আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়তার সাথে এ ঘোষণা দিয়েছেন আগস্টে। এরপর নির্বাচন কমিশনও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে। ভোট কেন্দ্রের জরিপসহ সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার হালনাগাদ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের প্রায় ৯০/৯৫ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন। এরপরও দেশের রাজনীতির মাঠে থাকা দলগুলোর মধ্যে অসহিষ্ণু মনোভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জুলাই সনদ নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের আপত্তি, পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে হ্যাঁ না ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক প্রবাহে মন্দতা, মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারি ছাটাই এর ফলে বেকারত্বের ঝুঁকি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আদৌ নির্বাচন হবে! না কি নানা কৌশলে নির্বাচনকে পিছানো হবে, এনিয়ে নানা মুনির নানা কথা মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে এনসিপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ নেই-এমন কথা বলতেও শোনা যাচ্ছে। আবার নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মন্তব্য ও আন্দোলনও হতে দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন হবে কি না, এমন সব জল্পনার মধ্যে শনিবার দেশের সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রধান কার্যালয় যমুনায় সাক্ষাৎ করেন তিন বাহিনীর প্রধান যথাক্রমে-সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে তিন বাহিনীর প্রধানের যমুনায় গমনকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনেকটা সরগরম হয়ে উঠলেও সর্বশেষ নির্বাচন দেখা গেল তিন বাহিনীর এ সাক্ষাৎকারটি ছিল একান্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং জনমনে স্বস্তি ফেরানোর প্রয়াস। দৈনিক পূর্বদেশসহ সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্রে জানা যায়, তিন বাহিনীর প্রধানদের সাক্ষাতকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন নির্বাচনে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করেন। এসময় পুরো দেশ যেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে সেজন্য তিন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বজায় রাখা ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট আয়োজনের বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে তিন বাহিনীর প্রধানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকালে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন তিন বাহিনীর প্রধান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য সাধুবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত ১৫ মাসে সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীর সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছে।
আসন্ন নির্বাচন যেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে সেজন্যও তিন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৯০ হাজার সেনা, আড়াই হাজার নৌবাহিনী এবং দেড় হাজার বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি সেনা মোতায়েন থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে তিন বাহিনীর এ সাক্ষাৎ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। এ সাক্ষাৎকার একদিকে যেমন নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সন্দেহ ও সংশয় বিরাজ করছে, তা কিছুটা হলেও দুরীভূত হবে, অপরদিকে সেনাবাহিনী নিয়েও মুখরোচর নানা কথা বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অসামরিক আদালতে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিচার নিয়ে নানা গুঞ্জন যখন প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তখন তিন বাহিনীর প্রধান প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে সকল জল্পনার অবসান ঘটালেন বলে আমাদের ধারণা। আমরা আশা করি, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এতে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার সজাগ থাকবে।











