নির্বাচন ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক সতর্কতা

37

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সর্তক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনকে ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজারদারি বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধি ও টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্মকর্তা আবু হান্নান।
তিনি বলেন,নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে কড়া নির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা টহল দিয়ে যাচ্ছেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্বাচনে ব্যবহার হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে রোহিঙ্গারা প্রার্থীদের সঙ্গে বের হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালাতে পারে। তাদের ভাড়া করে নিয়ে ভোট দেওয়ানোর একটা প্রবণতা থাকতে পারে। তাই রোহিঙ্গারা যাতে নির্বাচনের দিন ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে, সেজন্য পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সিল করে দেওয়ার কথা জানান তিনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকলেও এখন পুলিশ, র‌্যাব এমনকি বিজিবিও টহল দিচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে রোহিঙ্গা নেতাদেরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কর্মকর্তা আবু হান্নান আরও বলেন, নির্বাচনে যাতে কোনও পক্ষ রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগ থেকে কাউকেই ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, বিদেশিরা স্পর্শকাতর এই এলাকা ভ্রমণে আসলে সরকার তাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করায় বিদেশিদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা সম্ভব নয়।
নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার অভিযোগটি পুরনো, উল্লেখ করে উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, এরইমধ্যে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করতে একটি ‘গ্রুপ’ ক্যাম্পে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছে এবং এ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উখিয়ার কতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক বলেন,এরইমধ্যে নির্দেশনা পেয়েছি নির্বাচনী প্রচারণাসহ কোনও ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে যাতে কোনও রোহিঙ্গা সম্পৃক্ত না হয়, সেভাবেই ক্যাম্প সদস্যদের সর্তক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, নিবার্চনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার সুযোগ কোনও গ্রুপকেই দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজাদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরাও সর্তক অবস্থানে রয়েছি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনোভাবেই নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় ক্যাম্প সিল করে দেওয়া হবে।
র‌্যাব-৭ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কেউ যেন ফায়দা নিতে না পারে, সেজন্য ক্যাম্পগুলোতে র‌্যাবের দল টহল দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের যাতে নির্বাচনী প্রচারণাসহ কোনও কর্মকান্ডে জড়ানো না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩২ হাজার একজন। ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশে আগে থেকে অবস্থান করা রোহিঙ্গা নাগরিকসহ উখিয়া ও টেকনাফের ছোট-বড় ৩০টি ক্যাম্পে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তারা বেশিরভাগই পাহাড় ও বন কেটে বসতি গড়েছে