নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আবারও অস্থিতিশীল। বাজার স্থিতিশীল করার উদ্যোগে নানা প্রতিবন্ধকতায় গেঁড়াকলে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হতে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠন, গুদামজাতকারী সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক পরিচয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যসহ সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। জনগণ কোন প্রতিকার পায়নি। অকারণে চাল , ডাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজসহ নিত্য পণ্যের বাজারে দীর্ঘদিন হতে চলছে তুঘলকি কান্ড। সাধারণ মানুষ আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে না পেরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। অবশেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। দীর্ঘ আটমাস যাবৎ একটি কুচক্রিমহল নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হতে দেয়নি। নানা প্রতিক‚লতার মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার চেষ্টা করে আসছে। অবশেষে এবছর রমজানে দ্রব্যমূল্য কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি। তারপরও অসাধু ব্যবসায়ী এবং গুদামজাতকারীদের দৌরাত্ম্য নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু সরকার নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা গত রমজান মাসে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনকে দেখেছি নগরীর প্রধান পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজুদ্দিন বাজারে অভিযান চালিয়ে অনেক দোকানিকে জরিমানা করতে ।
জানা গেছে, ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় মূল্য তালিকা হালনাগাদ না থাকা ও পণ্যের মোড়কে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না করায় দোকানগুলোকে জরিমানা করা হয়। রমজান মাসে গঠিত বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্স’র অভিযানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান মাহমুদ ডালিম এ জরিমানা আদায় করেন। ওই সময় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করেন।
একই সময়ে রিয়াজুদ্দিন বাজারে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মূল্য তালিকা না থাকা ও বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযান পরিচালনাকালে মুদির দোকান, তরকারি, ফল, ডিম ও মাংসের দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা ও পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার অভিযোগে ৪টি মামলায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়ের দোকানসমূহে বিশেষভাবে নজরদারি করা হয় এবং মজুদদারির বিষয়ে সকল বিক্রেতাকে সতর্ক করা হয়।
অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সয়াবিন তেল নিয়ে তৈলবাজি শুরু করে অসাধু গুদামজাতকারীরা।
নগরীর পাহাড়তলী বাজারে অভিযানে চালিয়ে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ও চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের যৌথ তদারকিমূলক অভিযানে এ জরিমানা করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ। অভিযানে মেসার্স ইকরাই স্টোরে ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি না করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে গুদামে মজুত রাখার প্রমাণ মিলে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনহীন ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং খাবারের রং হিসেবে বিক্রি করছিল। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই ধরনের অপরাধে কায়সার অ্যান্ড ব্রাদার্সকে ৩০ হাজার টাকা এবং মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে মেসার্স জাহাঙ্গীর স্টোরকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মেসার্স ইকরা অ্যান্ড ব্রাদার্সকে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, অভিযানে মোট চারটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করা হয়। অভিযানে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও দোকানিদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসময় অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান, রানা দেবনাথ ও মাহমুদা আক্তার।
মোদ্দা কথা হলো প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখলে দ্রব্যমূল্যের বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এমন ধারণা সাধারণ মানুষের । সততা ,নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখে বাজারের পুরানো ভূত তাড়িয়ে বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতেই হবে।