রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিযুক্ত করা হয়েছে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সহকারী প্রকৌশলী এরশাদুল হক মÐলকে। স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোলা দুর্নীতি ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৬ ফেব্রæয়ারি আগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়াকে অব্যাহতি দিয়ে তদস্থলে সহকারী প্রকৌশলী এরশাদুল হককে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন দেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এ পদের যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হলেও এরশাদুল ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলী। তাছাড়া তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে চলতি দায়িত্বে সহকারী প্রকৌশলীর পদোন্নতি পেয়েছিলেন গত বছরের ১ ডিসেম্বর। প্রজ্ঞাপনে শর্ত ছিল ‘এ দায়িত্ব পদোন্নতি দাবি করা যাবে না। সহকারী প্রকৌশলী লিখলেও চলতি দায়িত্ব শব্দ ব্যবহার করতে হবে।’ অথচ এসব শর্ত লঙ্ঘন করে এরশাদুল হককে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি ও পদায়ন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে এরশাদের চেয়ে একাধিক জ্যৈষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়ন দেওয়া হয়েছে এরশাদকে। এক্ষেত্রে চরম অনিয়মের প্রশ্ন উঠেছে জেলা পরিষদের কর্মকান্ড।
জানা যায়, এরশাদুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি। ছিলেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি দীপংকর তালুকদারের আস্থাভাজন এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের টেন্ডার জালিয়াতি ও ভুয়া প্রকল্প প্রণয়নসহ ভুয়া বিলে অর্থ উত্তোলনের অন্যতম হোতা। এরশাদকে দিয়ে দীপংকর তালুকদার, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান-সদস্যসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হাজার কোটি টাকার টেন্ডার ও ভুয়া প্রকল্পের দুর্নীতি করিয়েছেন। এতে এরশাদও বনে গেছেন অঢেল টাকার মালিক।
জানা যায়, ২০০৯ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ৮ কোটির অধিক টাকা ব্যয়ে সেনাবাহিনীর জোনসদর দপ্তরের সামনে নির্মিত হয় শেখ মুজিবের ভাস্কর্য। এ কাজ তদারকির দায়িত্ব পেয়েছিলেন এরশাদ। এ কাজে দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয় সিংহভাগ অর্থ। যা নিয়ে ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই থেকে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের গত ১৭ বছরে এরশাদ বাস্তবায়ন করেছিলেন আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। এর আগে তিনি ছিলেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের ছত্রচ্ছায়ায় সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ।
জানা যায়, চলতি দায়িত্বের পদোন্নতির পর আবার জেলা পরিষদে সহকারী প্রকোশলী (চলতি দায়িত্ব) পদে যোগদানের জন্য আবেদন করেন এরশাদ। এ জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলীর পদ আছে দুটি। দুটিতেই লোক কর্মরত আছেন। ফলে এতে আবেদন করলে তা গৃহীত হলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হয়।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন মতে, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীর যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাছে তার চাহিদা পাঠাতে হয় জেলা পরিষদকে। কিন্তু সেই চাহিদা দেয়নি জেলা পরিষদ। এছাড়াও আইন মতে, নির্বাহী প্রকৌশলীর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হলে জ্যৈষ্ঠতা অনুসারে এতে দায়িত্ব পান সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমা।
এ বিষয়ে জ্যোতির্ময় চাকমা বলেন, এরশাদকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বটি দেওয়া হচ্ছে তা আমাকে কিছ্ইু জানানো হয়নি। এরশাদ আমার জুনিয়র। তাকে যে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয় তাও পদোন্নতি নয়। অন্যদিকে আগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়–য়াও দীর্ঘদিন আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দোসর হয়ে কাজ করেছিলেন বলেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক। কিন্তু ইতোমধ্যে তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় তার ব্যবহার করা সেল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাই তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে উল্লেখ করে এরশাদুল হক মÐল বলেন, পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিষদ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে সদস্য হাবিব আজম ও মিনহাজ মুরশীদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণ কাজের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি তদারকিতে ছিলেন বলে স্বীকার করে এরশাদ জানান, আমরা সবাই দায়িত্বে ছিলাম।
বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি থাকার বিষয়ে এরশাদ বলেন, তিন বছর আগে সভাপতি ছিলাম। এখন এ পদে আমি নেই।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, বিরল বড়ুয়া ঢাকায় যাওয়ার জন্য আবেদন করে রেখেছিলেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। এরশাদকে আমরা সাময়িক দায়িত্ব দিয়েছি। এ পদে আমরা আমাদের পছন্দমতো একজনকে আনতে চাই। তবে আমরা এলজিইডির কাছে এখনো কোনো চাহিদা দিইনি।