নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আদালত এবং সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আদালত ও সরকার নিষিদ্ধ না করলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই।’ গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই। গত নির্বাচনের মতো বহিঃশক্তি নির্বাচন কমিশনে চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। এবার আর আগের মতো ভোট হবে না। পাঁচ আগস্টের পরে ভোটের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন বলেন, ‘বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জেল জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ভোটের অধিকারের কথা বলেছেন। এছাড়া আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা সকলের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। সুতরাং এ প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের উপর কোন চাপ নেই। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আগামীতে ৯১, ৯৬ ও ২০০১ এর মত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।’
সিইসি আরও বলেন, ‘কমিশনের কাজ করতে গিয়ে দেখেছি ভুয়া ভোটার আছে। তাছাড়া অনেক ভোটার মারা গেছেন। কিন্তু যারা মারা গেছেন তাদের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। কেউ মারা গেলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল করতে তাদের স্বজন আসেন না। এই সুযোগ নেওয়া হয়েছিল বিগত নির্বাচনগুলোতে।’ সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। নির্বাচনী প্রস্তুতির মাঠ পর্যায়ের সার্বিক কার্যক্রমও এখান থেকে শুরু হবে। খসড়া ভোটার তালিকা জানুয়ারির ২ তারিখ প্রকাশ হবে এবং মার্চে এটা ফাইনাল হবে। এটাকে আরো গ্রহণযোগ্য করতে আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনবো। তাদের কাছে পরামর্শ চাইবো কিভাবে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি দূর করা যায় এবং নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।’
ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষ হওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ভোটার রেজিস্ট্রেশন আইনে বলা আছে প্রত্যেক বছরের জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদের ভোটার করে ২ তারিখে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। মার্চের ২ তারিখে এটা ফাইনাল হয়ে যাবে এটা আইনের বিধান। আর সেটা পালন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত এ তালিকা সংশোধন করা যায়।’
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং ২০২৪ এর অভ্যুত্থানকারীদের দাবি ১৭ বছর বয়সে ভোটার করার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘কত বছর বয়সে ভোটার করা যাবে সেটি সংবিধানে লেখা আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা যদি ১৭ বছরে ভোটার করার বিধান সংবিধানে সংযোজন করে তবেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করা সম্ভব হবে।’
বিগত তিনটা নির্বাচনে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি না। এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।’
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. নোমান হোসেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।