ আফছারউদ্দিন চৌধুরী। আফছার ভাই পাকিস্তান থেকে ছাত্র রাজনীতি করে আসছেন। প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতা নওশা মিয়া তাঁর পিতা। এ দিক থেকে বলা যায় আফছার ভাই একজন সদ্বংশীয় পুরুষ। তিনি জামায়াতের নায়েবে আমীর ছিলেন। দলের সিদ্ধান্তেই হয়তো তিনি পার্টি মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদনা দায়িত্ব পালন করছেন। আফছার ভাইয়ের বাড়ি রাউজান, সেখান থেকে অথবা শহরের কোতোয়ালী আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। খসরু ভাই কাট্টলীর প্রাচীন অভিজাত বংশ হাশেম নাজিরের পরিবারের অধস্তন পুরুষ। তাঁর পিতা আলহাজ মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে শেরে বাংলার কে এস পি’র মনোনয়নে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে এমএলএ নির্বাচিত হন। তাঁকে মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। তিনি প্রথমে গণ-যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক এই রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াও আমীর খসরু নিজেও ২০০১ খ্রিস্টাব্দে বিএনপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উক্ত দায়িত্ব পালন করেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপর্যুপরি তিনবার চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এবং ফেডারেশন অফ সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জের প্রথম সভাপতি।
আগামী নির্বাচনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ আবদুল্লাহ আল নোমান থাকলেও তিনি বয়সের কারণে আগের গতিতে হয়তো কাজ করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আমীর খসরুকেই দলকে নির্বাচনী যুদ্ধে জেতানোর জন্য মুখ্যভ‚মিকা পালন করতে হবে।
আবদুল্লাহ আল নোমান পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সকল মহলের শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম শহর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১-এর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তাঁকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এবং ২০০১ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তাঁকে খাদ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস-চেয়ারম্যান।
নোমান ভাই ষাটের দশক থেকে রাজনীতি করে আসছেন। তিনি ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১’এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রæপ) সভাপতি ছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি মাদারবাড়ি একটি ব্যাংকের গুদাম থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন এবং বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য বালুছড়া বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ থেকে এস্ট নোমান ভাইয়ের পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
জনাব নোমান ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে জেলা কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে থেকে সংগঠনকে সংগঠিত ও নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম পরিষদÑএর নেতৃত্ব দেন।পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের পক্ষ থেকে গঠিত ‘সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি’ কমিটির নেতা হিসাবে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন। তিনি ছাত্রদের নিয়ে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করেন। ঐ সময় মোমিন রোডে হরিখোলা মাঠে ত্রাণ কমিটির অফিস ছিল। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে থার্ড ডিভিশন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকালে মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভ করেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের ১১ দফার মাধ্যমে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানকে চট্টগ্রামে সংগঠিত করতে তিনি অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। ৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে তিনি অন্যতম আহবায়ক নিযুক্ত হন। অপর তিন আহবায়ক ছিলেন আবু তাহের মাসুদ, সৈয়দ শামসুল আলম ও মোখতার আহমদ। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের লক্ষে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের অভিযোগে তাঁর ওপর হুলিয়া জারি হয়। তিনি হুলিয়া মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী বক্তব্য রাখায় ১৯৭০ এর ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক আদালত রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত করে ৭ বছর কারাদন্ড, ১০ বেত্রাঘাত ও সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার রায় প্রদান করে।১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের ওপর দিয়ে প্রলয়ংকরি হারিকেন ও জলোচ্ছ¡াস প্রবাহিত হলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘূর্ণিদুর্গতদের সাহায্যার্থে চট্টগ্রামে গঠিত চট্টগ্রাম ‘নাগরিক রিলিফ কমিটি’ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি বিশিষ্ট সংগঠক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
আবদুল্লাহ আল নোমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক হিসাবে কাজ করেন এবং ভারতে গমন করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১ মে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের পর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ সময় তারা একটি লিফলেটও প্রকাশ করেন। যার বক্তব্য ছিলো মোটামুটি এরকম : ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। আওয়ামী লীগ আপোষ করতে চায়।’ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যখন ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনায় বসে আপোষের পথে সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে ব্যস্ত, তখন চট্টগ্রামে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের রাউজান থানার গহিরায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। রাউজান কলেজ মাঠ ও ডাবুয়ায় সভা করে জনসাধারণকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তার আগে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা সিটি কলেজের পাশে অগ্রণী ব্যাংক খুলে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালান। এসময় সিটি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার মুখে সব অস্ত্র আনা সম্ভব হয়নি। কিছু রাইফেল ও বন্দুক নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা রাউজান চলে যান। এ পর্যায়ে কোন এক সময় চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের মরিস মাইনর গাড়ি নিয়ে কাজী জাফর চট্টগ্রামে আসেন। সেই গাড়িটি ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা সশস্ত্র প্রস্তুতির কাজে ব্যবহার করেন। অস্ত্রের পাশাপাশি বিস্ফোরক সংগ্রহের চেষ্টাও চলে। প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজের ল্যাবরেটরি থেকে কেমিক্যালস সংগ্রহ করা হয়। এই রাসায়নিক সামগ্রী জহির রায়হানের পূর্বোক্ত গাড়িতে করে গহিরা নিয়ে যাওয়া হয়। কেমিক্যালসের জন্য নতুন পাড়া এলাকায় অবস্থিত বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিআরআইএস) রসায়নাগারের পরিচালকের সাথেও দেখা করেন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা। অস্ত্র বানাতে ওয়েল্ডিং মেশিন আনার জন্য তাঁরা চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিল-এ গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এত ভারি ছিল যে বয়ে আনা সম্ভব হয়নি। চন্দ্রঘোনা থেকে কাপ্তাই রোড দিয়ে রাউজান ফিরে আসার পথে পাহাড়তলীতে জনাব নোমানসহ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের বহনকারি গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে জনাব নোমান আহত হন।
যাই হোক, সংগৃহীত বিস্ফোরক দিয়ে সদরঘাট দাউদ কর্পোরেশনের অফিস ও আমিন গ্রæপের অফিসে প্রতীকী বোমা হামলা চালানো হয়। ২৩ মার্চ চেরাগী পাহাড়ে বোমা হামলা করে পালানোর সময় ছাত্রনেতা ওসমান গণি চৌধুরী ও সাদেক সাইফুর রহমান (স্বপন) কোনোরকমে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হন।
এদিকে দেশে তখন তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে মানবেতিহাসের ঘৃণ্যতম ও নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার প্রায় সমস্ত নেতা-কর্মী রাউজানে জড়ো হন। তাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ জালাল, নুরুল হুদা, মোজাম্মেল হক, ওসমান গণি চৌধুরী, মৃদুল গুহ, নাজিমউদ্দিন প্রমুখ। এমনি পরিস্থিতিতে কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের পুত্র চিত্ত সিংহ, যিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তিনি কলকাতার একজন সাংবাদিকসহ কুন্ডেশ্বরীতে ফিরে আসেন। কুন্ডেশ্বরীতে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ক্র্যাকডাউনের পর তারা ভারতে চলে যান। জনাব নোমানের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপিএ আবদুল্লাহ আল হারুনও চিত্ত সিংহকে নিয়ে রামগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দেন। তিনি পরে আবার ফিরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে ত্রিপুরায় যান। তারা আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অপর শীর্ষ নেতা এম এ হান্নান এবং বাঁশখালীর খান সাহেব রফিক আহমদ চৌধুরীর পুত্র ক্রীড়াবিদ ফরহাদও এ সময় ক’দিন জনাব নোমানের গহিরার বাড়িতে ছিলেন। ফরহাদ ছিলেন আবদুল্লাহ-আল নোমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফরহাদ একদিন তাঁর মাকে দেখতে যাবার কথা বলে বাঁশখালীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। নোমান, এম এ হান্নানকে নিয়ে রামগড় যাবার উদ্দেশে নানুপুরে যান। কিন্তু তারা মির্জা মনসুরের বাড়ি থেকে গহিরায় ফিরে আসেন এবং দেখতে পান ফরহাদ বাঁশখালী যাননি, শুয়ে আছেন নোমানের বাড়িতে। পরদিন তাকে নিয়ে নোমান পাহাড়তলী দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার করে বোয়ালখালী পাঠিয়ে দেন, যাতে তিনি বাঁশখালী যেতে পারেন তাঁর মাকে দেখতে। ফরহাদ আর ফিরে আসেননি। স্বাধীনতার পর খবর পাওয়া যায়, তিনি কক্সবাজার গিয়ে শহীদ হয়ে যান।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে আবদুল্লাহ আল নোমান ভারতে যান। ইতিমধ্যে ভারত থেকে তাঁর বড় ভাই আবদুল্লাহ-আল হারুন বারবার তাঁকে খবর পাঠাচ্ছিলেন তাঁকে সীমান্ত পাড়ি দেবার জন্য। তাঁর সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকায় জনাব নোমান বড় ভাইয়ের কথায় হুট করে ভারতে যাওয়া সমীচীন মনে করেননি। তাঁর পার্টি চ্যানেলে যোগাযোগ হওয়ার পর জনাব নোমান ভারতে যান। সেখানে গিয়ে শুনতে পান কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি নামে একটি দল গড়েছেন কাজী জাফর আহমদরা। মশিউর রহমানও একদিন ভারতে গিয়ে বামপন্থীদের করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি সভা আহবান করেন। কিন্তু তার আগেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ধরে পুশ ব্যাক করে দেয়। জনাব নোমান কুমিল্লা সীমান্তের নিকটবর্তী একটি স্থানে সিপিএম-এর সহযোগিতায় বামপন্থীদের জন্য খোলা একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে কাজী জাফরের সাথে দেখা করেন। তাঁর সাথে আলোচনার পর জনাব নোমানকে ইস্টার্ন সেক্টরের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্টার্ন কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাশেদ খান মেননের বড় ভাই সাদেক খান ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদের বন্ধু। যেহেতু আওয়ামী লীগ বামপন্থীদের প্রতি সন্দেহবশত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে চাইতো না, তাই সাদেক খানের মাধ্যমে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় এবং সহযোগিতা চাওয়া হয়। কলকাতায় ঐ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মেজর জিয়াউর রহমানের সাথেও বামপন্থীদের বৈঠক হয়। নোমানও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তখন থেকে জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। জিয়া তাদেরকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন। তখন তিনি এরকম একটি ইঙ্গিত দেন যে, এই যুদ্ধ শেষ যুদ্ধ নয়। পরে আরো যুদ্ধ করতে হতে পারে এবং সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন ও অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে মওলানা ভাসানী কর্তৃক আহূত চট্টগ্রামে ‘ভুখা মিছিল ও ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। মওলানা ভাসানীর পক্ষে সরকারের নিকট ভাসানী ন্যাপ-এর চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি স্মারকলিপি পেশ করেন।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মেজর জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করলে আবদুল্লাহ আল নোমান তার কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য হন। একই বছর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করলে জনাব নোমান ঐ দলেরও কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। জিয়াউর রহমান পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি গঠন করলে তিনি তার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংগঠনিক কমিটির সভাপতিও নিযুক্ত হন।
চট্টগ্রামে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসতে পারবে না। তদুপরি আওয়ামী লীগের যারা সিনিয়র নেতা যেমন-মানিক চৌধুরী, মান্নান ভাই, সিরাজ মিয়া, কফিল ভাই, বাবু ভাই, কায়সার ভাই, ওহাব মিয়া, মোখতার ভাই, আশরাফ খান, এসএম ইউসুফ, ইদরিস আলম, শহীদ মৌলভী সৈয়দ, মহিউদ্দিন ভাই, সুলতান উল কবির চৌধুরী-এসব নেতারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন। এমএ আজিজ স্বাধীনতার পূর্বে এবং জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন। এসব নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিতে রাজনীতিতে যে শূন্যতা যে অনুভর্‚ত হবে, সে শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে। বিশেষ করে নোমান ভাই ও খসরু ভাইকে। বিএনপির ঘরেও মৃত্যুর কালো ছায়া পড়েছে। জহির উদ্দিন খান, ব্যারিস্টার সোলতান ও জামাল উদ্দিন সাহেব নেই। কর্নেল অলি সাহেব বিএনপিতে ছিলেন, কিন্তু তিনি বেরিয়ে গিয়ে আলাদা দল করেছেন। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন সাহেব বেঁচে আছেন, কিন্তু তিনি চট্টগ্রামে নেই। দলীয় কর্মকান্ডের সাথেও তাঁর কোন সংশ্রব নেই। মোর্শেদ খান ও মীর নাছির উদ্দিন অসুস্থ, তাঁদেরকে দিয়ে দলের আর কোন কাজ হবে কি না বলা মুস্কিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, অধ্যাপক আনোয়ারুল হক কাদেরী, এডভোকেট কবির চৌধুরী, আহমদ খলিল খান, দস্তগীর চৌধুরী-এসব নামীদামী বিএনপি নেতারা আর এই দুনিয়াতে নেই। একরামুল করিমকেও দেখছি না। তিনি কি করছেন জানি না। তাদের অভাব যাতে বিএনপির কর্মকাÐে প্রতিফলিত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখা বর্তমানে যারা বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদেরই দায়িত্ব।
নোমান-খসরু : একবৃন্তে দুটি ফুল
চট্টগ্রামে বিএনপির এই সময়ের দু’কান্ডারী আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যেন এক বৃন্তের দুটি ফুল। পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এমএ আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরীকে বলা হতো ‘একবৃন্তে দুটি ফুল’। তাঁদের মেন্টাল মেক-আপ এক নয়। মানসিকতায়ও তারা এক নন। তাঁদের জীবন ও জগতকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। আবদুল্লাহ আল নোমান লেফ্ট-মাইন্ডেড, তাঁর বামপন্থী রাজনীতির একটি ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আমীর খসরু বাম ঘরানার মানুষ নন, তাঁর পিতা ধনী ছিলেন, তিনিও ধনী। তবে চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় খসরু ভাই ছাত্রলীগ করতেন। তাঁর বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী মাহমুদও চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন। তিনি অনেকদিন থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। আমীর খসরু শুধু চট্টগ্রাম বিএনপি নয় কেন্দ্রীয় বিএনপিরও অন্যতম কান্ডারী, নীতিনির্ধারক। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত মানুষ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নজরুল ইসলাম খান ও ড. মঈন খান-এঁদের পরেই বিএনপিতে তাঁর স্থান। হয়তো মির্জা ফখরুলের পরেই তাঁর স্থান। খসরু ভাই শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র-নম্র এবং পরিশীলিত মানুষ। অমায়িক মানুষটির আচার-ব্যবহারে পারিবারিক ও বংশগত আভিজাত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
নোমান ভাইও রাউজানের একটি শিক্ষিত, আলোকিত ও অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতামহ আবদুল লতিফ মাস্টার তাঁর বাড়িতে একটি পাঠশালা খুলে গহিরা ও আশেপাশে গ্রামগুলিতে শিক্ষার আলো জড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর পিতা আহমদ কবীর চৌধুরী রাউজান স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন রাউজান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। হারুন ভাই ৭০ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিক নির্বাচনে রাউজান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নোমান ভাইয়ের চাচা আহমদ সাগীর চৌধুরী ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আলীগড় ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার শ্বশুর সে সময়ের চট্ট্গ্রামের শ্রেষ্ঠ ধনী ও অভিজাত পুরুষ শেখ রফিউদ্দিন আহমদ সিদ্দিকী চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আহমদ সাগীর চৌধুরী মুসলিম লীগ করলেও প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নোমান ভাইয়ের ছোট চাচা লুৎফে আহমদ চৌধুরী ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের আহবায়ক ছিলেন।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক