পূর্বদেশ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৃতীয় প্রচারণা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সময়ে এসে তিনি হাইড্রোজেন-চালিত গাড়ি বিস্ফোরণের কথা বলছেন, লাইমস্টোন থেকে স্প্রে পেইন্ট মোছার অসুবিধার কথা তুলে ধরছেন এবং ইলন মাস্কের রকেট পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। কিন্তু এসব কথা নির্বাচনের মূল বিষয়ে তার অবস্থানকে স্পষ্ট করছে না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
প্রচারকর্মীরা যদিও নর্থ ক্যারোলাইনার গুরুত্বপূর্ণ এই জনসভাকে অর্থনীতিকেন্দ্রিক বলে বর্ণনা করেছিলেন। তবে সেই বিষয়ে আলোচনা ছিল শুধু শুরুতেই। আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের আচরণ দেখলে মনে হয়, তিনি একজন রাজনীতিকের চেয়ে বিনোদন শিল্পীর মতো আচরণ করছেন, যেন বিদায়ী সফরে আছেন। যখন অধিকাংশ রাজনীতিক ভোটারদের কাছে তাদের শেষ বক্তব্য পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, ট্রাম্প তখন তার নিজস্ব আড্ডার মধ্যে ব্যস্ত। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
তার এই অগোছালো আচরণ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন বক্তৃতা কিছু ভোটারদের কাছে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। নির্বাচনের এই সময়ে, যখন প্রতিটি ভোট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তখন তার এমন বিচ্ছিন্ন কথাবার্তা ও আচরণ তার প্রচারণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং তার প্রচারণা শিবির ট্রাম্পের এসব কথা ও কর্মকান্ডকে ‘অস্থিতিশীল’ ও ‘অসংযত’ আখ্যায়িত কাজে লাগাচ্ছে। হ্যারিস এক বক্তব্যে বলেছেন, অনেক দিক থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন অগুরুত্বপূর্ণ মানুষ। কিন্তু তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরিণাম হবে অত্যন্ত গুরুতর।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প নিজের এমন আচরণের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে তিনি এসব করে সবসময় পুনরায় মূল বিষয়ে ফিরে আসেন। তার সমর্থকরা মনে করেন, তার এই স্বতঃস্ফূর্ত স্টাইলই তার আসল আকর্ষণ। প্রচারণার মুখপাত্র স্টিভেন চুং বলেন, ট্রাম্পের এই পদ্ধতি হলো গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলো শেয়ার করার একটি চমৎকার পদ্ধতি। নীতিগুলো ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে সাধারণ আমেরিকানদের হ্যারিসের ব্যর্থতার চার বছর থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক জনসভাগুলোতে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন ও অগোছালো বিষয়বস্তুর দিকে ঝোঁক দেখা গেছে। নির্বাচনের সময় ক্ষণগণনার সময়ে তার হোয়াইট হাউজের দিনগুলো, অনেক আগের খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা এবং বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের উল্লেখ করতে সময় কাটাচ্ছেন।
ট্রাম্প বর্তমানে তার প্রচারাভিযানের সময়সূচিকে দ্রুততর করে তুলেছেন। বিশেষ করে সময় যখন ফুরিয়ে আসছে। গত সপ্তাহে তিনি ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যের বিষয়গুলোতে কোনও নির্দিষ্ট বিষয় বা সীমা থাকে না। যা ইচ্ছা হচ্ছে সে কথাগুলোই বলে যাচ্ছেন তিনি।তিনি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডুলুথে এক জনসভায় বলেছিলেন, কীভাবে তিনি ফ্রান্সের সঙ্গে শ্যাম্পেইন নিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ এড়িয়েছিলেন। তার দীর্ঘ সময়ের বক্তব্যের কারণে অনেকেই জনসভা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন।
ট্রাম্প স¤প্রতি এমন ঘটনার জন্য শিরোনাম হচ্ছেন, যা তার দেশ পরিচালনার নীতিমালা বা পরিকল্পনা নিয়ে কিছুই বলছে না। জনসভায় তিনি নাচ শুরু করেন, প্রায় ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে মঞ্চে ঝাঁকাঝাঁকি করেন এবং আরনল্ড পামারের একটি অস্বাভাবিক ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলছেন। এছাড়াও তিনি ম্যাকডোনাল্ডসে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রান্না করছেন।
জনমত বিশেষজ্ঞ জন গিয়ার বলেন, ট্রাম্প মনে করেন যে তিনি যা বলেন, তা তার সমর্থকদের কাছে আবেদন সৃষ্টি করে। যদিও তা এলোমেলো হতে পারে। তবে তিনি যদি তার সমর্থন স¤প্রসারণ করতে চান, তবে এই ধরনের এলোমেলো বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করতে হবে।