নিত্যপণ্যের বাজার মূল্য আবারও বেড়ে গেছে। গত জুলাই এর মাঝামাঝি থেকে শুরু করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, সহিংসতা, নাশকতা ও কারফিউর কারণে সর্ব সাধারণের ব্যবহার্য নিত্যপণ্যসহ সকল প্রকার খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত তিনদিনের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সংঘাত ও সহিংসতার অজুহাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসমূহের, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিশেষ পরিস্থিতিতে কারফিউ ঘোষণার পরপরই বিক্রেতাদের অতিরিক্ত দাম নিতে দেখা গেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেও দেখা যায়, এমন পরিস্থিতিতে বাজারে ক্রেতা কম থাকলেও দুইদিন আগের তুলনায় অনেক পণ্যের দামই বেড়েছে। বড়কথা হচ্ছে, গতকাল থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হতে চলছে, কিন্তু কারফিউর সময় যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তা কমানোর কোন ইতিবাচক লক্ষন নেই। বরং শাকসবজি বিক্রেতারা বর্ষা মৌসুমের দোহাই দিয়ে পণ্যের বাড়তি মূল্য নিচ্ছেন।
বাজারে দেখা যাচ্ছে, চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা, সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা এবং মাছের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। মফস্বল এলাকার পাড়া-মহল্লার দোকান ও ফেরিওয়ালাগুলোতে দাম বৃদ্ধির পরিমাণ আরো বেশি। এক ডজন ডিমের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা গেছে। আলু-পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণে কারফিউ চলাকালীন এমন কি অসহযোগ চলাকালীনও খাদ্য পণ্য কিংবা নিত্যপণ্যের গাড়ি চলাচলে কোন বিঘœ সৃষ্টি হয়নি। বরং সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব গাড়ি চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছিলেন। এরপরও মুদির বাজার, খাদ্যসামগ্রি, শাকসবজি, মাছ-মাংস ও ডিমের দাম বাড়ানোর পেছনে অতি মোনাফা ছাড়া কিছুই নয়। এটি শুধুই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু বাড়তি লাভ করার মানসিকতা। অতীতেও এসব ব্যবসায়ীদের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠত। এ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ীর অন্যায় আকাক্সক্ষা শুধু বাড়তেই থাকবে। আর এ জন্য তাদের অজুহাতেরও কোনো অভাব হবে না। সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফরতার প্রেক্ষাপটে জনগণ প্রত্যাশা রাখে বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ নজর দিবেন।
আমরা লক্ষ করে আসছি, আন্দোলনকালে বা কারফিউ চলাকালে চালের মোকামে কোন দাম বাড়েনি। বড় আড়ত ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, আন্দোলন ও অস্থিরতার সময় দিনে পণ্য পরিবহন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও রাতে পরিবহন স্বাভাবিক ছিল। আর এসব পণ্য সাধারণত রাতেই পরিবহন করা হয়। সুতরাং দাম বৃদ্ধি করার কোন কারণ থাকতে পারে না। অন্যদিকে দেখা যাবে, অধিকাংশ ব্যবসায়ীর দোকানে দুই-তিন দিনের মধ্যে কোনো চালই ওঠানো হয়নি। তারা আগেই আগের দামে চাল কিনেছে। তাহলে কেন কেজিপ্রতি দুই-তিন টাকা করে বেশি নেবে? যে সবজি বা মাছ আগে কেনা, তা কেন কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে যাবে? এটি নিতান্তই অন্যায়। বাজারের এই প্রবণতা নতুন নয়; অবশ্যই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বাভাবিক সময়ের মূল্যস্ফীতির কারণেই ভোক্তাদের নাজেহাল অবস্থা। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা যেন আরো খারাপ পর্যায়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের আকাক্সক্ষা যেন ধুলোয় লুটিয়ে না পড়ে সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অন্যায় মুনাফা কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডেকেট তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।