সাইনবোর্ডে সারাদিন রং তুলির আচঁড় ও পত্রিকার এজেন্টের কাজঃ। হকারদের মাঝে পত্রিকা বন্টন করে শত ব্যস্ততম সময়ের মাঝে এশারের নামাজ আদায়। তারপর দোকানে এসে ক্লান্ত দেহটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সারাদিনের হিসাবটা মনে মনে মিলাতে গিয়ে কখন জানি নিজের অজান্তে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিলাম। চোখে একটু আধটু ঘুম পাচ্ছে এমন সময় আমার ছোটবেলার খেলার সাথী ছাবের এসে পেছন থেকে ঘাড় ধরে নাড়া দেয়? তার আচমকা ডাক শুনে ঘুম ভেঙ্গে তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে তার দিকে একপলক তাকাতে সে বলে উঠল ভয় পেয়েছিস? চল আজ রাতে আমার শাশুড় বাড়ী থেকে বেড়ায়ে আসি। আমি বললাম আজ থাক আরেকদিন যাব। না আজকেই যেতে হবে; আমি তাদের কথা দিয়েছি তোকে নিয়ে যাব বলে।
তাকে শতবারণ করা সত্বেও সে নাছোড়বান্দা তার আবদার রাখতে গিয়ে রাজি হলাম সময় তখন রাত ৮.৪০ মিনিট। সাবের বলল চল্ তাহলে একটু হালকা নাস্তা করে নিই। এই বলে পাশের চায়ের দোকানে আনারকলি বিস্কুট দিয়ে চা খেয়ে রওয়ানা হলাম বাস স্টেশনের দিকে। স্টেশনে পৌঁছে অনেকক্ষন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হওয়ার উপক্রম, একটি গাড়ীরও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে বিরক্তিবোধ হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত একটি কাঠ বড়ির টেক্সি পেলাম সেটি চলার সময় বিকট শব্দে মানুষের ঘুম ভেঙ্গে যায়! আমরা দুইজন ড্রাইভারের দুইপার্শ্বে বসলাম। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোঁকার আওয়াজে মনে হচ্ছে নিঝুম নিশি রাত হয়ে গেছে। ড্রাইভারের সিগারেটের ধোঁয়ায় চোখ-মুখ ধরে যাচ্ছে মনে মনে খুব বিরক্তবোধ করলেও কিছু বলতে পারছিনা। পথ শেষ গন্তব্য স্থলে পৌঁছা মাত্র ছাবের গাড়ীর ভাড়া দিয়ে আমার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল চেপে ধরে হাটা শুরু করল। কিছুক্ষণ হাটার পর আমরা বৈলুলী ঘাট ঘরে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান থেকে সোজা শঙ্খনদীর পাড় দিয়ে ভাঙ্গা-চোরা রাস্তায় কিছুদুর যেতে সামনে আরেকটি শাখা নদী। পার হওয়ার জন্য ছোট্ট একটি ডিঙ্গি নৌকা যা রশির সাহায্যে পার হতে হয়। ঘাট পার হয়ে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার থেকে আরেকটু দক্ষিনে শঙ্খ নদী বঙ্গোপসাগরের মিলিু মোহনা কুহেলিকাময় দুর থেকে দেখা যাচ্ছে মিটিমিটি আলো – জেলেদের মাছ ধরার নৌকা মাঝিদের হু-করে মাঝে মাঝে একটি শব্দ শোনা যায়। নদীর পাড় বেয়ে হাটতে চোখে পড়ে কাঁশফুল গাছের ঝোপ ঝাড়ের মাঝে ছোট ছোট কাঁশফুলের কলি। সবেমাত্র শরৎ আগমনে একটু একটু শীতের চাদর মেলে ধরছে। মেটো রাস্তা দুর্বাঘাসের উপর পরা শিশির ঝরা পিচ্ছিল পথে একজন অন্যজনের হাত ধরে হাটতে লাগলাম। মাঝে মাঝে হুক্কা হুয়া করে শিয়ালের ডাক শুনে গা শিউরে উঠে। অনেকক্ষণ হাটার পর দ্বীপ চরতী তার শশুড় বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম।
পৌঁছামাত্র ছাবের বিছক্ষণতার সাথে আমাকে একা রেখে তার আসল শশুরবাড়ীতে চলে গেল। আমি একা হয়ে গেলাম। যাদের বাড়ীর সামনে আমাকে দাঁড় করিয়েছিল। সেইটা হচ্ছে স্বনামধন্য সিরাজ মেম্বারের বাড়ী। কিছু ছেলে মেয়ে এসে আমাকে তাদের বাড়ীতে সাদর আমন্ত্রন জানিয়ে সঙ্গে নিয়ে গেল। বাড়ীর আঙ্গিনায় প্রবেশ করার সময় গাছে থোকা থোকা শোভা পাচেছ কাজী পেয়ারা ও হাসঁনাহেনা ফুলের সুগন্ধে চারপাশ মধুর সুভাষ ছড়িয়ে পড়েছে তার বিমোহিত গন্ধে মনে একটু প্রশান্তির ছোঁয়ায় দোলা দিচ্ছে। এমন নৈসর্গিক মুহ‚র্তে নিয়ে গেল তাদের নুুন বাড়ীতে। বাড়ির রুমগুলো চারিদিকে কিছুটা অগোছালো ও এলোমেলো জিনিসপত্র। সামনের ডাইনিং রুমে আমাকে বসতে দেয়া হলো। বিশাল এক ডাইনিং টেবিল মুহ‚র্তের মধ্যে ৪০ আইটেমের রকমারি খাবারে টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে। আমার কিছুটা লজ্জাবোধ করলেও পেটুক টাইপের লোক তাই ভালভাবে উদরপুর্তি করলাম। পার্শ্বে পিছবোর্ডের পার্টিশন রুমে মহিলাদের পিস্ পিস্ শব্দ শুনা যাচ্ছে। আমি তাদের নুুন জামাই! শুনে ভেতরে ভেতরে মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। কিছুতে কিছ্ইু বুঝে উঠতে পাচ্ছিলাম না। কি হতে কি হয়ে যাচ্ছে? বাইরের আকাশ ছিল খুব চমৎকার। ভরাট জোৎস্না রাতে মেঘে ঢাকা চাঁদ; হঠাৎ উল্কা পিন্ডের মতো ঝলমলে এক চিমটি আলো বিচ্ছুরণ মনে হচ্ছে রূপসী মেয়ের পরনে নীল রঙের কাপড়ের মাঝে যেন শোভা পাচ্ছে নীল জোৎস্নার আলো! পরে খাবারের পর্বটা সেরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একটু ঠিক করে নিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে নীল রঙের কাপড় পরিহিতা মেয়েটি তার বড় ভাবীর সাথে পানের বাটা হাতে নিয়ে আমার সামনে হাজির। আমি তাদের বসতে বললাম। ভাবি আমাকে তার চোখের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করবেন নাকি? আবার ভাবী বলে উঠল থাক; আগে আপনার পরিচয়টা বলেন। তারপর আমি নিজের পরিচয় দিলাম, আমি নুরুল আমিন।
তারপর আমি মেয়েটিকে নাম জিজ্ঞেসা করার পর উত্তরে বলে উঠল আমার নাম খাইরুন্নিছা। বেশ ভারি সুন্দর নাম! যা নবাব বংশের শাহাজাদীদের নামের সাথে মিল। পড়ালেখা কি জানতে চাইলে বললেন বরমা কলেজের ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। মেয়েটির মুখ দেখে তার সম্মানার্থে ভাবীর হাতের মুঠোয় কিছু টাকা গুজে দিতে চাইলে সে আমাকে বারণ করতে লাগলো। টাকা নেওয়া আমাদের সমাজে নেই। তারপর কিছু কথাবার্তা শেষ করে তারা চলে গেলেন। তখন রাত প্রায় ১টা। রুমে একটি ইংলিশ খাট ছিল ওখানে আমার ঘুমের ব্যবস্থার জন্য সবকিছু ঘুচিয়ে দিলেন। বিছানায় শুয়ে জল্পনা কল্পনায় গড়াগড়ি করতে লাগলাম কোনমতে ঘুম আসছে না। কখন জানি সকাল হয়ে গেছে বুঝে উঠতে পারি নাই। তবুও বিছানায় শুয়ে আছি। দেওয়াল ঘড়ির টিক্টাক শব্দে ঘড়ির দিকে চাওয়াতে দেখি ভোর ৫.৪৫ মিনিট। সুর্যের কিরণ ছড়াতে শুরু করেছে। এমনি সময় জানালা দিয়ে সুর্যের আলো আমার মুখের উপর আচঁড়ে পড়ছে। বিছানা ছেড়ে জানালা খুলতে খাইরুন্নেছা সামনা-সামনি চোখাচোখি হয়ে গেছে, ও লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে চলে গেল। মনে হয় সেও রাতে আমার মতো ঘুমায়নি। এরপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে হবু শশুর শাশুরীকে সালাম করে বিদায় নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। পেছনে ফিরে দেখি খাইরুন্নেছা যতদুর চোখ যায় আমার পানে চেয়েই আছে। বাড়িতে এসে মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিনা। কারন যাকে নিয়ে আমার স্বপ্নের জাল বুনা তার নাম রোকেয়া। তার ভালবাসার স্মৃতিগুলো আমাকে খটুড়ে খটুড়ে খাচ্ছে। তাকে নিয়ে সমুদ্র বিলাস ভ্রমনে কক্সবাজার যাওয়ার দিনগুলো এখনো চোখের সামনে ভেসে আসে। কক্সবাজার ভ্রমনে দুজন এতো কাছাকাছিই ছিলাম যেন একই সুতো গাঁথা। গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময় রোকেয়া আমাদের ভালবাসার পূর্ণতা পাবে কিনা এই শঙ্কা নিয়ে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতে ছিল। কিছুতেই তাকে বুঝিয়ে উঠাতে পাচ্ছি না। তার আশঙ্কা ছিল যদি আমি তাকে বিয়ে না করি? আমি তার চোখের পানিগুলো মুছে দিতে চাইলে আমাকে আবারো জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আমাদের গাড়ীর আশেপাশে সিটের মানুষগুলো কিছুটা বিরক্তিভাব নিয়ে দেখছিল। তারপর কক্সবাজার বাসষ্টেশনে নেমে রিক্সাযোগে সমুদ্রের পাড় ইনানী বিচে চলে গেলাম। প্রিয় মানুষকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ে গিয়ে নিজের মধ্যে কেমন জানি খুশিতে উদ্বেলিু। হোটেলে গিয়ে শুটকি ভর্তা দিয়ে দুপুরের লাঞ্চটা সেরে নিলাম। তারপর বিকাল গড়াতেই সমুদ্রের পানির কাছাকাছি গিয়ে বালির মধ্যে দুজনেই বসে পড়লাম। প্রেয়সীকে নিয়ে কাঁচাবালির আলপনা আকঁতে আকঁতে দুজনের জীবনের নানান রঙ্গিন স্বপ্নের গল্প বলতে বলতে সন্ধ্যা নেমে এলো। সাগরের মাঝে ডুব দিতে যাওয়া সুর্য্যকে কৃত্রিমভাবে হাতের মুঠোয় ধরে রাখতে গিয়ে ফটোগ্রাফারের সাহায্যে ছবি ধারন করে নিলাম। স্টুডিও থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করতে রাত প্রায় ৯টা রাত্রের খাবার সময় হয়ে এলো। রাতের খাবার সেরে আবারো সাগর পাড়ে যেতে দুজনে ইচ্ছা পোষন করলাম আমাদের প্রস্ফুটিত ভালবাসা কখনো বৃথা যেতে দেবনা। পুর্ব আকাশে মেঘমালাকে ছেদ করে চাঁদের ভরাট আলোয় সাগরের পানির ঝলমল ও উচ্ছল তরঙ্গের শব্দে দুজনেরই মন খুশিতে বিমোহিত। রোকেয়া আর আমি কাঁেধ কাধ হাতে হাত রেখে নগ্ন পায়ে সমুদ্র পৃষ্ঠে হাটতে লাগলাম। মনে হচ্ছিল আমরা স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। আসলে তা নয় সবই ভালবাসার অনুভুতি এরকমই সুখ আর পরম তৃপ্তি। একটু একটু শীত, শীত আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। কারন আমরা এক নতুন দিগন্তের পথযাত্রী কèান্তিহীন এক পদভ্রজ। পর্যটকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে রাত্রে সাগরপাড়ে পসরা সাজিয়ে রেখেছে নানান রকমের শামুক দিয়ে বানানো শো-পিছ। আমার মতো শত শত যুগল স্বল্প বসনা পড়ে-ধরতে গেলে প্রায় অর্ধ নগ্ন অবস্থায় জোৎস্নাত অবকাশ যাপনে। দৃশ্যগুলো আমার ভাল লাগলেও রোকেয়া গ্রামের মেয়ে হওয়ায় সে লজ্জায় মুখ ঢেকে রাখতে চায়। তার খোপায় পরানোর জন্য শামুকের একটি ক্লিপ কিনে নিলাম। এভাবে এলোমেলো হাটতে হাটতে রাত শেষের দিকে। নির্ঘুম রাত শেষে ফজরের আজান চারিদিকে পাখির নড়াচড়া, সামুদ্রিক পাখিদের কোলাহল পানির ঢেউয়ের তোড়ে মৃত শামুকগুলো কূলে এসে জমাট হয়েছে। দু-একটা শামুক কুড়িয়ে হোটেলের দিকে রওয়ানা হলাম। হোটেল এসেই ফ্রেশ হয়ে বাড়ির অভিমুখে চলে আসার জন্য দুজনেই উন্মুখ হয়ে আছি। গাড়ীর টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে গাড়ী চেপে গন্তব্যস্থলে আসার সময় রোকেয়ার আকুতি মিনতি ছিল আমাকে তুমি কখনো অবহেলা করবে না। রোকেয়াকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমি নিজ বাড়ীতে চলে আসলাম। আসার পর সৎ মায়ের বকুনি খেতে হলো পেটে ধরিনি বলে কোথায় যাস আমাকে কিছুই বলিস না। তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপ বসে আছি। ভাবনার মধ্যে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা এলোমেলোভাবে আমাকে পীড়া দিচ্ছে। বন্ধু সাবের আমাকে যেখানে তার শশুরবাড়ীতে নিয়ে গেছিল অর্থ্যাৎ দ্বীপচরতির খাইরুন্নেছার বিয়ের উকিল আমার মতামত জানার জন্য বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো। মা-বাবা কখন মেয়ের বাড়ী-ঘর দেখতে যাবে? আমি তাকে মিথ্যে আশ্বাস না দিয়ে বলেছিলাম ওখানে রাস্তাঘাটগুলো ভালো নয় বলে সাফ জানিয়ে দিলাম। এদিকে সারাক্ষন আমার ভাবনার মধ্যে রোকেয়ার সেই মুখচ্ছবিটা বার বার ঘুরপাক খাচেছ। কখন যে তাকে বৌ সাজিয়ে নিজের আপন করে নিয়ে বাসর সাজাবো কিন্তু কিছুতেই কিছুই হলো না। রোকেয়ার বড় ভাই আদনান সামি-বিদেশ ফেরত এক পাত্রের সাথে রোকেয়ার বিয়ের কথা প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেন কারন পাত্র পক্ষ হতে কনে পক্ষকে নগদে একলক্ষ টাকা প্রদান করেছে। পাত্রের বয়স একটু বেশি তাই রোকেয়ার বড় ভাই টাকার লোভ সামলাতে না পেরে রোকেয়ার অসম্মতিতে পাত্রের হাতে তুলে দেয়। রোকেয়া এক অপূর্ব সুন্দরী আমার পূর্বের আত্বীয় হওয়ায় ছোটবেলা থেকে ওর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বেশী। আমার বাবা আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানলে হয়তো স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে এই ভয়ে কখনো মুখ ফসকে বলতে পারিনি। নিরবে রোকেয়াকে হারানোর বেদনা সহ্য করতে হয়েছে। আমার প্রতি রোকেয়ার একটা দাবি ছিল শেষ বারের মতো আমার বিয়েতে গিয়ে আমাকে বিদায় দিবেন। তাকে বিদায় দিতে গিয়ে সান্তনা সরূপ দুএকটা উপদেশ দিলাম স্বামীর প্রতি যতœ নিও আমার জন্য কোন চিন্তা করোনা। বিয়েটা হচ্ছে ভাগ্যের লিখন সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয়জুড়ে। রোকেয়াকে বিদায় দেওয়ার পর আমার একেকটি দিন অতিবাহিত হচ্ছে যেন একেকটি বছর। এভাবে দিন, মাস, বছর পার হয়ে গেলেও আমি প্রায় আনমনা, অস্বস্থি, অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। আমার এলোমেলো চলাফেরা দেখে নিকটতম শ্রদ্ধেয় চাচা বললেন, তোর চলাফেরায় দেখছি ভাবলেশহীন হয়ে যাচ্ছিস। তোর জন্য একটি মেয়ে ঠিক করে রেখেছি তোর ভাল লাগলে বিয়ে করবি না হলে করবিনা। চাচার অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমিও সম্মতি প্রদান করলাম। চাচার অনুরোধে আমার ছোট ভাইকে নিয়ে উত্তর কালিয়াইশ তার বাড়িতে গেলাম। তখন রাত আনুমানিক ৮টা। চাচা কিছুক্ষন পর ওনার বন্ধুর মেয়েটিকে নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হলেন। মেয়েটির সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে কিছু সৌজন্যমুলক আলাপ আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সাযোগে চলে আসার সময় ছোটভাইকে পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠল মেয়েটি খুবই মায়াবুী কিন্তু রং কিছুটা শ্যামলা। আমারও পছন্দ হল। তাই আমার সম্মতিক্রমে বিয়ের জন্য চাচা কথাবার্তা একপ্রকার পাকাপাকি করে ফেলেছেন। দুএকদিন পর মেয়ের বাবার আরেক বন্ধু আমার ব্যবসা ও ঘরবাড়ী দেখে বিয়েতে রাজী হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমার প্রচন্ড রাগ হলো তাই মেয়েটির প্রতি আমার আকর্ষন দ্বিগুন হয়ে গেল তাই অন্যত্র পাত্রি দেখা বন্ধ করে দিলাম। এভাবে একটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর মেয়ের বাবার কি মর্জি হলো জানিনা। আমি কর্মঠ ছেলে বলে ওনার একার সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। এর মধ্যে মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা কুরু হলো। পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার আগেই ধুমধাম করে আমাদের বিয়ের সানাই বেজে গেল। সেই আমার নববধু (ছন্দনাম) শিউলী। শিউলীর পরম ভালবাসা ও মমতার জালে আমার অতীত দুঃসহ স্মৃতিকে ¤øান করে দিয়ে আমার জীবনের নুুন অধ্যায় রচনা করল। এভাবেই শিউলীকে নিয়ে দেড়যুগ পার করে দিলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় স্বর্গের হুর আমার ঘরে এসে স্মৃতির পাতার সেই নীল জোৎস্নার আলোয় আলোকিত করে রেখেছে আমার জীবনকে।