নিষেধাজ্ঞায় ভারতেরই ‘ক্ষতি’ হবে : উপদেষ্টা

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদপণ্যসহ অন্তত সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুন যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাতে ভারতের ব্যবসায়ীরা ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের দিকে পাল্লা ভারী থাকার কথা তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বাস্তবতা তুলে ধরে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে। আমরা নিশ্চয় এই অবস্থানগুলোকে তুলে ধরবো এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবো’।শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত দু’টি দেশ আমরা। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার একটা প্রক্রিয়া। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে এটার একটা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত আনতে পারবো। আমাদের আরও কিছু বন্দর এখনও খোলা আছে’।
গত শনিবার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদপণ্যসহ অন্তত সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) নিষেধাজ্ঞার আদেশ বলেছে, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের পোশাক পণ্য ভারতে ঢুকতে পারবে না।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা (জওহরলাল নেহরু) সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, ব্লকস এবং কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্রও বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে। খবর বিডিনিউজের
আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো ‘ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন’ বা ‘ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট’ (আইসিপি) দিয়ে এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে এসব পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত তার চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিল।
এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। স্থানীয় স্থলবন্দরে বিশেষ করে আখাউড়া ও ডাউকি সীমান্তভিত্তিক কিছু সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এখন বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো’।
বাংলাদেশ থেকে যে পারিমাণ পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়; তার চেয়ে বেশি ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আসে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে ১৬ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য। পরের বছর ১৭ হাজার কোটি টাকা পণ্য রপ্তানির বিপরীতে আমদানি ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ৮২ হাজার কোটি টাকা।
স্থলবাণিজ্যে ভারতের এই নতুন বিধিনিষেধের প্রায় এক মাস আগে দেশটি থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।