নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

2

আর ৬দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এরমধ্যে কোরবানির পশুর হাটে গরুসহ নানা জাতের পশু আসা শুরু হয়েছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার ২২৮টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। ২২৮টি হাটের মধ্যে ৭৫টি স্থায়ী এবং ১৫৩টি অস্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে নগরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় ১৩টি হাট রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে আট লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। বিপরীতে চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা রয়েছে আট লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি রয়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি কোরবানির পশু। এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় উৎপাদন কম হলেও এবার কোরবানির পশুর সংকট হবে না। কারণ ব্যাপারীরা চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাটগুলোয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে পার্বত্য জেলাগুলো থেকেও গরু আসে। চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোরবানির পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যা বেশি। এবার মোট উৎপাদিত কোরবানি পশুর মধ্যে গরু রয়েছে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এছাড়া ৬৪ হাজার ১৬৩টি মহিষ, দুই লাখ ৫১ হাজার ৭৪টি ছাগল এবং ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া রয়েছে। নগরে পশুর হাট বসে চসিকের ব্যবস্থাপনায়। সংস্থাটি এবার ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ দেয়। এর সঙ্গে আছে তিনটি স্থায়ী হাট। অর্থাৎ নগরে ১৩টি স্থায়ী-অস্থায়ী হাট বসছে এবার। স্থায়ী হাটগুলো হচ্ছেÑসাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছেÑ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূরনগর হাউজিং এস্টেট) , ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদপাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ। এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাড়া-মহল্লায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গরুর বাজার গড়ে তুলেছে নিজস্ব আঙ্গিকে। যার কোন হিসাব সিটি কর্পোরেশনের আছে বলে মনে হয় না। এ ছোট্ট ছোট্ট বাজারগুলো অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য সুবিধার হলেও পরিবেশ ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন ও এলাকাবাসী। বিশেষ করে যারা লাখ টাকায় হাটের ইজারা নেন, তাদের জন্য এসব গরুর বাজার ক্ষতির কারণ হয়ে উঠে। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের নজরদারী প্রয়োজন। কারণ সিটি কর্পোরেশনের যে গ্রিন ক্লিন হেলদি সিটির কর্মসূচি এসব বাজার তার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
আমরা জানি, এক সময় ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর জন্য ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা অনেকটাই কমে গেছে। প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কোরবানির পশু নিয়ে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছিল। মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকার এবং খামারিরা উপলব্ধি করেন যে দেশের ভেতরেই গবাদিপশুর সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেই তখন থেকেই প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের প্রচেষ্টা ও খামারি এবং গবেষকদের অবদানের জন্যই আজ বাংলাদেশে কোরবানির পশুর জন্য পরনির্ভরশীলতা কমে এসেছে, এমনকি কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকার খবরও রয়েছে। তবে এখন পশু উদ্বৃত্ত থাকলেও ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে ভেজাল (অর্গানিক নয়) পশু নিয়ে। কোরবানিযোগ্য পর্যাপ্ত পশু থাকলেও একশ্রেণির অসাধু, অতিমুনাফালোভী কারবারি নানাভাবে পশুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে। এতে ভোক্তাপর্যায়ের সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হন। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গভীর নজরদারী প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও সিটি কপেূারেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে সড়কের ওপর যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি অফাল (নাড়ি ভুঁড়িসহ অন্যান্য বর্জ্য) যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পশুর চামড়া উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ ও বেচাবিক্রি করার জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আমরা মনেকরি, সরকারের উদ্যোগ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো আন্তরিক হলে কোরবানি পশুর বাজার ও কোরবানির দিনের পশু জবাইয়েয়র পর পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব। পবিত্র কোরবানি উপলক্ষে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভেজালমুক্ত কোরবানির পশু ও বিড়ম্বনাহীন পশুরহাট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীর ভূমিকা পালন করবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।