নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করুন

0

এম. কামরুল হাসান চৌধুরী

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। পবিত্র রমজান মাসের আগমনে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের নাগরিকদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর রাষ্ট্রীয় ভাবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এসব দেশের ব্যবসায়ীরাও এই মাসে প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য ও পণ্যে সামগ্রীর দাম কমিয়ে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা সহজ করে দেয়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু আমাদের বাংলাদেশ। রমজান উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের আপামর জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার উপর রাষ্ট্রীয় ভাবে মূল্য হ্রাস কিংবা ভর্তুকি প্রদানের বিশেষ কোন ব্যবস্থাপনা নেই বললে চলে। বরং ব্যবসায়ীরা রমজান মাসে ক্রেতাদের বিশেষ প্রয়োজনীয় চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের ওপর রীতিমতো দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে থাকে। যাতে রোজাদারদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। যদিও বরাবরের মতো এই বছরও সরকারের পক্ষ থেকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমদানি নির্ভর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পণ্যসামগ্রীর বাণিজ্যিক শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে কিন্তু বাজারে তার বিন্দু মাত্র প্রভাব পড়েনি। বিশেষ করে সয়াবিন তেল, খেজুর, চনাবুট, মশর ডাল, পিয়াজ, গুঁড়ো দুধ ও চিনির ক্ষেত্রে বাজারে নিত্য নৈমিত্তিক দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বল বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাপনা।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। সরকার আসে, সরকার যায়। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হতে দেখা যায়না। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস থেকে এমন ধারণা মানুষের মনে বারবার বদ্ধমূল হয়েছে। বিগত রাজনৈতিক সরকারের আমলে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলে সরকারি দলের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, কালো বাজারি কিংবা সীমাহীন চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গত ০৫ আগস্ট ‘২৪ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ব্যপক সমালোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর উপর ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়েছে আমজনতা। অতীতে এনিয়ে আমি নিজেও সংবাদ মাধ্যমে লিখেছি বারবার। কিন্তু এখন দেশে তো চলছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামল। এখন তো আর আগের কোন সিন্ডিকেট বাণিজ্য, দলীয় চাঁদাবাজি কিংবা কোন দুর্নীতির কারসাজি থাকার কথা নয়। কিন্তু তারপরও কেন গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলেও নিত্যপণ্য দ্রব্যসামগ্রীর দাম বারবার বৃদ্ধি পাচ্ছে ? এনিয়ে দেশের জনগণের মনে বরাবরই প্রশ্ন থেকেই যায়! তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হলো কোথায় !
পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্য সামগ্রীর এক ধরনের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন দেশের আপামর জনসাধারণ। বিশেষ করে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে বিগত প্রায় প্রায় ৬ মাসের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্যের বারবার অস্বাভাবিক ঊর্ধ্ব গতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে ! যার মধ্যে এমন কোন কিছুই বাদ যায়নি মূল্য বৃদ্ধি হয়নি। সাধারণত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বলতে চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, রসুন, আটা, চিনি, লবণ চাপাতা, দুধ, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, মসল্লা, এলপি গ্যাস ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব দ্রব্যসামগ্রীর দাম। পাশাপাশি কাঁচা বাজারের মধ্যে মাছ, মাংস, মুরগী ও ডিমের কথা তো বলাই মুশকিল হয়ে পড়ে। যদিও মৌসুমি সবজির যথেষ্ট উৎপাদন ও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় কিছুটা হলেও ক্রেতা সাধারণ উপকৃত হচ্ছে। সবজি বাদে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই জনসাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
স¤প্রতি ভোজ্য সয়াবিন তেল ও এলপি গ্যাসের আবারও দাম বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন জনগণ। বলতে গেলে বাজারে সয়াবিন তেল খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে লিটার প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের এক লিটারের দাম ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ক্রেতা সাধারণের মাঝে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে, শ্রমজীবী নিম্ন শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সৎ উপার্জনের মানুষেরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। প্রকৃত পক্ষে দেশের জনসাধারণের কাছে বাজার ক্রয় মূল্যে বারবার ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অপ্রিয় সত্য যে, বাজারে লাগামহীন দাম বৃদ্ধির কারণে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশব্যাপী ব্যপক উন্নয়ন সংস্কার কার্যক্রমের সাফল্য ম্লান হতে চলেছে!
অপরদিকে পবিত্র রমজান মাস চলছে। এরমধ্যে এমন অস্থির বাজার দরে সাধারণ জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে ! এভাবে চলতে থাকলে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দিনদিন জনগণের আস্থার সংকট বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারের বানিজ্য উপদেষ্টা মহোদয়কে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ক্রয়ক্ষমতা জনসাধারণের নাগালে আনার মানবিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে অস্থির বাজার দর দ্রæত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংগঠক