‘শীত মানে- আমন ধানের শিশির ভেজা সকাল, পিঠাপুলির সুগন্ধিতে পালিয়ে যাবে অকাল।’ আজ সেই শীতের ভরা মৌসুমে আমন ধানের চাল যেন নাকাল হয়েছে মানুষের। ধানের বাম্পার ফলনের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেও বাজারে এর প্রভাব একেবারেই উল্টো। ফলে পিঠাপুলি তো নয়ই চাল কিনে ভাত খাওয়াও দায় হয়ে পড়েছে। অথচ মানুষ আশা করেছিল, আমনের এ ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম কমবে, সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাজারে অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় সহযোগি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। অথচ কৃষকরা নতুন ফসল ঘরে তুলছেন। সরকারের মজুদঘরে পর্যাপ্ত চাল স্টক রয়েছে, চালের বাজারে বস্তার পর বস্তা চাল সাজিয়ে রাখা হয়েছে, মিলের চাকাও ঘুরছে। এরপরও এখন কেন চালের দাম বাড়ছে সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তা সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। শীতের মৌসুমে বাজারে শাক-সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এখন মোটামুটি সবজির দাম কমে এসেছে। কিন্তু আলুর দাম এখন ৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। টমেটোর দামও বাড়তি। তবে মুরগির দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিটি মুরগি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে, যা বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আগের সরকারের ন্যায় সিন্ডিকেটকে দায়ি করে মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অনেকে মিল মালিকদের দোষছেন। অনেকেই মনে করছেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বাজারের অস্থিতিশীলতা, সরবরাহ কম এবং বাড়তি চাহিদা থাকতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের বাজারের দাম বৃদ্ধি ও মিল মালিকদের ওপর চাপের কারণে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে। কারা মিল মারিকদেও উপর চাপ সৃষ্টি করছেন, কেনই বা করছেন তা তদারকি করা প্রয়োজন। এছাড়া কৃষকরা সারা বছর অর্থ ও শ্রম দিয়ে ধান চাষ করবে, ফলনের পর তারা কাক্সিক্ষত বাজার দর পাবে না, তা হয় না। সূত্র জানায়, কৃষকের কাছ থেকে মিল পর্যন্ত ধান আসতে কয়েকহাত বদল হয়, এর ফলে ধানের দাম বেড়ে যায়, যা চালের উপর প্রভাব ফেলে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে চালের বাজার অস্থির হচ্ছে। সেই সাথে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মতো রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিৎ এক্ষেত্রে তাদের নজরদারি জোরদার করা। এছাড়া বাজারের অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে যারা দায়ি তাদের আইনের আওতায় আনা। আমরা মনে করি, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলে সরকারের উপর জনগণের আস্থা বাড়বে। একই সাথে তেলসহ অন্যান্য গ্রোসারি বাজারও তুলনামূলক অনেক বেশি। এছাড়া শীতকালীন পণ্যের দাম এখনো সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তিকর।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত, বাজার ব্যবস্থাপনায় দ্রুত হস্তক্ষেপ করা এবং সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরীভাবে চালু করা, যাতে দাম বৃদ্ধির এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে আসে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা, বিশেষ করে সার ও সেচের ক্ষেত্রে খরচ কমানো জরুরি, যাতে তারা সঠিক মূল্য পায় এবং বাজারে দাম অস্থিতিশীল না থাকে। এছাড়া, ভোক্তাদের প্রতি সচেতনতা বাড়ানোরও সময় এসেছে। যদি দাম বেড়ে যায়, তাহলে কি করে সাশ্রয়ীভাবে পণ্য কিনে তাদের জীবনযাত্রা সহজ করা যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চাল ও মুরগির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্যান্য পণ্যের দামও যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চাপিয়ে দিচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবে একটি বড় সমস্যা। সরকারের উচিত দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, যাতে মানুষের জীবনযাত্রায় আর কোনো চাপ না পড়ে। সরকার এখন দেশ সংস্কারে ব্যস্ত, কিন্তু জনজীবনে স্বস্তি না ফিরলে সরকারের সব ভালো অর্জন অসার হয়ে পড়বে। সরকার বাহাদুর এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নেবে-এমনটি প্রত্যাশা ভোক্তা সাধারণের।