নিম্নমানের রড সিমেন্ট বালু পাথর ব্যবহারের অভিযোগ

1

ইকবাল ফারুক, চকরিয়া

কক্সবাজরের চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পৌর সদরের বিদ্যমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুই পাশে পাঁচ ফুট করে উভয়দিকে ১০ ফুট প্রশস্তকরণের কাজ গত মে মাসের শেষের দিকে শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পৌরশহরের জনতা মার্কেট থেকে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত মাত্র ৯০০ মিটারের এ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের বিপরীতে এতো বিশাল অংকের বাজেটকে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ের লুটপাটের প্রকল্প হিসেবেই চিহ্নত করা হচ্ছে সচেতন মহলের পক্ষে। তারা এ প্রকল্প ব্যয়কে পুনঃনিরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও কামনা করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক বিপুল অংকের বিপরীতে এ কাজটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়। রাতের আঁধারে যেনতেনভাবে ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে সড়কটির দুই পাশে প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি দেয়াল নির্মাণের কাজ। নিম্নমানের পুরনো রড, সিমেন্ট, মাতামুহুরী নদীর মাটি মিশ্রিত বালু ও স্থানীয় পাথর ব্যবহার করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা দেয়ালের। রিকশা, টমটমের মত ছোট গাড়ির ছোঁয়া লাগলেই ভেঙে যাচ্ছে সেই দেয়াল। এতে কাজের স্থায়ীত্ব নিয়ে জনমনে উঠেছে প্রশ্ন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজার কর্তৃক এ কাজের বিপরীতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয় চট্টগ্রামের পটিয়ার নিপা এন্টারপ্রাইজকে। কক্সবাজারের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরীর বাড়িও পটিয়ায়। সেই সুবাদে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ পাওয়া নিপা এন্টারপ্রাইজ কাজটি বাস্তবায়নে সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেন চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাজীর পাড়ার বাসিন্দা মেসার্স এ জে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন নামে অপর ঠিকাদারকে। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী, চকরিয়ার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাহাত আলম এবং ঠিকাদারের কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের যোগসাজশে সাব ঠিকাদার সাহাব উদ্দিন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাতের আঁধারে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। যেখানে সওজ’র কোন কর্মকর্তার তদারকি নেই বললেই চলে।
সড়ক সম্প্রসারণ কাজের ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চকরিয়ার সহসভাপতি জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, চকরিয়া পৌর শহরের চিরিঙ্গা মহাসড়কে যানজট নিরসনের দোহাই দিয়ে মূলত লুটপাটের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগেই। সামান্য এ কাজের জন্য যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। সরকারের এত টাকা ব্যয়ের পরও কেন নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কটির দুই পাশে ইতোমধ্যে রাতের আঁধারে ঢালাই দেওয়া প্রতিরক্ষা দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে মরিচা ধরা পুরনো রড, মাতামুহুরী নদীর মাটি মিশ্রিত বালু, স্থানীয় পাথর ও নিম্নমানের সিমেন্ট। এতে কাজের স্থায়ীত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি নির্মিত প্রতিরক্ষা দেয়ালে সামান্য আঘাত লাগলেই খসে পড়ছে ঢালাই। এ কাজ টেকসই করতে হলে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সিলেটি পাথর-বালুসহ উন্নতমানের উপকরণ দিয়ে নতুন করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করতে হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সড়ক সম্প্রসারণ কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) সাইফুল ইসলাম বলেন, সাব ঠিকাদার হিসেবে ভালোভাবে কাজ বাস্তবায়ন করছেন এ জে ট্রেডার্সের মালিক সাহাব উদ্দিন।
রাতের আঁধারে ঠিকাদারের কাজ চালানোসহ সার্বক্ষণিক কাজের তদারকি না করার বিষয়ে তিনি বলেন, চকরিয়া পৌর সদরের চিরিঙ্গা বেশ ব্যস্ত একটি শহর। এখানে দিনে কাজ করার সুযোগ খুব একটা থাকে না। জনভোগান্তি এড়িয়ে কাজ ঠিকভাবে এগিয়ে নিতেই রাতে কাজ করা হচ্ছে।
অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. রাহাত আলমের কাছে কাজের পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হলে তিনি বলেন, তথ্য নিতে হলে আবেদন করতে হবে। এছাড়া কোন তথ্য দেওয়া যাবে না।
নিম্নমানের পুরনো রড, মাতামুহুরী নদীর মাটি মিশ্রিত বালু ও স্থানীয় পাথর ব্যবহার করে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষুব্ধ হন প্রকৌশলী রাহাত আলম। তার ভাষ্য, যেসব সামগ্রী দিয়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব উপকরণ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। অতএব এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, চকরিয়া পৌর শহরের যানজট নিরসনে এ প্রকল্পটির কাজ যাতে টেকসইভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি প্রমাণ হয়, তাহলে প্রতিরক্ষা দেয়াল নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হবে।