প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। ‘চট্টগ্রাম বন্দর, রাখাইনে করিডোরের নামে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখো’ শিরোনামে (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘অলরেডি আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আপনার আওতায় প্রথমে নাগরিক কমিটি তারপর জাতীয় নাগরিক পার্টি, তাদের জন্য আপনার দরজা খোলা। অন্যরা সাক্ষাতের জন্য চারদিন অপেক্ষা করে পায় না। এই নিয়ে তো আপনি বিতর্কের মধ্যে পড়ে গেছেন। মানুষের মধ্যে এখন আওয়াজ উঠেছে, ধারণা সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর স্বনামধন্য ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়ে। তার আওতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না, এই প্রশ্নও উঠেছে। তাহলে এটা একটা জাতির জন্য বিপর্যয়কর।’ নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ের একটি কমিউনিটি হলে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। খবর বিডিনিউজের
প্রধান উপদেষ্টা স¤প্রতি জাপান সফরে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। তার এই মন্দব্যের সমালোচনা করেছে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে উনি এখানে বলেন না, জাপানে গিয়ে বলেন, আল জাজিরার সাথে সাক্ষাৎকার দেন। জাপানে গিয়ে উনি বললেন, একটিমাত্র দল নির্বাচন চায়। এটা তো সত্যের অপলাপ। আমরা বলতে চাই না উনি মিথ্যা বলছেন। এটা সত্যের অপলাপ, তা এদেশের মানুষ জানে। আমরা নির্বাচনের দাবি তুলেছি। জানুয়ারির ৩ তারিখ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে আমরা দাবি তুলেছি। আমরা বলেছিলা, অতিসত্ত¡র দরকার নির্বাচিত সরকার। কেননা একটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আসবে না। ভয়ের রাজনীতি যাবে না এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও হবে না। এটা হচ্ছেও না। তারপরও উনি বলছেন, একটা দল ছাড়া কেউ ডিসেম্বরে ভোট চায় না। আরে বিএনপির বিষয় তো না। শেখ হাসিনার আমলে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। এটা ন্যাশনাল ডিমান্ড। এটা বিএনপির ডিমান্ড হবে কেন। এটা জাতীয় দায়িত্ব। উনি ওখানে গিয়ে বললেন, একটা দল ছাড়া ডিসেম্বরে কেউ নির্বাচন চায় না। উনি বলেন যে, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বর আর বেশি সংস্কার হলে জুন। কিন্তু জাপানে গিয়ে তো বলে দিয়েছেন, উনি ডিসেম্বরে নির্বাচন চান না। যেহেতু একটা দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় তাই উনি চান না।’
দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে বাইরের শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। ষড়যন্ত্রকারীরা হাত ঢোকানোর সুযোগ পাবে। সে সুযোগ আপনি দিচ্ছেন কেন তার দায় তো আপনার।’
সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা চাই অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেটা অক্টোবর বা নভেম্বরে হতে পারে কিন্তু ডিসেম্বরের বাইরে না। ডিসেম্বরের মধ্যে সেই নির্বাচন আপনাকে দিতে হবে।’
সিপিবি নেতা শাহ আলম বলেন, ‘কোনো অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক আমরা এটা চাই না। জনগণের ভোটে যাকেই আনুক একটা ডেমোক্রেটিক স্পেস মানুষ চাচ্ছে। মানুষের দম বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের দম বন্ধ যাচ্ছে। সেজন্য ডেমোক্রেটিক স্পেস খুব প্রয়োজন। বহুজন আবার হুমকি দেয়। ওখান থেকে আবার পিনাকী, অমুক সমুক, তারা ফেইসবুক করে সিপিবি অফিস ভাইঙা দিবে হুমকি দেয়, এই টোন কার। আমরা স্বৈরতন্ত্রে দেখেছি, বুলডোজার দেখিনি। এখন বুলডোজারের রাজনীতিও দেখছি।’
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হলেও দেশে গণতন্ত্র আসে নাই দাবি করে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘দেশে মবতন্ত্র চলছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। এটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। চব্বিশের গণঅভুত্থ্যানে যে তরুণরা প্রাণ দিয়েছে তাদের সাথেও এটা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।’
ঐকমত্য কমিশনে সংলাপের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সেখানে বলে আসছি, হঠাৎ করে বাংলাদেশের সংবিধান আসেনি। জুলাইয়ের পর কেন বলা হলো যে চার নীতি মানি না? ধর্মনিরেপক্ষতা, সমাজতন্ত্র এগুলো বাদ দিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ এগুলো বাদ করে দিতে চায়। পাকিস্তান আমলে কমিউনাল ন্যাশনালিজমকে কাউন্টার করে ভাষাভিত্তিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা এসেছে। এটা আকাশ থেকে আসেনি। তারা নতুন আঙ্গিকে সাতচল্লিশকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। এসব বিষয়ে দেশটাকে একটা কন্ট্রাডিকশনে ফেলে দিচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী, মোহাম্মদ মছিউদৌলা, ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।