নিত্য যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ

11

মনিরুল ইসলাম মুন্না

প্রতি শুক্রবার, শনিবার বা ছুটির দিন আসলেই শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্ত, টানেলের চত্বর এবং সি বিচ এলাকায় যানজটের ফলে দুর্ভোগের যেন সীমা নেই। যানজট এড়ানো এবং সময় বাঁচাতে এতকিছু নির্মাণ করার পরও যেন ‘যেই লাউ সে কদু’ রয়ে গেল। এমন অভিযোগ যাত্রী, চালক, পর্যটকসহ সকলের। গত শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন সি বিচ এলাকায় গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে ভিন্ন কথা। যানজট এড়াতে নেওয়া হয়েছে নতুন আরও একটি প্রকল্প। যেটার নাম দেওয়া হয়েছে ইন্টারসেকশন প্রকল্প। যা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোড এবং কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের মিলিত স্থল হিসেবে কাজ করবে। যার মাধ্যমে কোন যাত্রীবাহী পরিবহনকে অপেক্ষা না করে এবং ক্রসিং এড়িয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারবে।
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, “কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল নির্মাণ প্রকল্প”, “চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প” এবং “চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ” প্রকল্পের মিলিত স্থলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের নির্দেশক্রমে কনস্ট্রাকশন অব টানেল ইন্টারসেকশন ব্যয় খাত অন্তর্ভ‚ক্ত করে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৬ জুন একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সেটির প্রেক্ষিতে বর্তমানে ইন্টারসেকশন প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক এবং সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস।
তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে আমরা এ প্রকল্পটি শুরু করেছি। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে চলে যাচ্ছে ২৪০ কোটি টাকা, আর বাকি ৩৪০ কোটি টাকা হচ্ছে কাজের ব্যয়। এটা বাস্তবায়ন হলে কোন যানবাহনকে আর দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। যে যার মত চলে যেতে পারবে। এ প্রকল্পে এয়ারপোর্ট থেকে রিং রোড পর্যন্ত ৮৫০ মিটারের একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। যাতে সরাসরি ঢাকাগামী যাত্রীরা চলে যেতে পারে আর নগরের দিকে আসা যাত্রীরা সরাসরি চলে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের ফলে সময় যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি কোন যানজট তৈরি হবে না। ঠিক তেমনই আমরা আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি। সেটি হচ্ছে ইপিজেডের সাথে আউটার রিং রোড কানেকটিং সড়ক। যেটার মাধ্যমে পণ্যবাহী যান দুই-তিন ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে পারছে। এতে ওইসব যানবাহনের জ¦ালানিও সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা চাই, নগরবাসীকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে।
এদিকে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল বুথের কারণেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে ছুটির দিন যখন যানবাহনের চাপ থাকে, তখন দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। অনেক যাত্রী যানজটের ফলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
পতেঙ্গায় ঘুরতে যাওয়া যাত্রী মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সময় বাঁচাতে মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে। কিন্তু এতেও যদি যানজটে পড়তে হয়, তাহলে এটা নির্মাণের সুফল কই? টোলের কারণে যদি যানজট হয়, তাহলে টোলগুলো সরিয়ে অন্য জায়গায় স্থাপন করা উচিত।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি এস.এম. আবু তৈয়ব পূর্বদেশকে বলেন, ‘সময় বাঁচানো এবং যানজট নিরসনের জন্য মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে, কিন্তু পতেঙ্গা গিয়ে যদি টোল দেয়া-নেয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে সুফল আসলো কোথায় ? আমরা ঈদের আগে দেখেছি, কর্ণফুলী সেতুর টোলের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এতে অনেকে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। সেটা যাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে না হয় সেটা মাথায় রেখে যেনো সংশ্লিষ্টরা কাজ করেন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, টোলের যানজটের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমরা টোল বুথগুলো সিইপিজেড বরাবর এক্সপ্রেসওয়েতে বসানো হবে। এতে আশা করি, এ সমস্যাটি থাকবে না।
সিএমপি’র ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কবীর আহম্মেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্মাণের ফলে পতেঙ্গা এলাকায় যানজট হওয়ার বিষয়টি সিডিএ’কে অবগত করেছি। তারা এ নিয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন। এরপরও আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা নিয়মিত যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন।’