নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই দোকানে ঢুকে পড়েছিল ট্রাকটি

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরে গত সোমবার রাতে দুর্ঘটনায় পতিত হয় ইটবোঝাই একটি ট্রাক। ট্রাকটি শাহ আমানত সেতু থেকে শহরে প্রবেশের সময় নিয়ন্ত্রণ (ব্রেক ফেইল) হারিয়ে দুইটি সিএনজি ট্যাক্সিকে চাপা দিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৭ জন। এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন বলে জানান বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইখতিয়ার উদ্দিন।
তবে হতাহত নিয়ে স্থানীয় ও প্রশাসনের মধ্যে ধোঁয়াশা কাজ করছে। স্থানীয় দোকানিরা বলছে নিহত ৪ জন, আবার পুলিশ-প্রশাসন বলছে নিহত একজন। যে একজন নিহত হয়েছেন, তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক।
নিহত ব্যক্তির নাম বিকাশ চৌধুরী (২৪)। আহত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন এখলাছুর রহমান (৬০), মো. নিজাম (২৩), মো. রফিক (৪০), মো. মতিয়ার (৪৫), কাঞ্চন মোল্লা (৪৫)। বাকিরা চিকিৎসাধীন হলেও তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
শাহ আমানত সেতু এলাকার দোকানি মো. ওসমান জানান, আমি ফুটপাতে ফলের ব্যবসা করি। দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত পৌনে ১১টার দিকে। গাড়িটি দ্রুত গতিতে এসে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়লে ওই স্থান থেকে আমি নিজেই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দিয়েছি। তার মধ্যে একজনের পেট ফেটে নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে, দ্বিতীয় জন মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তৃতীয় জন দুইটি গাড়ির মধ্যবর্তী চাপে ছিলেন। তিনজনই ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়া আমি ৫ জন আহতকে গাড়ি করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
একইভাবে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে চায়ের দোকানি মো. ইরফান নামে আরেকজন বলেন, আমি সবেমাত্র দোকান বন্ধ করছিলাম, ওই সময়ে দ্রুত বেগে ট্রাকটি এসে মদিনা হোটেলের পাশ ঘেঁষে একটি দোকানের ভেতর ঢুকে পড়ে। অল্পের জন্য আমার দোকান রক্ষা পায়। তাৎক্ষণিক আমি তিনজনের মরদেহ দেখতে পাই। ৫-৭ জনকে আহত অবস্থায় নিয়ে যেতে দেখেছি। এরপর এসেছে স্থানীয় থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বাকলিয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) অপূর্ব পাল পূর্বদেশকে বলেন, রাত ১০টার পর আমাদের (ট্রাফিকের) ডিউটি শেষ হয়ে যায়। আমাদের সার্জেন্টরাও ডিউটি শেষ করে চলে যান। পরে রেকার চালকের মাধ্যমে জানতে পারি, ব্রেক ফেইল করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে ইটবোঝাই ট্রাকটি। সাথে ট্রাকচাপায় দুইটি সিএনজি ট্যাক্সি ও একটি মোটরসাইকেলও ছিল। যখন দুর্ঘটনার খবর পাই, এর কিছুক্ষণ পর আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। এরপর ট্রাক এবং সিএনজি ট্যাক্সিগুলো রেকার দিয়ে বের করে বাকলিয়া থানায় পাঠানো হয়েছে। সেগুলো সেখানে জব্দ আছে।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে আসা বহদ্দারহটমুখি ইটবোঝাই ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুতগতিতে সড়কের পাশে থাকা একটি হোটেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় সড়কের পাশে থাকা কয়েকজন ফল বিক্রেতা ও হকার ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন। ঘটনাস্থলে নিহত হন বিকাশ চৌধুরী নামের এক যুবক। তিনি দুর্ঘটনার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। এছাড়া আহত ১৭ জনকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এবং স্থানীয়রা মিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।
এরপর রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাক চালককে মুমূর্ষু অবস্থায় মেডিক্যালে আনা হলেও উনাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি করা হচ্ছে। তবে ট্রাক চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
ওই সময়ে দায়িত্বরত এক কনস্টেবল জানান, আমরা একজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আর ৮ জন আহতকে পেয়েছি। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক রয়েছে।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে প্রত্যক্ষদর্শী মো. রাকিব হোসেন বলেন, এখানে আমি চারটা মরদেহ আসতে দেখেছি। কিন্তু ময়নাতদন্তসহ নানা প্রক্রিয়া করবে করবে শুনে নিহতের স্বজনরা তিনটি মরদেহ হাসপাতালের ভেতরে না নিয়ে বের করে নিয়ে যায়। তাই তিনজনের মরদেহ ভেতরে না নেওয়ায় পুলিশ তা লিপিবদ্ধ করতে পারেনি। ফলে অফিসিয়ালি তারা একজনের নাম বলছে। এখানে পুলিশেরও কোন দোষ নেই।
বাকলিয়া থানার ওসি মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সরিয়ে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতের বোন পিংকি চৌধুরী বাদি হয়ে একটি মামলা রুজু করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।